নন্দীগ্রামে শ্রমিক সংকটে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলায় শ্রমিক সংকটে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। একদিকে করনোভাইরাসের কারণে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক আসছে না আবার বৈশাখী ঝড় ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কায় দুশ্চিন্তায় পড়েছে কৃষকরা।

জানা গেছে, করোনার থাবায় বিশ্বজুড়ে চলছে লকডাউন, থমকে গেছে বিশ্ব অর্থনীতির চাকা, স্থবির হয়ে পড়েছে কর্মচঞ্চল মানুষের জীবনধারা। এমন পরিস্থিতিতেও মাঠে কাজ করছেন কৃষক। করোনা এখনও দেশের কৃষি ও কৃষককে থামাতে পারেনি। ক্ষেতের নতুন ফসলে কৃষকের মুখে হাসি ফোটে, স্বপ্ন বুনতে থাকেন আগামীর পথ চলার। কিন্তু, করোনার চোখ-রাঙানি আর আগ্রাসনে কৃষকের সেই হাসি মলিনতার কালো মেঘের আড়ালে ঢেকে যাবার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। সুখের স্বপ্নে হানা দিয়েছে দুর্ভাবনা।

রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, মাথার ঘাম পায়ে ফেলে রাতদিন পরিশ্রম করে কৃষক ফসল ফলিয়েছে। কিন্তু করোনার প্রভাবে সেই ফসল এবার ঘরে তোলা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়। দুশ্চিন্তায় কপালে ভাঁজ পড়েছে কৃষকের। ক্ষেতে সোনালি ফসল দুলছে, কিন্তু তা ঘরে তুলতে যে শ্রমিকের প্রয়োজন তার দেখা নেই কোথাও।

এর মধ্যে নন্দীগ্রাম উপজেলায় শ্রমিক সংকট ও ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় বোরো ধান কাটা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন কৃষক। প্রতিবছর এ মৌসুমে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার শ্রমিক এই উপজেলায় ধান কাটতে এলেও এবার করোনা আতঙ্কের কারণে শ্রমিক এখনো আসেনি। এ অবস্থায় কৃষকরা স্থানীয় শ্রমিক দিয়েই উচ্চমূল্যে ধান কাটা শুরু করেছেন। এতে ধানের উৎপাদন ব্যয় বাড়বে বলে অভিমত কৃষকদের। ফলে ধানকাটা নিয়ে কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে।

পৌর শহরের পূর্বপাড়ার কৃষক শহিদুল ইসলাম বলেন, আগে রংপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম থেকে আমাদের নন্দীগ্রামে ধান কাটার শ্রমিকরা আসতেন। এ বছর আমরা তাদের জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু ধান কাটার মৌসুম শুরু হলেও এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে তারা আসতে পারেননি। তাই বাধ্য হয়েই স্থানীয় শ্রমিক দিয়েই জমিতে ধান কাটার কাজ করছি। এতে করে আমাদের ধানকাটার ব্যয় বাড়বে।

উপজেলার বার্মন গ্রামের কৃষক তীর্থ সলিল রুদ্র বলেন, বাইরের ধান কাটা শ্রমিকের মজুরি কম। এলাকার মানুষের মজুরি বেশি তাই ধানের উৎপাদন খরচের পাল্লা ভারি হবে। এলাকায় শ্রমিক না পেলে এসব ধান শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ে জমিতেই নষ্ট হতে পারে। আবার ধানের ন্যায্যমূল্য না পাওয়া যায় তাহলে লোকসান হবে। এসব চিন্তায় রাতে ঘুম হয় না।

জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আদনান বাবু জানান, নন্দীগ্রাম উপজেলায় ২০ হাজার ১৫৫ হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধানের আবাদ করা হয়েছে। ভর্তুকিমূল্যে ধান কাটার (কম্বাইন্ড হারভেস্টার) যন্ত্র কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে। এতে করে কিছু শ্রমিক সংকট কমবে। তবে শ্রমিক সংকট নিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে। এ ছাড়া ধান কাটার ক্ষেত্রে কৃষকদের সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ