দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্য খাতের তাগিদ

আমাদের স্বাস্থ্য খাতের করুণ পরিস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে করোনাভাইরাস।

রোগ করোনাজনিত হোক বা অন্য কিছু- বর্তমান সময়ে হাসপাতালের পর হাসপাতাল ঘুরে বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়ার ঘটনা কল্পনা করা যায়!

পৃথিবীর আর কোথাও না ঘটলেও করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুর বিষয়টি আমাদের গণমাধ্যমের নিয়মিত খবরে পরিণত হয়েছে।

হাসপাতাল আছে বহু, নিয়মিত সেগুলোতে চিকিৎসাও হতো; কিন্তু এখন সেসব হাসপাতাল রোগী ভর্তি না নেয়ায় তাদের দরজায় দাঁড়িয়ে আপনজনের মৃত্যু দেখতে হচ্ছে মানুষকে, ভাবা যায়!

আর সরকারি ও সরকার নির্ধারিত যেসব হাসপাতালে মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে, সেগুলোর পরিস্থিতিও অত্যন্ত নাজুক। এভাবে আর যা-ই হোক, চিকিৎসাসেবা চলতে পারে না।

স্বাস্থ্য খাতের এমন করুণ পরিস্থিতির পরিবর্তনে নিয়মিত অডিট করা, সমস্যার গোড়ায় হাত দেয়া, যথাযথ তদারকি এবং জনস্বাস্থ্যের চোখ দিয়ে এ খাতকে দেখার পরামর্শ উঠে এসেছে বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে।

সবাই দুর্নীতিমুক্ত স্বাস্থ্য কাঠামো গড়ে তোলার তাগিদ দিচ্ছেন। করোনার মতো মহামারী আরও আসছে বলে সতর্ক করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের পক্ষ থেকে।

এ অবস্থায় নিজেদের ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষার জন্য মানসম্মত সেবা পাওয়ার মতো স্বাস্থ্য খাত গড়ে তোলার বিকল্প নেই। আমাদের স্বাস্থ্য খাতের পরিস্থিতি অনুধাবনে সাম্প্রতিক দুর্যোগের সময়ের কিছু নজির তুলে ধরাই যথেষ্ট।

কোভিড-১৯ চিকিৎসায় নিয়োজিত ডাক্তারদের সুরক্ষায় কেনা আসল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ না করে নকল সরবরাহ করা, এমনকি সরবরাহকারী ঠিকাদারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেয়া থেকে বোঝা যায় জনস্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোয় কত কালো বিড়াল বসে আছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোয় দেশের অনেক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে কেনাকাটায় পুকুর চুরির খবর থেকে বোঝা যায় আমাদের স্বাস্থ্য খাত তাসের ঘর হয়ে আছে।

উপরে কোনোমতে টিকে থাকলেও এর ভেতরটা সারশূন্য। কেনাকাটা থেকে শুরু করে বদলি পর্যন্ত স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের সব ক্ষেত্রে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে দুর্নীতি।

করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সরকার জরুরিভিত্তিতে ১৮৩ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ নিলে সেখানেও জনপ্রতি ১০ লাখ টাকা করে আদায়, এমনকি অযোগ্যদের নিয়োগ দিতে বয়স ও যোগ্যতা শিথিল করা হয়!

এরা যে দক্ষ জনশক্তি না হয়ে সরকারের রাজস্বের বোঝা হবে, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়ার দরকার নেই। এভাবে স্বাস্থ্য খাতকে রসাতলে না নিয়ে এখনই একে মানসম্মত করার উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যথায় ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের দুর্যোগ অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য।

 

সুত্রঃ যুগান্তর