চিকিৎসার নামে সান্তাহারের আপ্রকাশির পরিচালক স্বপরিবারে আত্মগোপনে

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ

চিকিৎসার নাম করে আমানতকারীদের মারপিট, ভাংচুর ও তোপের মুখে স্বপরিবারে আত্মগোপন করেছেন  সান্তাহারের আপ্রকাশি সেভিংস এন্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড  মাল্টিপারপাসের নিবার্হী পরিচালক এস এম জুয়েল। এ অবস্থায় রোববার ওই মাল্টিপারপাসের নিবার্হী পরিচালকের ষ্টার হোটেল তালা ভেঙে দখলে নিয়েছেন দেড় শতাধিক নারী আমানতকারী।

 

পাওনা টাকার জন্য ইতোমধ্যে এস.এম জুয়েলের পরিবারের প্রায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান ও জায়গা জমি দখল ও রেজিষ্ট্রি করে নিয়েছেন প্রভাবশালী আমানতকারিরা। কোন কিছু না পাওয়ায় বর্তমানে চরম হতাশায় দিনাতিপাত করছেন সাধারন আমানতকারীরা।

সান্তাহার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ও আ’লীগ নেতা আসলাম শিকদার সিল্কসিটি নিউজকে জানান, ২০০৯ সালে নওগাঁ জেলা সমবায় অফিস থেকে নিবন্ধন করে দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন শহর সান্তাহারে আপ্রকাশি সেভিংস এন্ড ক্রেডিট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। ঋণ কার্যক্রমের পাশাপাশি প্রতিলাখে মাসে ২হাজার টাকা সুদ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন শ্রেণী পেশার প্রায় ২৩’শ মানুষের কাছ থেকে ৬০ কোটির ও অধিক টাকা আমানত হিসেবে গ্রহন করে এই সোসাইটির নিবার্হী পরিচালক এস এম জুয়েল ।

নারী আমানতকারী টাকা উত্তোলন কমিটির আহবায়ক রাবেয়া আক্তার বৃষ্টি বলেন, সবাই যে যার মতো করে এস এম জুয়েলের সম্পদ দখল করে নিচ্ছে। আমরা দেড় শতাধিক নারী একটি কমিটি করে হোটেল স্টার দখল করে নিয়েছি। আমাদের জমাকৃত প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা ফেরত দিলে আমারা হোটেলটি ছেড়ে দিব।
একেকজন সদস্যের আামানতের পরিমাণ ৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৬০ লাখ টাকা পর্যন্ত রয়েছে বলেও দাবি করেন গ্রাহকরা। কিন্তু ব্যবসা জমে উঠায় বিভাগীয় পর্যায়ে কার্যক্রম চালানোর অনুমতি নিয়ে নওগাঁ, বগুড়া, নাটোর, জয়পুরহাট জেলা মিলে মোট ১২টি শাখা অফিস চালু করে এই প্রতিষ্ঠান। কিন্তু হঠাৎ করে গত বছরের ডিসেম্বর মাস থেকে সুদ আসল কোন কিছুই না দিয়ে বিভিন্ন তাল বাহানা শুরু করায় এই প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই হাজার আমানতকারি চরম হতাশ ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
সোসাইটির অফিস ও  নিবার্হী পরিচালক এস এম জুয়েল এর বাসায় ধর্না দিয়ে ও টাকা না পেয়ে প্রভাবশালী আমানতকারিদের কেউ কেউ  ষ্টার চাইনিজ হোটেল, আপ্রকাশি খামার বাড়ি, ষ্টার গিফট কর্ণার, ষ্টার আবাসিক হোটেল,জায়গা, জমি ও ব্যবহৃত গাড়ি দখলে নিয়েছেন। সবশেষ রোববার দুপুরে আমানতকারি মোছা: বৃষ্টির নেতৃত্বে তালা ভেঙে ষ্টার হোটেল দখলে নিয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক নারী আমানতকারী।
অন্য আমানতকারীরা করছেন হা-হুত্তোশ। ইতোমধ্যে টাকার শোকে হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছেন এক আমানককারী। গ্রাহকদের চাপের মুখে গত ২৭ জুলাই ৫২ জন ক্ষুদ্র গ্রাহকদের মাঝে সাড়ে চার লাখ টাকা ফেরত দেয় জুয়েল।

 

এতে করে অন্য গ্রাহকরা আশান্বিত হয়েছেন। কিন্ত জুয়েলকে মারপিটের ঘটনা গ্রাহকদের ফের হতাশায় ফেলেছে। গত ৪ আগষ্ট রাতে পাওনা টাকা চেয়ে না পেয়ে ক্ষুব্ধ গ্রাহক ও তার লোকজন এসএম জুয়েলকে পিটিয়ে আহত করে। ওই রাতেই তাকে চিকিৎসার জন্য নেয়া হয়েছে ঢাকার একটি হাসপাতালে। চিকিৎসার নাম করে জুয়েলের পরিবার এরই মধ্যে আত্মগোপন করেছে বলেও দাবি করেছেন গ্রাহকরা।

 

ঈদুল ফিতরের আগে এক সপ্তাহ আগে আমানতকারীদের প্রত্যেককে মাত্র ১ হাজার করে টাকা দেয়ার উদ্দ্যোগ নেয়া হলে এতে আরো ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে আমানতকারীরা। তারা এই মাল্টিপারপাসের প্রধান কার্যালয় ও এস এম জুয়েলের বাসায় গিয়ে ভাংচুর চালায়। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ঈদের আগেরদিন রাতে স্বপরিবারে আত্মগোপন করেছেন এস এম জুয়েল।
নিবার্হী পরিচালক এস এম জুয়েলের বোন রেবেকা সুলতানা রানু বলেন, আমার ভাই কোনো আমানতকারীর টাকা আত্মসাত করেননি। আত্মসাতের ইচ্ছে থাকলে টাকা দেয়া শুরু করতেন না। কিন্ত যে হামলা, ভাংচুর, মারপিট করা হচ্ছে তাতে আমাদের কোন নিরাপত্তা নেই।
এখন পর্যন্ত পাওনা টাকা উদ্ধার কিম্বা জুয়েলের ওপর হামলা, মারপিটও ভাংচুর সংক্রান্ত বিষয়ে কোন পক্ষই আইনের আশ্রয়ে যাননি বলে জানিয়েছেন নওগাঁ সদর থানার ওসি তরিকুল ইসলাম।
আমানতকারীর ডা: আফরিন আরা লিন্ডা, বৃষ্টি আকতার,শাহিনুর, ইদ্রিস আলী প্রমুখ  আশংকা  করে বলছেন, এই পরিস্থিতিতে এসএম জুয়েল আমানতকারীদের টাকা আত্মসাত করতে যে কোন মুহুর্তে দেশ ত্যাগ করতে পারে। এ অবস্থায় আমানতকারীরা তাদের কষ্টার্জিত টাকা ফেরত পেতে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এ ব্যাপারে এসএম জুয়েলের সাথে মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করে ও তাকে পাওয়া যায়নি।

 

স/আর