তানোরে জেলা প্রশাসকের নামে সাইনবোর্ড বসিয়ে বোরোর জমিতে পুকুর খনন


তানোর প্রতিনিধি :
এবার রাজশাহী জেলা প্রশাসকের নামে সাইনবোর্ড সাটিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে। তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের হাড়দহ বিলে বোরো ধানের জমিতে স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতির নামে খোদ জেলা প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে ও সাইনবোর্ড বসিয়ে চলছে পুকুর খনন।

যদিও জেলা প্রশাসন বলছেন, জেলা প্রশাসক কাউকে পুকুর খনন করতে অনুমতি দেয়নি। আর যদি কেউ ব্যানার বা সাইনবোর্ড মেরে সেখানে জেলা প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে পুকুর খনন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এমন কি এধরনের কর্মকাণ্ডে খোদ জেলা প্রশাসন চরম বিব্রতকর অবস্থায় আছেন বলেও মন্তব্য করেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তানোর উপজেলার চান্দুড়িয়া ইউনিয়নের হাড়দহ বিলের বোরো ধান কৃষকরা কেটে ঘরে তুলেছেন। গত ১০ মে হঠাৎ করে রাজশাহী স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতি, নিবন্ধন নম্বর ১৬০৭, পক্ষে জেলা প্রশাসক নামে একটি সাইনবোর্ড বসিয়ে ওই বিলে শুরু করা হয়েছে পুকুর খনন। নাম দেয়া হয়েছে রাজশাহী স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতির লিমিটেডের প্রজেক্টে-(২)। এখানে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ বিঘা জমির উপর এই পুকুর খনন করা হচ্ছে। খোদ জেলা প্রশাসকের নামে সাইনবোর্ড সাটিয়ে বোরোর জমিতে পুকুর খননের খবর ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টিও হয়েছে। একই সাথে এ নিয়ে জেলা প্রশাসন নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। আদৌ কি জেলা প্রশাসক এই পুকুর খনন করার অনুমতি দিয়েছেন, নাকি জেলা প্রশাসনের নাম ভাঙ্গিয়ে পুকুর খনন করা হচ্ছে।

স্থানীয়রা বলছেন, জেলা প্রশাসকের নামে সাইন বোর্ড সাটানোর পর তারা অনেকটা অবাক হয়ে গেছেন। অনেকেই বলছেন, কৌশল হিসাবে সাইনবোর্ডটি মারা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের নাম ব্যবহার করলে লোকজন বা থানা এমন কি উপজেলা প্রশাসনও কোনো বাধা দিবে না। এতে নির্দিধায় অবৈধভাবে কৃষি জমিতে এই সমিতি পুকুর খনন করতে পারবে।

স্থানীয় কৃষকরা জানান, তানোরের চান্দুড়িয়া ইউপিতে অনেক জমিতে পুকুর খনন হয়েছে এবং হচ্ছে। হাড়দহ বিলে তিনটি করে ফসল হয়। বর্তমানে ৪০-৪৫ বিঘা জমি ফাঁকা আছে। এবার সেখানে শুরু হয়েছে পুকুর খনন। পুকুর হলে আশপাশে কৃষি জমি থাকবে না। আবার বর্ষা বন্যা মৌসুমে হড়দহ বিলে যেসব মৎস্যাজীবি মাছ শিকার জীবিকা নির্বাহ করত সেটাও বন্ধ যাবে। যেখানে পুরাতন পুকুর সংস্কার করতে হলে অনুমতি নিতে হয়, সেখানে বোরোর জমিতে দাপটের সাথে পুকুর খনন করা হচ্ছে তাও আবার জেলা প্রশাসনের নামে। অথচ প্রশাসন রহস্য জনক কারণে কিছু করছে না। কারণ একটাই সাইনবোর্ডে পক্ষে জেলা প্রশাসক লিখা রয়েছে। মুলত এজন্য উপজেলা পর্যায়ের প্রশাসন কিছুই করছে নাএমনটা অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতিটি হলো রাজশাহী জেলার বাগমারা উপজেলার। এর প্রধান পৃষ্টপোষক ও সম্পাদক বাগমারার তাহেরপুর পৌরসভার আব্দুর রাজ্জাক বাবু ওরফে আর্ট বাবু নামে এক ব্যক্তি। তিনি বাগমারা এলাকার সর্বহারার সদস্য ছিলেন প্রধান ছিলেন। ২০১৯ সালের ১ এপ্রিল সরকার এসব বিপদগামী সর্বহারাদের আত্মসমার্পনের আহ্বান জানালে আর্ট বাবুসহ আশপাশের জেলার ৪০ জন সর্বহারার সদস্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে আত্মসমর্পন করে অস্ত্র জমা দেন। আত্মসমার্পনের পর আর্ট বাবু স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতি তৈরি করেন। এই সমিতির নিবন্ধন নিয়ে ও জেলা প্রশাসকের নাম ব্যবহার করে তিনি এখন কৃষি জমিতে পুকুর খনন করছেন। বর্তমান তিনি উপজেলা কৃষক লীগের পদস্থ নেতাও।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলা হয় আর্ট বাবুর সাথে। আব্দুর রাজ্জাক বাবুর তিনি বলেন, এটি একটি প্রজেক্ট যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় থেকে দেয়া হয়েছে। আত্মসমার্পন করা সর্বহারাদের পুনবাসনের জন্য সরকার এই প্রজেক্ট অনুমোদন দিয়েছেন। এই প্রজেক্ট চরম পন্থীদের আত্মকর্মসংস্থানের জন্য দেয়া হয়েছে। এখানে মাছ চাষ. গবাদি পশু পালন ও কৃষি কাজ হবে। প্রজেক্টের মধ্যে পুকুর খননের অনুমতি আছে কি না জানতে চাইলে তিনি অনুমতি আছে বললেও কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেন নি।

এব্যাপারে অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব যুগ্ন সচিব) ইমতিয়াজ হোসেনের বলেন, জেলা প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে পুকুর খনন এটা পুরোটাই অবৈধ। তিনি পুকুর খনের জায়গার লোকেসন নেন এবং সাইনবোর্ড ও কৃষি জমির ছবি হটসআপে চান। তবে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে বলেও তিনি জানান।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক (ডিসি) শামিম আহম্মেদের কথা বলা হলে তিনি বলেন, স্বপ্নচাষ সমন্বিত কৃষি সমবায় সমিতিটি হচ্ছে জেলার বাগমারা উপজেলার চরম পন্থীদের। সরকারের কাছে আত্মসমর্পন করেছিল তারা। সরকার তাদের পুনর্বাসনের জন্য সমিতি করে দেয়। আর আমি সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে সমিতি দেখভাল করি।

কিন্তু কৃষি ফসলী জমিতে পুকুর খননের কোন অনুমতি দেয়া হয়নি। পুকুর খননের জায়গাতে বা কৃষি জমিতে সমিতি যে সাইনবোর্ড মেরেছে সেখানে পক্ষে জেলা প্রশাসক লিখা আছে জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা অবৈধভাবে সাইনবোর্ডটি সাটানো হয়েছে। সাইনবোর্ডেও সাথে জেলা প্রশষাসনের কোনো সম্পর্ক নাই। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে বলেও জানান তিনি।