নবম শ্রেণি থেকে অনৈতিক কাজে হাতে খড়ি, রাতারাতি ধনী হতে ‘পীর ব্যবসা’

ধর্মের টোপে হাজার হাজার মুরিদ বানিয়ে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন কথিত পীর মোতালেব। সরকারি চাকরি কিংবা স্থানীয় নির্বাচনে সরকারি দলের মনোনয়ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে তিনি টাকা হাতিয়ে নিতেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, নবম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে অনৈতিক কাজে হাতে ঘড়ি মোতালেবের। এরপর সে ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে অনৈতিক কাজ ও প্রতারণা শুরু করেন। রাতারাতি ধনী হতেই তিনি ‘পীর ব্যবসা’ বেছে নেন। জানা গেছে, ওই কথিত পীর নিজেই সমকামী ক্লাবের সভাপতি।

রাজধানীর তুরাগ থেকে এমনই এক ভণ্ড পীরকে গ্রেফতারের পর রিমান্ডে নিয়ে এমন সব তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্টার জানায়, মোতালেবের গুরু ছিলেন একজন গৃহশিক্ষক। তার হয়ে অনেকের সঙ্গে প্রতারণা করেন মোতালেব। অর্থের লোভ বেড়ে যাওয়ায় ভারতের একজন পীরকে অনুসরণ করতে শুরু করেন। এক সময় নিজেই বনে যান ভণ্ড পীর। পাশাপাশি সরকারদলীয় ‘আওয়ামী নির্মাণ শ্রমিক লীগ’ সহ-সভাপতি ও ইউনিয়ন শ্রমিক লীগের সভাপতি হিসেবে যোগ দেন। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী চাকরি দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছেন এক কোটি ২৭ লাখ টাকার ওপরে। এছাড়া মুরিদদের কাছ থেকে চাঁদা হিসেবে তুলেছেন কয়েক কোটি টাকা। এসব অর্থে তিনি চড়তেন দামি গাড়িতে, রয়েছে বাড়ি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ‘ঢাকা গে কমিউনিটি’র দু’টি ওয়েব পেজের মাধ্যমে সহস্রাধিক সদস্যের সঙ্গে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে অনলাইনে অনৈতিক কাজ করতেন কথিত পীর মোতালেব। টার্গেট করে গার্মেন্টশ্রমিক, কলকারখানার শ্রমিক ও বিভিন্ন হোটেল বয়ের সঙ্গে মেসেঞ্জারের মাধ্যমে যোগাযোগ করে অর্থের মাধ্যমে তিনি দুই একদিন পরপরই সমকামিতা করতেন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়,  আবদুল মোতালেব চিশতি ১৫-১৬ বছর বয়সে এক গৃহশিক্ষকের মাধ্যমে অনৈতিক কাজ শুরু করেন। ওই সময় তিনি নবম শ্রেণিতে পড়তেন। এর পর থেকেই তিনি একের পর এক ছেলে বন্ধুদের সঙ্গে সমকামিতায় লিপ্ত হন।

সমকামিতায় লিপ্ত এই ভণ্ড পীর জীবনের শুরুতেই ফাঁদ পেতে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিলেন।

যেভাবে পীর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন

মোতালেব ২০০৮ সালে ভারতের রাজস্থান মেদেনিপুরের লতিফ চিশতির মুরিদ হন। তিনি সিলেটের বিশ্বনাথ ইলিমপুরে গাউসুল আজম দরবার শরিফে প্রতি বছর ওরসে যেতেন। লতিফ চিশতি মারা যাওয়ার পর তার ছেলে ইরফান চিশতি সেই দরবারের দায়িত্ব পালন করেন।

মোতালেব দেখেন, ভক্তরা পীরদের অনেক সম্মান করেন। চাঁদা দেন। আবার সম্মান কাজে লাগিয়ে পীররা অনেক তদবিরও করে থাকেন। সুতরাং দ্রুত টাকা রোজগার করতে হলে এই পথই বেছে নিতে হবে। সেই চিন্তা অনুযায়ী মোতালেব চিশতি প্রথমে টঙ্গীর গোপালপুরে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে দরবারের নামে প্রতি বৃহস্পতিবার মিলাদ মাহফিলের আয়োজন শুরু করেন। এরপর সেখান থেকে চলে যান ভাটারার শাহাজাদপুরে। সেখানে চাকরি দেওয়ার নামে তার ভক্ত ও অন্য ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিতে থাকেন। এরপর রাতের আঁধারে চলে যান তুরাগের বাটুলিয়ায়। সেখানেও দরবার বানিয়ে তার ভক্ত তৈরি করেন। তবে এ পর্যন্ত কোনো মুরিদ বা বক্তকে তিনি চাকরি দিতে পারেননি।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নির্মাণ শ্রমিক লীগে পদ দিতেও তিনি এক লাখ টাকা করে নিয়েছেন। এ সংগঠনের সভাপতি ছিলেন শেখ আক্তারী নামে এক নারীনেত্রী। সাধারণ সম্পাদক ছিলেন মিজানুর রহমান।

জিজ্ঞাসাবাদে চিশতি জানান, আক্তারী বেগমের মাধ্যমেই বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করেন তিনি। বিশেষ করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে প্রবেশ করতেন। এরপর ওই সব দফতরে চাকরি দেওয়ার নামে হাতিয়ে নিয়েছেন এক কোটি ২৭ লাখ টাকা। আক্তারীকেও প্রতারণার ২৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। তবে ওই টাকার বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এখনো পাওয়া যায়নি।

ঢাকা মহানগর গুলশান বিভাগের গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, চিশতি একজন ভণ্ড প্রতারক। তার বিরুদ্ধে যে পরিমাণ অভিযোগ রয়েছে তা তিনি স্বীকার করেছেন। তিনি ‘ঢাকা গে কমিউনিটি’ দু’টি ওয়েব পেজের মাধ্যমে যে বিকৃত যৌনাচার চালাতেন তাও স্বীকার করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার তাকে রিমান্ড শেষে আদালতে তোলা হবে বলে।

 

সূত্রঃ যুগান্তর