জাতিসংঘে মার্কিন দূতের কণ্ঠে ট্রাম্পের উল্টো সুর

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংকট নিরসনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একক রাষ্ট্রের নীতি বেছে নেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি এ ঘোষণা দেন। কিন্তু এর একদিন পরেই জাতিসংঘে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত নিকি হ্যালির কণ্ঠে উল্টো সুর। তার দাবি, যুক্তরাষ্ট্র দুই রাষ্ট্র সমাধানকে পুরোপুরিভাবে সমর্থন করে।

 

বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) নিকি হ্যালি আরও জানান, ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন যেন শান্তিচুক্তিতে পৌঁছায় সেজন্য নতুন পথের কথা ভাবা হচ্ছে। ইসরায়েল-ফিলিস্তিন বিরোধের বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এক বৈঠকের পর তিনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অংশ হিসেবে ফিলিস্তিনকে সমর্থন জানানোর দুই দশকেরও পুরনো নীতি থেকে আমেরিকা সরে এসেছে বলাটা ভুল হবে।

 

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে দুই রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি মার্কিন সমর্থন ধরে রাখার বিষয়টি তিনবার পুনরাবৃত্তি করেন নিকি হ্যালি। তিনি বলেন, ‘আমরা পুরোপুরিভাবেই দুই রাষ্ট্র সমাধানকে সমর্থন করি। তবে পাশাপাশি বৃত্তের বাইরে গিয়েও অন্যকিছু ভাবছি।’

 

ব্যতিক্রম পন্থায় ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনকে এক টেবিলে এনে আলোচনায় বসানোর জন্য সহায়তা করতে যুক্তরাষ্ট্র বরাবরই আগ্রহী বলেও জানান নিকি হ্যালি। এর আগে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রক্রিয়ার জন্য জাতিসংঘের দূত নিকোলাই ম্লাদেনভ জোর দিয়ে বলেন, ফিলিস্তিনি ও ইসরায়েলিদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণ করে দেওয়াই দুই রাষ্ট্র সমাধানের পথ খোলা রাখার একমাত্র উপায়।

 

নিকি হ্যালির অভিযোগ, জাতিসংঘে ইসরায়েলবিরোধী পক্ষপাতিত্ব রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবার আলোচনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কিছুটা অদ্ভুত হিসেবে তা উল্লেখ করেন তিনি। তখন ইরান কিংবা হিজবুল্লাহ জঙ্গিদের ছোঁড়া রকেটের বিষয়টি মোটেও উল্লেখ করা হয়নি। কিন্তু আলোচনায় ইসরায়েলের সমালোচনা ও মধ্যপ্রাচ্যে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সবার মনোযোগ ছিল তার কাছে লক্ষণীয়। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার প্রশাসনের মেয়াদের শেষ সপ্তাহে গৃহীত ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনের সিদ্ধান্তকে ভয়ানক ভুল হিসেবে বর্ণনা করেন তিনি।

 

হোয়াইট হাউসে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে নিয়ে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, এক রাষ্ট্র সমাধানের দিকে তাকিয়ে আছেন তিনি। এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক ঐক্যমত্য ও যুক্তরাষ্ট্রের পুরনো নীতি থেকে সরে এলেন তিনি। অর্থাৎ ফিলিস্তিনিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গড়ার অঙ্গীকার ভেঙে ফেললেন ট্রাম্প। এ কারণে মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ নীতিতে পরিবর্তন আসবে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের। ফলে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন অবস্থানের সমালোচনা চলছে।

 

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিচালিত এক জরিপে বৃহস্পতিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) জানা গেছে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এতোদিন সমর্থন জানিয়ে আসা ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিরা মত পাল্টেছেন। বেশিরভাগ মানুষই সামগ্রিকভাবে দুই রাষ্ট্র সমাধানকে প্রাধান্য দিচ্ছে। এর পক্ষে এখন আছে ৫৫ শতাংশ ইসরায়েলি ও ৪৪ শতাংশ ফিলিস্তিনি। তবে মাত্র ২৪ শতাংশ ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের এক-তৃতীয়াংশ একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে গুরুত্ব দিয়েছে। তেল আবিব ইউনিভার্সিটি ও ফিলিস্তিনি সেন্টার ফর সার্ভে রিসার্চের এক জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন