ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত

বৈশ্বিক মহামারী করোনার বিপর্যয় মোকাবেলা করে ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত। সচল হয়ে উঠছে এ খাতের ব্যবসা-বাণিজ্য। প্রাণ ফিরছে এখানকার পর্যটনে।

মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকের আগমন ঘটছে উল্লেখযোগ্য হারে। পর্যটকদের আগমন ঘিরে নিরাপদ ভ্রমণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি নিয়েছেন পর্যটন ব্যবসায় সংশ্লিষ্টরা।

বর্ষার পর শরৎ-হেমন্তের শেষে উঁকি দিচ্ছে শীত। ধীরে ধীরে কমছে উষ্ণতার তেজ। ডানা মেলেছে পাহাড়ের নৈসর্গিক প্রকৃতির সৌন্দর্য। হাতছানি দিচ্ছে সবুজ পাহাড়, কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জল আর পাহাড়ি ঝরনাগুলো।

কখনও কখনও দোলা দিয়ে যাচ্ছে মৃদুমন্দ হিমেল হাওয়া। অরণ্য, পাহাড়, ঝরনা আর হ্রদের শহর রাঙ্গামাটি এখন পুরোদমে প্রস্তুত পর্যটকদের বরণে। সাড়া মিলছে প্রকৃতিপ্রেমী আর ভ্রমণপিপাসু মানুষের।

এলোমেলো সারিতে সাজানো উঁচু-নিচু আর ছোট-বড় অসংখ্য পাহাড়ের সমাবেশ। যেদিকে চোখ যায় স্বচ্ছ জলরাশি আর বিস্তীর্ণ সবুজের হাতছানি। সবুজ পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে রয়েছে অসংখ্য উচ্ছ্বল ঝর্ণাধারা।

নৈসর্গিক লীলাভূমি পাহাড়ি জনপদ রাঙ্গামাটি যেন শিল্পীর হাতে আঁকা নিখাঁদ জীবন্ত ছবি। তার সান্নিধ্য পেতে ছুটে যান প্রকৃতিপ্রেমীরা। এবার করোনা পরিস্থিতিতে সেই সম্পর্কে ছেদ পড়ে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মার্চ থেকে জুলাই পর্যন্ত পর্যটকশূন্য থাকায় মারাত্মক মন্দাভাব দেখা দেয় পর্যটন ব্যবসায়।

রাঙ্গামাটি চেম্বার অব কমার্সের মতে, করোনায় জেলায় পর্যটনের পাঁচটি খাতে দিনে গড়ে অন্তত সোয়া দুই কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। খরচ কমাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কর্মী ছাঁটাইয়ের মতো কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হয়েছে। কিন্তু সেই ক্ষত এখন শুকোতে শুরু করেছে। চাঙ্গা হতে শুরু করেছে পর্যটন ব্যবসা।

রাঙ্গামাটিতে পর্যটকদের মূল আকর্ষণ ৩৩৫ ফুট দৈর্ঘের মনোরম ঝুলন্ত সেতু ঘিরেই। তাই পর্যটকরা প্রথমেই ছুটে যান পর্যটন কমপ্লেক্স এলাকায়। বছরে প্রায় দুই লাখ দেশি ও বিদেশি পর্যটক সেতুটি দেখতে যান। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে পর্যটকদের উপচেপড়া ভিড় লেগে থাকে।

এছাড়া শহরের পুলিশের ‘পলওয়েল পার্ক’, জেলা প্রশাসনের ‘রাঙ্গামাটি পার্ক’, সেনাবাহিনীর ‘আরণ্যক’, বরকল উপজেলা প্রশাসনের ‘সুবলং ঝর্ণা’, জেলা পুলিশের সুখী নীলগঞ্জ এবং রাজবন বিহার এলাকায় প্রতিনিয়ত ভিড় জমান বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা। এছাড়া হালের আকর্ষণ ‘সাজেক ভ্যালি’ পর্যটকদের টানছে আরও অধিক।

হোটেল-মোটেল, রেস্টুরেন্ট (খাবারের দোকান), টেক্সটাইল (পাহাড়িদের তৈরি কাপড়), নৌযান এবং বিনোদন কেন্দ্রকে (ঝুলন্ত সেতুসহ বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান) ঘিরেই মূলত রাঙ্গামাটির পর্যটন খাত। রাঙ্গামাটি শহরে বেসরকারি ৫০ হোটেল-মোটেল রয়েছে।

প্রতিদিন তিন হাজার অতিথি হোটেল-মোটেলে থাকতে পারেন। পর্যটকদের সেবা দিতে এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন পাঁচ শতাধিক। এছাড়া রাঙ্গামাটির সাজেকে ১০৬টি কটেজ-রিসোর্ট রয়েছে। সেখানে ১২ শতাধিক শ্রমিক-কর্মচারীও আছেন।

জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ বলেন, সরকারের সিদ্ধান্ত মোতাবেক স্বাস্থ্যবিধি মেনেই জেলার পর্যটন স্পটগুলো খুলে দেয়া হয়েছে। পর্যটকরা অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘুরতে যাবেন। এটা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট পর্যটন কেন্দ্রের কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। এছাড়া স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রতিদিনই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে।

শুক্রবার দুপুরে ঝুলন্ত সেতু ও পলওয়েল পার্কে গিয়ে দেখা গেছে, মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ সাইনবোর্ড টানিয়ে দেয়া হয়েছে প্রবেশ মুখে। পর্যটকরাও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই সেখানে প্রবেশ করছেন।

ঝুলন্ত সেতুর টিকিট বিক্রেতা হাসান আহমেদ সোহেল জানান, শুক্র-শনিবারসহ সরকারি ছুটির দিনে গড়ে প্রায় দেড় হাজারের বেশি পর্যটক আসছেন।

নরসিংদী সদর থেকে বেড়াতে যাওয়া নাজমুল হাসান ভুইয়া (৩৫) জানান, রাঙ্গামাটিতে এই প্রথম বেড়াতে গেছেন তিনি। সঙ্গী আটজনের বহর। তিনি বলেন, চমৎকার প্রকৃতি রাঙ্গামাটির।

আরেক পর্যটক নরসিংদীর ব্রাহ্মণদি কেকেএম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক আল আমিন (৩৪) বলেন, রাঙ্গামাটি শহরের আবাসিক হোটেলগুলোতে লিফট, র্যাম্প দরকার। এছাড়া পর্যটন স্পটগুলো কেন বিখ্যাত তার ইতিহাস এতিহ্য নিয়ে ‘তথ্যফলক’ থাকলে সুবিধা হতো।

মৌসুমের শুরুতেই চোখে পড়ার মতো পর্যটকদের আগমন ঘটায় খুশি সংশ্লিষ্টরাও।

রাঙ্গামাটি আবাসিক হোটেল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মঈন উদ্দিন সেলিম বলেন, মৌসুমের শুরুতেই পর্যটকদের আগমন ঘটছে চোখে পড়ার মতো। তবে গত বছরের এ সময়ের চেয়ে এখনও কম। আশা করছি, গত পাঁচ মাসের লোকসান কমিয়ে আনতে পারব।

রাঙ্গামাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই মো. কামাল উদ্দিন বলেন, পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় ট্যুরিস্ট পুলিশ সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে।

রাঙ্গামাটি পর্যটন হলিডে কমপ্লেক্সের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, গত কয়েক দিন ধরে পর্যটকের আগমন শুরু হয়েছে। তবে গত বছরের এ সময়ের চেয়ে এখনও কম। বর্তমানে পর্যটন মোটেলের কক্ষগুলো প্রায় ৭০ ভাগ বুকিং আছে।