দুই চরে ২৩৩ টিকা প্রদান: বাঘায় শূন্য , নেটওয়ার্কও দুর্বল

নিজস্ব প্রতিবেদক:

রাজশাহীর পদ্মার চরের মানুষদের করোনার টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ফলে পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ীর বিস্তৃর্ণ চরের হাজারও মানুষ সংক্রমনের ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছেন। যদিও এই তিন এলাকার খুব কাছে ভারত। তাই সংক্রামন রোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা প্রদান সম্পন্ন করা জরুরি বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা।

যদিও বিষয়টি নিয়ে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) বলছেন, সীমান্তে কড়াকড়ি অবস্থা রয়েছেন তারা। সামান্তের কাছাকাছি কাউকে আসতে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া সচেতন করতে মাইকিং করা হচ্ছে। জানা গেছে- করোনা প্রতিরোধে অনেকটাই নাজেহাল অবস্থা প্রতিবেশী দেশ ভারতের। দেশটিতে করোনায় (ধরন বি.১.১৬৭) প্রতিদিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যুর রেকর্ড রয়েছে। এই করোনার ধরন দেশেও শনাক্ত হয়েছে।

এমন অবস্থায় ভারত-বাংলাদেশ চর সীমান্তের মানুষদের দ্রুত করোনার টিকার আওতায় আনার কথা বলছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তারা বলছেন- চরে টিকা প্রদানের প্রধান প্রতিবন্ধকতা নেটওয়ার্কের সমস্যা। এই সমস্যার কারণে বেশি মানুষের রেজিস্ট্রেশন করতে পারে না। যদিও চর এলাকার মানুষদের টিকা গ্রহণে আগ্রহ কম। ফলে তাদের টিকার আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। তাই সচেতনার জন্য স্থানীয় প্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে- রাজশাহীর পবা, বাঘা ও গোদাগাড়ী উপজেলার বেশিকিছু অংশে পদ্মা নদীর চর রয়েছে। এই চরগুলো ভারতের সীমান্ত ঘেঁষা। চরগুলোতে মাইকিং করা হয়েছে। তবে তেমন সুফল মেলেনি। এর মধ্যে বাঘার চকরাজাপুর চরে কাউকে করোনার টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি। তবে উপজেলার তিনটি চরের মধ্যে পবায় একদিনে ১৭৩ জন ও গোদাগাড়ীর চর আষাড়িদাহতে ৬০ জনকে টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে পবা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের আবাসিক মেডিকেল অফিসার তানভীর আহম্মেদ জানান-‘ স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে বেশ কয়েক দিন পবার চরে মাইকিং করা হয়েছিল। রেজিস্ট্রেশনকৃত ১৭৩ জনকে করোনার টিকার প্রথম ডোজ গত ২৮ মার্চ দেয়া হয়েছে। আগামী ২৫ মে দ্বিতীয় ডোজ টিকা দেওয়া হবে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন- ‘প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনার ভয়াবহ অবস্থা। এই চরের ওপারে ভারত। তাই বিষয়টি মাথা রেখে চরবাসীদের আগে টিকা দেয়ার চেষ্টা করা হবে। বিষয়টি নিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।’ অন্যদিকে, জেলার গোদাগাড়ীর চর আষাড়িদাহতে মাইকিং করেও তেমন সারা মেলেনি। পুরো চরে মাত্র ৬০ জনকে করোনার টিকা নিয়েছেন। বেশি ভাগ মানুষ টিকা নেননি

বিষয়টি নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. সানাউল্লাহ বলেন- ‘চর আষাড়িদাহ পদ্মা নদীর চর এলাকা। টিকা কিছু মানুষ নিয়েছে। অনেকেই রেজিস্ট্রেশন হয়নি।

এ বিষয়ে গোদাগাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. আবু তালেব জানান, ‘গোদাগড়ীর চর আষাড়িদাহ ভারতের খুব কাছাকাছি একটি সিমান্ত এলাকা। বিষয়টি মাথায় রেখে সর্বস্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে আলোচনায় বসা হয়েছিল। সেখানে পদ্মার চর এলাকায় করোনা প্রতিরোধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়।

তিনি আরও বলেন, চর আষাড়িদাহ কয়েকটি মেডিকেল ক্যাম্প পরিচালনা করা হয়েছিল। টিকা গ্রহণের জন্য মাইকিং করা হয়, এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর মাধ্যমেও প্রচারণ চালানো হয়েছিল। তবে রেজিস্ট্রেশনের মূল সমস্যা হলো নেটওয়ার্ক। নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে অনেকের রেজিস্ট্রেশন করা যায়নি। তবে ৬০ জন মানুষকে করোনার টিকা দেয়া সম্ভব হয়েছে।’ পবা ও গোদাগাড়ীতে অল্প পরিষরে টিকা প্রদান করা গেলেও বাঘার পদ্মার চরে একজনকেও করোনার টিকা দেয়া সম্ভব হয়নি।

জানা গেছে, বাঘার চকরাজাপুর এই চরগুলোতে সাড়ে ৮ হাজার ভোটার। তাতে কমপক্ষে টিকাগ্রহণের উপযোগী (নির্ধারিত বয়স) প্রায় ৩ হাজার মানুষ। কিন্তু চরগুলোতে গিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মীরা কাউকে রেজিস্ট্রেশন করাতে পারেনি।

এ বিষয়টি নিয়ে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা টিএইচএ রাশেদ আহম্মেদ  জানিয়েছেন- ‘চরে দুই বার লোক পাঠিয়েছি। নেটওয়ার্কের সমস্যার কারণে রেজিস্ট্রেশন করা সম্ভব হয়নি। তাই তাদের রেজিস্ট্রেশন করে উপজেলা সদরে এসে টিকা নিতে বলা হয়েছে।’

রাজশাহী সিভিল সার্জন কাইউম তালুকদার জানান, পদ্মার চরের বিষয়ে দিক নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে- ভারত থেকে কেউ আসলে তাকে দ্রুত কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা।

স/জে