উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনের প্রার্থিতা নিয়ে দুই মত

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ হস্তক্ষেপ যেন না থাকে, সে জন্য তাদের স্বজনদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলটির সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ নির্দেশ সংবাদ সম্মেলন করে একাধিকবার জানিয়েছেন সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে হুশিয়ারিও উচ্চারণ করেছেন তিনি। ওবায়দুল কাদের সংবাদ সম্মেলনে জানিয়ে দেনÑ কেউ যদি দলের নির্দেশনা না মানেন, তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কিন্তু স্বজনদের প্রার্থিতা নিয়ে দু-রকম মত রয়েছে দলটির নেতাদের মধ্যে। দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ বিষয়টি নিয়ে ভেতরে ভেতরে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। তাদের ভাষ্য, নির্বাচনের কাছাকাছি সময়ে এসে হুট করে একটা নির্দেশনা দিয়ে দেওয়া হলো, যা দলের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চার রীতিবিরুদ্ধ। রাজনীতিবিদদের স্বজনরা রাজনীতি করবেন, এটাই স্বাভাবিক। দল এর বিপক্ষে দাঁড়ালে রাজনীতিবিদদের সন্তানদের রাজনীতির প্রতি নিরুৎসাহিত করা হয়।

জানা গেছে, কেন্দ্র থেকে যেসব মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের তালিকা হচ্ছে তার মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান, ড. আবদুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফের নামও রয়েছে। সূত্র জানায়, এই তিন নেতা ছাড়াও অন্তত ১৫ জন কেন্দ্রীয় নেতা দলের এই নির্দেশনা মানতে নারাজ। বিষয়টির ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব ব্যাখ্যাসহ সরাসরি দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সামনে উপস্থাপন করার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তারা। শুধু তাই নয়, বিষয়টি নিয়ে গত মঙ্গলবার দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে বাহাসও করেছেন দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। সেখানে উপস্থিত একাধিক নেতা এ তথ্য জানান।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, উপজেলা নির্বাচন ইস্যুতে ওবায়দুল কাদের সাহেব বিস্তারিত বলেছেন। আমি মনে করি তিনি যা বলেছেন এটিই নেত্রীর নির্দেশ। এমতাবস্থায় নেতারা এখন তাকিয়ে আছেন আগামী ৩০ এপ্রিল অনুষ্ঠেয় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভার দিকে— কি সিদ্ধান্ত হয় সেটির অপেক্ষায়।

আগামী ৮ মে প্রথম ধাপে ১৫০টি উপজেলায় নির্বাচন। এ ধাপে ২৬টি উপজেলায় ইতোমধ্যেই বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকটি উপজেলায় রয়েছেন মন্ত্রী ও এমপির স্বজন বা পরিবারের সদস্যও। মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনরা নির্বাচন করতে পারবেন না— এমন নির্দেশনা দিলেও এখন পর্যন্ত একটি উপজেলা ছাড়া সবখানেই এ নির্দেশনা উপেক্ষিত হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য বলেন, ‘বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আসছে না। এটি অংশগ্রহণমূলক করতেই আমাদের দল এটি উন্মুক্ত করে দিয়েছে। এ সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। এখানে যারা জনপ্রিয়, গ্রহণযোগ্য তারা জয়ী হয়ে আসবেন। কিন্তু মনোনয়ন দাখিল করার পর দল থেকে বলা হলো, মন্ত্রী-এমপির স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটা পুরোপুরি স্ববিরোধী সিদ্ধান্ত। আমার ধারণা, দলের সভাপতি শেখ হাসিনা এমন নির্দেশনা দেননি। তাই ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

শুধু নির্বাচন ইস্যুতেই নয়, দলের অনেক কাজেই শৃঙ্খলার অভাব আছে বলে জানান দলটির আরেক নেতা। তিনি গত মঙ্গলবার দলের প্রচার উপ-কমিটির সভায় চেয়ারে বসা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের শৃঙ্খলাবিরোধী আচরণের কথা তুলে ধরেন। জানান, একদিন আগে জানানো হয়েছিল মঙ্গলবার যৌথসভা হবে। সে অনুযায়ী কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই যান। কিন্তু ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গিয়ে দেখা গেল সেখানে প্রচার উপ-কমিটির সভা। তাই দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের পাশে বসা নিয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা অপ্রীতিকর আচরণ করেছেন। অগ্রজ নেতাদের দাঁড় করিয়ে রেখে অনুজ নেতারা বসে থাকেন। একাধিকবার বলার পরও তারা চেয়ার ছাড়তে রাজি হননি। পরে দুইজন প্রেসিডিয়াম সদস্য ধমক দেওয়ার পর প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে করতে অন্য জায়গায় গিয়ে বসেন। এ সময় উপস্থিত এক নেতা বলেন, দীর্ঘদিন দল ক্ষমতায় থাকায় সারাদেশে গ্রুপিং যেমন হয়েছে ঠিক, তেমনি কেন্দ্রীয় কমিটিতেও হয়েছে। যে কারণে বারবার এমন দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগের মতো ঐতিহ্যবাহী দলে এটি অপ্রত্যাশিত। আগামী কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ বিষয়টিও তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।

৩০ এপ্রিল দলের সভার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেন, ‘কার্যনির্বাহী সংসদের সভা দলের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। এবার নির্বাচন সামনে থাকায় সভাতে স্বভাবতই এ প্রসঙ্গ আসবে। পাশাপাশি আগামী দিনে বিভিন্ন দিবস পালন বা উদযাপনসহ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে আমাদের দলের করণীয় নির্ধারণ হতে পারে। উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান মন্ত্রী ও এমপির স্বজন হলেও তারা ছাড় পাবেন বলে প্রসঙ্গক্রমে জানান তিনি।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ৩০ এপ্রিল দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে থাকছে ১৬ এজেন্ডা। এগুলোর মধ্যে রয়েছে শোকপ্রস্তাব, মহান মে দিবস, ১৭ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস, ২৫ মে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী, ৭ জুন ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস, ২৩ জুন আওয়ামী লীগের হীরকজয়ন্তী উদযাপন ও বছরব্যাপী কর্মসূচি গ্রহণ, ৫ আগস্ট শহীদ শেখ কামালের জন্মদিন, ৮ আগস্ট বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা মুজিবের জন্মদিন, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস, ১৭ আগস্ট সিরিজবোমা হামলার প্রতিবাদ দিবস, ২৪ আগস্ট আইভী রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী, ২৭ আগস্ট কবি নজরুলের মৃত্যুবার্ষিকী পালন, সমসাময়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সাংগঠনিক ও বিবিধ। আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সমসমায়িক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, সাংগঠনিক ও বিবিধ এই তিনটি এজেন্ডার মধ্যেই উপজেলা নির্বাচনের বিষয়টি আসবে। এতে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা অতীতের মতোই নিজ নিজ বক্তব্য পেশ করার সুযোগ পাবেন। সবার সম্মতিক্রমে একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছাবে আওয়ামী লীগ।