দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে ধর্মপ্রাণ মানুষের চেয়ে ধর্মান্ধ বেশি: হানিফ

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

দেশের শিক্ষাব্যবস্থার কারণে ধর্মপ্রাণ মানুষের চেয়ে ধর্মান্ধ বেশি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ৷

বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এক গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।

এ সময় দেশে সাম্প্রদায়িকতার পেছনে ৫ কারণ জানান এই আওয়ামী লীগ নেতা। সেগুলো হলো- শিক্ষাব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা, ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার, লোকসংস্কৃতির চর্চা কমে যাওয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ওপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকা এবং মানুষের নৈতিকতা-মূল্যবোধের অবক্ষয়।

হানিফ বলেন, জাতিকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে না পারলে ধর্মান্ধতা সৃষ্টি হবে, সেটাই স্বাভাবিক এবং সেটাই হয়ে আসছে। ইতিহাস বলে, ভারত-বাংলাদেশসহ সর্বত্রই সাম্প্রদায়িক সংঘাতের মূল কারণ ছিল রাজনীতি। রাজনৈতিক কারণে এখনো ধর্মকে ব্যবহার করা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িকতার আরেকটা বড় কারণ লোকসংস্কৃতির চর্চা কমে যাওয়া। এর জায়গা দখল করে নিয়েছে ওয়াজ-মাহফিল।

আরেকটি বড় কারণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ফেসবুক বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। এসব মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টের কারণে দেশে উত্তেজনা ও সংঘর্ষ তৈরি হচ্ছে। মানুষের ন্যায়নীতি, সততা ও ন্যূনতম মূল্যবোধ থেকে দূরে সরে যাওয়াও সাম্প্রদায়িকতার অন্যতম কারণ- বলেন হানিফ।

আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, একজন মানুষ শিক্ষার আলোয় আলোকিত হলে তার মন থেকে কুসংস্কার দূর হয়ে যায়। স্বাধীন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের যেসব ঘটনা ঘটেছে, তার জন্য আমরা বিভিন্ন সময়ে একটা নির্দিষ্ট শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করি। মাদ্রাসার শিক্ষকেরা রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়নে দরিদ্র পরিবার থেকে আসা ছাত্রদের বাধ্য করেন। মাদ্রাসার শিক্ষাব্যবস্থা হলেই সাম্প্রদায়িক, তা নয়। এ শিক্ষাকে যুগোপযোগী করে পাঠ্যসূচি পরিবর্তন করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

ওয়াজ-মাহফিলের বক্তাদের বেশিরভাগই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য, অশ্লীল ও সুড়সুড়িমূলক কথাবার্তা বলে থাকেন বলে মন্তব্য করেন হানিফ। তিনি বলেন, মানুষকে ধর্মপরায়ণ না করে ধর্মান্ধ করে তোলার একটি হাতিয়ার হিসেবে ওয়াজ-মাহফিলকে ব্যবহার করা হচ্ছে।

‘গৌরব ৭১’ নামের একটি সংগঠন ‘সাম্প্রদায়িকতা ও জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আমাদের করণীয়’ শীর্ষক এই আলোচনা সভার আয়োজন করে।

আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মনিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক এফএম শাহীনের সঞ্চালনায় এতে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রোভিসি (প্রশাসন) মুহাম্মদ সামাদ। তিনি বাংলাদেশে রাষ্ট্র ও ধর্মকে আলাদা রাখার আহ্বান জানান।

অন্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন- হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি কাজল দেবনাথ, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক উপসম্পাদক আমিনুল ইসলাম, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক নুজহাত চৌধুরী, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা জাহাঙ্গীর আলম, যুবলীগের সহসভাপতি কোহেলী কুদ্দুস, ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বরিকুল ইসলাম প্রমুখ।

সূত্র:যুগান্তর