দীর্ঘ অবকাশে চাঙ্গা থাকতে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের আতংকে দীর্ঘদিন ঘরে প্রায় বন্দি জীবন কাটছে আমাদের। সাধারণ ছুটি তুলে নেয়া হলেও অনেকটাই সীমিত পরিসরে চলছে কর্মক্ষেত্র। সবারই চেষ্টা যতটা সম্ভব ঘরে থাকা নিরাপদে থাকা। তবে দীর্ঘদিন ঘরে থেকে অনেকেরই ওজন বেড়ে যাচ্ছে, শরীরে জমছে বাড়তি মেদ। বেড়ে যাচ্ছে ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ, কলেস্টেরলসহ নানারকম শারীরিক সমস্যা।

তাই এ সময় ঘরে থাকা দিনগুলোতে চাঙ্গা থাকতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন। চাঙ্গা ও ফিট থাকতে আগে হয়তো নিয়মিত জিমে যেতেন। সকাল-বিকাল পার্কে গিয়ে নিয়মিত হাঁটার অভ্যাসও ছিল অনেকের। কিন্তু এখন যেহেতু সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে হচ্ছে। তাই আগের মতো জিমে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ইচ্ছা করলেই পার্কে বা রাস্তার ধার ধরে হাঁটা কিংবা দৌড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। তাই করোনা সংক্রমণের এ কঠিন সময়টাতে নিজেকে ফিট রাখতে এমন ধরনের শরীরচর্চা করুন যা চাইলে ঘরে থেকেই করা যাবে। দীর্ঘ অবকাশে কিভাবে চাঙ্গা থাকবেন তা নিয়ে লিখেছেন- কেয়া আমান

ইয়োগা করুন

শরীরের বাড়তি মেদ ঝেড়ে ছিমছাম শারীরিক গড়নের অধিকারী হয়ে উঠতে ইয়োগা বা যোগব্যায়াম খুব ভালো কাজ করে। ইয়োগা শরীরের বাড়তি মেদ ঝরানোর পাশাপাশি কোমর, নিতম্ব ও মাসেলের শেপ সুন্দর রাখতেও সাহায্য করে। ইয়োগা একজন ভালো ট্রেইনারের কাছে শেখা উচিত। তবে এখন যেহেতু চাইলেই সবকিছু করা যাচ্ছে না তাই এ সময়টাতে আপাতত ইউটিউব কিংবা শরীরচর্চার বিভিন্ন ফিচার থেকে ইয়োগার বিভিন্ন আসন শিখে ঘরে বসেই করতে পারেন ইয়োগা। ফিট থাকতে অর্ধ-চিৎচক্রাসন, ত্রিকোণ, উস্ট্রাসন, মৎসোন্দ্রাসনসহ বিভিন্ন ধরনের যোগাসন রয়েছে।

উপকারী অ্যারোবিক

মিউজিকের তালে তালে ফ্রিহ্যান্ড কসরতই অ্যারোবিক। অ্যারোবিকে মিউজিকের সঙ্গে ছন্দ মিলিয়ে হাত-পা ও শরীরের অন্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করতে হয় তাই ব্যায়ামটা পুরো শরীরের জন্যই খুব কার্যকর। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও আমেরিকান কলেজ অব স্পোর্টস মেডিসিন থেকে জানানো হয়েছে, ১৮ থেকে ৬৪ বছর বয়স্ক সুস্থ ও শারীরিকভাবে ফিট মানুষের সপ্তাহে ১৫০ মিনিট মাঝারি গতিতে বা ৭৫ মিনিট জোর গতিতে অ্যারোবিক ব্যায়াম করা দরকার।

ট্রেডমিল হাঁটতে পারেন

যার বাসায় ট্রেডমিল আছে তিনি খুবই সহজেই রোজ শুধু ট্রেডমিলে শরীরচর্চা করেই এ সময় ফিট থাকতে পারেন। না থাকলে সম্ভব হলে নতুন কিনেও নিতে পারেন। প্রাথমিক অবস্থায় ট্রেডমিলে ২০-২৫ মিনিট হাঁটতে পারেন। ধীরে ধীরে সময় বাড়িয়ে ৩০-৪০ মিনিট পর্যন্ত করা যায়। ট্রেডমিলে হাঁটলে ওজন, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে, ৎপিণ্ড, ফুসফুসও ভালো থাকে।

নানারকম শরীরচর্চা

জিম ছাড়া ফিট থাকতে যতগুলো শরীরচর্চা রয়েছে হাঁটা, জগিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা তার মধ্যে অন্যতম। এ সময়টাতে দিনে অন্তত দু’বার ৩/৪ তলা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করে ফিট থাকতে পারেন। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা শরীরের শক্তি বৃদ্ধি, মাংসপেশির গঠন এবং ভারসাম্য দৃঢ় করতে খুবই কার্যকর। এছাড়া রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হার্ট সুস্থ রাখা, বেশি ক্যালরি ঝরাতেও সাহায্য করে এ পদ্ধতি।

হাঁটা হচ্ছে কম পরিশ্রমে উপযুক্ত একটি ব্যায়াম। পার্কে বা রাস্তায় হাঁটতে যাওয়া যেহেতু এ সময় ততটা নিরাপদ নয়, তাই বাড়ির ছাদে, গ্যারেজে, লম্বা করিডোরে সকাল-বিকাল বেশ কয়েক রাউন্ড হেঁটেও এখন ফিট থাকতে পারেন। ছোটবেলায় অনেকেই দড়িলাফ খেলেছেন, এটিই হচ্ছে স্কিপিং। বাসায় থাকা দিনগুলোতে ছোটবেলার এ ব্যায়ামটি করে খুব সহজেই ফিট থাকতে পারেন।

ঘরের কাজ করুন

করোনা সংকটে ঘরে থেকে ঘরের কাজ করেই থাকতে পারেন একদম ফিট। ঘরের বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন ধরনের শরীরচর্চার উপকারিতা পাওয়া যায়। যেমন-জানালার গ্লাস পরিষ্কার করতে গেলে হাত বারবার ওপরে-নিচে নামাতে হয়। এতে শরীরের অন্যান্য অঙ্গেরও নড়াচড়া হয়। পাশাপাশি হাতের মাংসপেশি শক্ত হয় ও শরীরের বাড়তি মেদ কমে।

পেটের মেদ কমাতে ঘর মুছুন। বিশেষ করে মেঝে বা সিঁড়ি মুছতে গেলে স্বাভাবিকভাবেই পেটে প্রচণ্ড চাপ পড়ে। ফলে পেটের মেদ সহজেই কমে যায়। দাঁড়িয়ে থালাবাসন মাজলে মেরুদণ্ড ফ্লেক্সিবেল হয়ে ওঠে। বসে থালাবাসন মাজলে পেটের চর্বি হ্রাস হয়। পাশাপাশি হাতের তালুতে এবং আঙুলের ওপরে চাপ প্রয়োগ করার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো আরও শক্তিশালী হয়।

মেঝেতে বসে কাপড় কাচলে পেটের জর্মি কমে। বাগান করে বা গাছের যত্ন নিয়ে ফিট থাকা সম্ভব শারীরিক ও মানসিকভাবে।

শরীরচর্চায় সাবধানতা

যে কোনো ব্যায়াম করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে হার্ট, ব্যাকপেইন, কিডনি রোগী এবং গর্ভবতী নারীরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে শরীরচর্চা করুন। হাঁটার আগে বা জগিংয়ের আগে ভালো জুতা পরে নিন। একদিন খুব নিয়ম মেনে বা অনেক সময় ধরে শরীরচর্চা করলেন, আবার একদিন দায়সারাভাবে করলেন বা করলেনই না- এমনটি শরীরের জন্য ক্ষতিকর। প্রতিদিন শরীরচর্চার জন্য নির্দিষ্ট একটি সময় বেছে নিন।

খাদ্যাভ্যাসে সচেতন হোন

ইয়োগা ও ব্যায়ামের পাশাপাশি খাবারের দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। খাবারের তালিকায় শর্করা জাতীয় খাবারের চেয়ে প্রোটিন জাতীয় খাবার, শাকসবজি ও ফলের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে। চর্বিযুক্ত খাবার যথাসম্ভব কম খাওয়ার চেষ্টা করুন এবং প্রচুর পানি পান করুন। নিয়ম মেনে ইয়োগা ও ব্যায়াম করলে এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের অভ্যাস গড়ে তুললে করোনা সংকটে ঘরে থেকে থাকা যাবে পুরোপুরি ফিট।

– একবারে বেশি না খেয়ে অল্প করে বেশিবার খেতে হবে।

– ফাস্টফুড এবং অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার খাওয়া যাবে না। সুষম খাদ্যাভ্যাস শুধু ব্যায়াম করলেই কিন্তু হবে না। করতে হবে ব্যালান্স ডায়েট।

– ক্যালরি মেপে খাবার খেতে হবে। কম ক্যালরিযুক্ত খাবার দিয়ে পেট ভরাতে হবে।

– আঁশজাতীয় খাবার, সবজি, সালাদ, টকজাতীয় ফল খেতে হবে বেশি বেশি।

– শরীরের বিপাক ক্রিয়া ঠিক রাখতে পানি খেতে হবে প্রচুর পরিমাণে।

– ভাত, আলু, আটা, ময়দায় তৈরি খাবার, নুড্লস ইত্যাদি নিয়ন্ত্রিতভাবে অর্থাৎ পুষ্টিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী খেতে হবে। সুষম খাদ্যাভ্যাস শুধু ব্যায়াম করলেই কিন্তু হবে না। করতে হবে ব্যালান্স ডায়েট।