ঠিকাদার নির্ধারণ করতেই তিন বছর: মহানন্দায় স্বপ্নের ‘রাবার ড্যাম’ প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে কী?

নিজস্ব প্রতিবেদক, চাঁপাইনবাবগঞ্জ: চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দা নদীর নাব্য ঠিক রাখতে ড্রেজিং ও ভাঙন রোধে রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়। এ জন্য ১৮৭ কোটি ৩১ লাখ ৬৩ হাজার টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করে প্রকল্প প্রক্রিয়াকরণ করে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সেচ উইংয়ের সংশ্লিষ্ট সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ করার কথা। কিন্তু তিন বছরে তিনবার টেন্ডার আহ্বান করেও ঠিকাদার ঠিক করতে পারেননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ফলে প্রধানমন্ত্রী প্রতিশ্রুত এ প্রকল্পটি ৯ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পাউবোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এর আগে টেন্ডার মূল্যায়নে ঢাকার দুটি প্রতিষ্ঠানের একটি যৌথ ভেঞ্চারকে যোগ্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হলে দর প্রস্তাব বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহ্বানের নির্দেশ দেয়। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার প্রেক্ষিতে ১০ আগস্ট মহানন্দায় রাবার ড্যাম প্রকল্পের চতুর্থ দফার দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত পাউবোর সদর দফতর ঢাকার মতিঝিলে অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দফতরে দরপত্র জমা নেয়া হবে। ওইদিনই খোলা হবে দরপত্র। মূল্যায়নের পর ঠিকাদার নির্বাচন করা হবে। প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর।

সূত্র মতে, ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পটির প্রক্রিয়াকরণ শুরু হয়। পরিকল্পনামন্ত্রীর সম্মতিতে এর প্রক্রিয়াকরণের কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট বিভাগ। এ নিয়ে ওই বিভাগের সেচ উইংয়ে অ্যাপ্রেইজাল সভাও অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য, প্রকল্প এলাকার বাস্তব অবস্থা ও আয়-ব্যয় সম্পর্কে প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়। প্রস্তাবনায় বলা হয়, এ প্রকল্পের ফলে মহানন্দা নদীর প্রবাহ ও নিষ্কাশন সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কৃষি কাজে আট হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা বৃদ্ধি পাবে। এতে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকার কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে। এছাড়াও এতে ২ কোটি ৩৭ লাখ টাকার মৎস্য উৎপাদনের মাধ্যমে এলাকার জনগণের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। প্রস্তাবনায় আরও বলা হয়, মহানন্দা নদীটি ভারত থেকে উৎপন্ন হয়ে বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শহর থেকে প্রায় ৫০ কিলোমিটার উত্তরে ভোলাহাট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে গোমস্তাপুর, শিবগঞ্জ, নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ হয়ে রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে পদ্মা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। নদীটির বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ প্রায় ৯৫ কিলোমিটার। বর্তমানে নদীতে পলি জমে এর নাব্য হ্রাস, নদীর প্রশস্ততা ও প্রবাহ কমে গেছে। ফলে নৌ-চলাচল, মৎস্য চলাচল ও মৎস্য চাষে অসুবিধা হচ্ছে। এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে নদীতে পানি হ্রাস পাওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নেমে যায়। ফলে গভীর-অগভীর নলকূপ দ্বারা সেচ কাজ ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে। এ জন্য ২০১১ সালের এপ্রিলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদীটির খননকাজ বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দেন। সে অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ব্যবস্থা নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে নির্দেশনা দেয়া হয়। এ জন্য গঠিত কারিগরি কমিটির সুপারিশ অনুসারে প্রকল্পের মধ্যে নদী খননের পাশাপাশি বাঁধ নির্মাণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

পরে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পরিকল্পনা কমিশনে এ সংক্রান্ত পিইসি সভা হয়। এ জন্য প্রয়োজনীয় সমীক্ষা চালানোর জন্য আইডব্লিউএমকে নিয়োগ দেয়া হয়। সে সময় আইডব্লিউএম এ সংক্রান্ত চূড়ান্ত ফিজিবিলিটি স্টাডি ও ইআইএ প্রতিবেদন দাখিল করে। তার ভিত্তিতেই প্রকল্পটির পরিকল্পনা সম্পন্ন করা হয়। প্রকল্পের পরিকল্পনায় বলা হয়, ৩৬ কিলোমিটার নদী খনন, প্রায় সাত হেক্টর জমি অধিগ্রহণ, রাবার ড্যাম নির্মাণ, ওয়াকওয়ে নির্মাণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম থাকবে এ প্রকল্পের অধীনে। প্রকল্পটিকে লাভজনক হিসেবে উল্লেখ করে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ১০ কোটি ৭৫ লাখ, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪৯ কোটি ১৬ লাখ, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সাড়ে ৬০ কোটি এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে ৬৬ কোটি ৮৯ লাভ টাকা অর্থায়নের জন্য চাহিদা চাওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এতে ১৮৭ কোটি ৩২ লাখ টাকা অর্থায়ন করতে হবে প্রকল্পটির জন্য।

এ বিষয়ে পাউবোর চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আতিকুর রহমান জানান, প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্পের টেন্ডার পুনরায় আহ্বান করা হয়েছে। এর আগের তিনটি টেন্ডারে উপযুক্ত ও যোগ্য দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠান পাওয়া যায়নি। ফলে এবার বিদেশি প্রতিষ্ঠানেরও অংশগ্রহণের সুযোগ রেখে টেন্ডারের শর্তাবলি সংশোধন করা হয়েছে। দেশি-বিদেশি যৌথ ভেঞ্চারেও টেন্ডারে অংশ নেয়ার শর্ত যুক্ত করা হয়েছে। আশা করছি এবার প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষম ও যোগ্য প্রতিষ্ঠান পাওয়া যাবে।

স/রি