নওগাঁয় আউশের আবাদ হয়েছে ৬৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:
নওগাঁ জেলায় ক্রমেই আউশ ধানের আবাদ ও উৎপাদন বাড়ছে। সরকারীভাবে আউশ চাষ করতে কৃষকদের উৎসাহিত করার জন্য বিশেষ প্রনোদনা দেয়ার কারনেই আউশ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে বলেছে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর।

এক সময় অতিরিক্ত ধান উৎপাদনের এই নওগাঁ জেলায় আউশের আবাদ ছিল খুবই জনপ্রিয়। সকালের খাবার তালিকায় বাডিতে বাড়িতে আউশ চালের পান্থাভাত ছিল খুবই লোভনীয়। বলা যায় তা ছিল আমাদের সংস্কৃতির অংশ। কিন্তু মাঝখানে এই আউশ ধানের চাষ প্রায় বন্ধ হয়েই পড়েছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে প্রনোদনা দেয়ার ফলে আউশের আবাদ করতে কৃষকদের উৎসাহ বেড়েছে।

কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর নওগাঁ’র উপ-পরিচালক মনোজিত কুমার মল্লিক জানিয়েছেন বর্তমান সরকার কৃষকদের আউশ চাষে উৎসাহিত করতে প্রান্তি চাষীদের বিনামুল্যে সার হিসেবে ইউরিয়া, পটাশডিএপি ও এমওপি, বীজ এবং জমির পরিচর্যা বাবদ নগদ অর্থ প্রনোদনা প্রদান করছে। এই কারনে জেলায় আউশ চাষের পরিমান বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী ২০১৫-১৬ বছরে জেলায় আউশের আবাদ হয়েছিল ৫৭ হাজার ২শ ৮০ হেক্টর জমিতে। এই বছর চালের আকারে আউশের উৎপাদন হয়েছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯২ মেট্রিক টন। ২০১৬-১৭ বছরে জেলায় আউশের আবাদ হয়েছিল ৫৮ হাজার ২৪৩ হেক্টর জমিতে। এ বছর আউশের চাল উৎপাদিত হয়েছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৮৮ মেট্রিক টন। ২০১৭-১৮ বছরে জেলায় আউশের আবাদ হয়েছিল ৬১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে। এ বছর চাল আকারে উৎপাদিত হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার ১৩০ মেট্রিক টন। চলতি ২০১৮-১৯ বছরে জেলায় আউশের আবাদ হয়েছে ৬৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। যেখান থেকে চালের আকারে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৪৮ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, চলতি বছর জেলায় মোট ৬৩ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে আউশ হয়েছে। এর মধ্যে উন্নতফলনশীল উফশী জাতের ৬২ হাজার ৯৫১ হেক্টর জমিতে এবং হাউব্রীড জাতের আউশ চাষ হয়েছে ৮১৯ হেক্টর জমিতে।

উপজেলা ভিত্তিক আউশ চাষের পরিমান হচ্ছে, নওগাঁ সদর উপজেলায় ৫ হাজার ৫৫৪ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৫ হাজার ২৬০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২৯৪ হেক্টর। রানীনগর উপজেলায় মোট ৩ হাজার ৩১০ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৩ হাজার ২৯০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২০ হেক্টর জমিতে। আত্রাই উপজেলায় মোট ২ হাজার ৪০৫ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৩৯০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ১৫ হেক্টর জমিতে। বদলগাছি উপজেলায় মোট আউশ চাষ হয়েছে ৯৪৫ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৯৩৫ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ১০ হেক্টর।

মহাদেবপুর উপজেলায় মোট আউশ চাষের জমির পরিমান ১০ হাজার ৪৫৭ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী জাতের ১০ হাজার ৪৩২ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২৫ হেক্টর জমিতে। পত্নীতলা উপজেলায় মোট আউশ চাষ হয়েছে ৬ হাজার ৯৫০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৬হাজার ৯১৫ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ৩৫ হেক্টর। ধামইরহাট উপজেলায় মোট আউশ চাষের পরিমান ২ হাজার ৯৮০ হেক্টর। এর মধ্যে উফশী জাতের ২ হাজার ৮২০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ১৬০ হেক্টর। সাপাহার উপজেলায় মোট আউশ চাষের পরিমান ৩ হাজার ৫৪০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৩ হাজার ৫৩০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ১০ হেক্টর। পোরশা উপজেলায় মোট আউশের আবাদের পরিমান ১ হাজার ১৯০ হেক্টর। পুরোটাই উফশী জাতের। মান্দা উপজেলায় মোট আউশ চাষ হয়েছে ১৭ হাজার ২৭৯ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ১৭ হাজার ৪৯ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২৩০ হেক্টর। নিয়ামতপুর উপজেলায় মোট আউশের আবাদ হয়েছে ৯ হাজার ১৬০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ৯ হাজার ১৪০ হেক্টর ও হাইব্রীড জাতের ২০ হেক্টর।

কৃষকরা এ বছর তাঁদের জমিতে সব চেয়ে বেশী আবাদ করেছেন ব্রিধান-৪৮, ব্রিধান-২৮, ব্রিধান-৫৫, পারিজা, জিরাশাইল এবং নেরিকা জাতের। এ বছর চালের আকারে সম্ভাব্য উৎপাদনের পরিমাণ আশা করা হচ্ছে ১ লাখ ৮০ হাজার ৫৪৮ মেট্রিক টন।

স/শ