ত্বকের যত্নে পানি থেরাপি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক : 

শরীরের অঙ্গ ব্যবস্থাপনার পাশাপাশি আমাদের ধুলাবালি, জীবাণুর হাত থেকেও রক্ষা করে ত্বক। ত্বক ভালো রাখতে আমরা নিয়মিত যত্ন নিই, নানা প্রসাধনী ব্যবহার করি। তবে জানেন কি ত্বকের যত্নে পানি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। শরীরে পানির অভাব হলে প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গের পাশাপাশি প্রভাব পড়ে ত্বকেও।

আবার বাইরের ধুলা-ময়লা থেকে পরিত্রাণ পেতেও দরকার হয় পানি।
ত্বক আরো সুন্দর করতে প্রত্যেকেই দ্রুত সমাধান চান। যাঁরা খুব বেশি প্রসাধন ব্যবহার করতে চান না, আবার ত্বক সুস্থ সুন্দর রাখতে চান তাঁদের জন্য পানি থেরাপি বেশ কার্যকর। রূপ বিশেষজ্ঞদের মতে, বছরের যেকোনো সময় বিশেষ করে গরমকালে কিছু দিন সব রকম প্রসাধনী ব্যবহার থেকে বিরত থাকা ত্বকের জন্য ভালো। এতে পুরো বছর প্রসাধনী ব্যবহারের ধকল কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পায় ত্বক। এই সময় পানির নানা মিশ্রণ ব্যবহার করা যেতে পারে। ত্বক পরিষ্কার করা থেকে ময়েশ্চারাইজেশন, সবকিছুই করা সম্ভব শুধু পানি দিয়ে।

ত্বকের সাধারণ একটি সমস্যা ব্রণ। সময়মতো যত্ন না নিলে এ সমস্যা বাড়তে পারে। পানি গরম করার সময় তাতে পরিষ্কার নিমপাতা ও পুদিনাপাতা দিয়ে ভালোভাবে ফুটিয়ে একটি পরিষ্কার পাত্রে নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল যোগ করে সেই বাষ্পে ত্বক ভিজিয়ে নিন। খেয়াল রাখতে হবে, ত্বকে যেন অতিরিক্ত তাপ না লাগে।

ত্বকের সমস্যায় আমরা নিয়মিতই বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহার করি। এগুলোতে থাকা নানা রাসায়নিক উপাদানের কারণে ত্বকে অনেক সময় বিরূপ প্রভাব পড়ে। পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করার মাধ্যমে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

রাতে ঘুমানোর আগে এবং সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ পর্যাপ্ত পানির ঝাপটা দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করলে ত্বকে লেগে থাকা অম্লীয় বা ক্ষারীয় পদার্থগুলো পরিষ্কার হয়ে ত্বকের সুষম পিএইচ ব্যালান্স বজায় থাকে।

চোখের ফোলা ভাব আমাদের অনেকেরই একটি সাধারণ সমস্যা। কাজের চাপ বা কম ঘুমানোর কারণে চোখের আশপাশে ফোলা ভাব দেখা দিতে পারে। এক টুকরা বরফ একটি পরিষ্কার কাপড় বা রুমালে পেঁচিয়ে চোখের চারপাশে আলতো করে বৃত্তাকারে ম্যাসাজ করলে রক্তসঞ্চালন বাড়ে। এতে চোখের ফোলা ভাব কমে। প্রতিদিনের ব্যবহারে চোখের নিচের কালো দাগও দূর হয়।

সারা দিন বাইরে থাকলে ত্বকে ময়লা লাগাই স্বাভাবিক। দিনে কয়েকবার পানির ঝাপটা দিলে মুখে ময়লা জমতে পারে না। তাই তিন-চার ঘণ্টা পর পর মুখে পানির ঝাপটা দেওয়া উচিত। নিষ্প্রাণ ত্বকে সজীবতা ফিরিয়ে আনতেও অন্যতম সহায়ক পানি। বয়সের ছাপ ও বলিরেখা কমাতেও পানির বিকল্প নেই। পানি ত্বকের কোলাজেন ধরে রাখতে সাহায্য করে। কারণ কোলাজেনের প্রধান অংশ গঠিত হয় পানি দিয়ে। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করলে ত্বক ঝুলে যাওয়া সমস্যা থেকে রেহাই পায়। শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতেও পানির জুড়ি নেই। বিভিন্ন ধরনের পানীয় শরীরকে ভেতর থেকে পরিষ্কার করতে ও চেহারার উজ্জ্বলতা বাড়াতে সাহায্য করে।

কতটুকু পানি পান করা উচিত

গরমে স্বাভাবিকভাবেই সবার মধ্যে পানিশূন্যতা দেখা দেয়। ঘাটতি পূরণে নিয়ম মেনে পানি পান করতে হবে। একবারে অনেক পানি পান করা যাবে না। দুই ঘণ্টা পর পর বা চাহিদানুযায়ী পান

করতে হবে। একজন পূর্ণ বয়স্ক মানুষের দিনে সাত থেকে আট গ্লাস পানি পান করতে হবে। এছাড়া বিভিন্ন ফলের জুস বা সরবত খেয়েও পানির অপূর্ণতা দূর করা যায়।

ডিটক্স পানি

দারচিনি ও পানির মিশ্রণ

আমাদের রক্তে শর্করার পরিমাণ বেড়ে গেলে ত্বকে ব্রণ এবং বলিরেখা দেখা দেয়। দারচিনি রক্তে শর্করার স্থিতিশীলতা বজায় রাখে। পানিতে সারা রাত দারচিনি ভিজিয়ে রেখে সকালে পান করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় ।

লেবু ও পানির মিশ্রণ

লেবুতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘সি’ থাকে, যা কোলাজেন গঠনে সহায়তা করে। পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে নিয়মিত পান করলে যকৃত ভালো থাকে, ত্বক ফরসা ও সতেজ হয়। নিয়মিত লেবুমিশ্রিত পানি পান করলে লিভার ভালো থাকে। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। শরীর চনমনে ও চাঙ্গা থাকে।

পুুদিনা ও পানির মিশ্রণ

পুদিনামিশ্রিত পানি খেলে শরীর ঠাণ্ডা থাকে। সেই সঙ্গে পাচনতন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক থাকে। আবার কিছু পাতা ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে ব্যবহার করতে পারেন। এটি ত্বককে টোন করে।

আদা ও পানির মিশ্রণ

আদা একটি শক্তিশালী অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং হজমে সহায়ক উপাদান। আমাদের পরিপাকতন্ত্র ঠিক থাকলে তা আমাদের চেহারায়ও প্রকাশ পায়। নিয়মিত আদা-পানি খেলে ব্রণ, র্যাশসহ ত্বকের নানা সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

সূত্র: কালের কণ্ঠ