পুরাতন বছর

গ্রেফতার, জেল ও পরীমনির ঘুরে দাঁড়ানো

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:

বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু হয় ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়িকা পরীমনিকে নিয়ে আলোচনা। আলোচনার শুরুটা অবশ্য এই নায়িকা নিজেই করেন তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে এই খবর জানিয়ে। পরীমনি চলতি বছরের জুনে তার বিরুদ্ধে ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে সাহায্যের আবেদন করে নিজের ভ্যারিফাইড ফেসবুকে দীর্ঘ স্ট্যাটাস দেন।

এই ঘটনার কয়েকদিন আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিজের দুবাই ভ্রমণের ছবি ভক্তদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে শেয়ার করছিলেন তিনি। তাই হঠাৎ করে নায়িকায় এই স্ট্যাটাস নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়।

ওইদিন রাতেই বনানীতে নিজ বাসায় সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি সাংবাদিকদের জানান, ১০ জুন রাতে পারিবারিক বন্ধু অমি ও ব্যক্তিগত রূপসজ্জাশিল্পী জিমির সঙ্গে আশুলিয়ার একটি ক্লাবে যান তিনি। সেখানে তাকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন পরীমনি। থানাতে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি বলে দাবি করেছিলেন পরীমনি।

এর পর গত ৪ আগস্ট ফের ফেসবুক লাইভে এসে পরীমনি দাবি করেন তার বাসায় হামলা চালানো হয়েছে। তিনি সাহায্যও দাবি করেন। পরে জানা যায় পরীমনির বাসায় অভিযোগ চালিয়েছে র্যা ব। এ সময় তার বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ বিদেশি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের দামি মদ, মদের বোতলসহ অন্যান্য মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। ওই দিন রাত সোয়া ৮টার দিকে বনানীর বাসা থেকে পরীমনিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যা ব সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরে তার বিরুদ্ধে বনানী থানায় মাদক মামলা করা হয়। ওই মামলায় গত ৫ আগস্ট পরীমনিকে চার দিন ও ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দুদিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। পরে ১৩ আগস্ট পরীমনির জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ধীমান চন্দ্র মণ্ডল। আদালতের আদেশে ওই দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে পরীমনিকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। এর পর ওই কারাগার থেকে গত ১৯ আগস্ট তৃতীয় দফায় পরীমনিকে একদিনের রিমান্ডে ঢাকায় নেওয়া হয়। রিমান্ড শেষে ২১ আগস্ট পুনরায় পরীমনিকে কারাগারে পাঠানো হয়। ১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পান পরীমনি।

কারা মুক্তির দিনও পরীমনি কম চমক দেখাননি। ১ সেপ্টেম্বর কারামুক্তির দিন হাত মেহেদির রঙে রাঙিয়ে ছিলেন পরীমনি। সেখানে লেখা ছিল ‘ডোন্ট লাভ মি বিচ’। এছাড়া ১৫ সেপ্টেম্বর আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন হাতে মেহেদি দিয়ে আরেকটি সাহাসী বার্তা এঁকে। এ নিয়েও অবশ্য সামলোচনা কম হয়নি।

এদিকে ওই সব ঘটনার মাসখানেক পর ২৪ অক্টোবর নিজের জন্মদিন উপলক্ষ্যে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে জমকালো অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন পরীমনি। সেই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পরীমনির পোশাক ও নাচ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কম সমালোচনা হয়নি।

পরীমনির হাতে লেখা মেহেদির বার্তা আর জন্মদিনের সাজপোশাককে অশ্লীল দাবি করে ৩০ দিনের মধ্যে সেসব সরাতে সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার ও ঢাকা জজ কোর্টের আইনজীবী ইসমাতুল্লাহ লাকী তালুকদার পরীমনিকে আইনি নোটিশ পাঠান। পরীমনি অবশ্য সেই সব অভিযোগ গায়ে মাখেননি। উল্টো এসবের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়ে পরীমনি বলেছেন, গণমাধ্যমে নোটিশের বিস্তারিত তিনি দেখেছেন। নোটিশ হাতে পেলে বেশ কয়েকটি পক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান অভিনেত্রী। এরইমধ্যে নতুন সিনেমার জন্যও চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন এই নায়িকা। চয়নিকা চৌধুরীর নতুন ওয়েব চলচ্চিত্রে দেখা যাবে তাকে।

পরীমনির প্রকৃত নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। ১৯৯২ সালের ২৪ অক্টোবর সাতক্ষীরা জেলায় জন্ম তার। ছোটবেলা থেকেই নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন পরী। মেধাবী ছাত্রী ছিলেন তিনি। পঞ্চম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পেয়েছিলেন। তবে সিনে জগতের প্রবেশের আগে পরে তার একাধিক বিয়ে ও ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা শোনা যায়।

২০০৭ সালের দিকে পরীমনির মা আগুনে দগ্ধ হয়ে মারা যান। তার মৃত্যুর বিষয়টি অনেকটা রহস্যাবৃত। এরপর বাবার সঙ্গে সাভারে বসবাস শুরু করেন পরীমনি। পরীমনির বাবাও খুন হন। নানার কাছেই পরীমনি বেড়ে ওঠেন। ২০১৪ সালের দিকে তার সঙ্গে পরিচয় হয় কথিত প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজের। রাজই তাকে সিনেমায় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করেন। এরপর থেকে রাজের সার্বক্ষণিক সঙ্গী ছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে সিনেমায় নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় পরীমনির। তার প্রথম সিনেমা ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ওই বছরই মুক্তি পায়।

সে সময়ই সিনেমাপাড়ায় তাকে নিয়ে ঘটে যায় হুলুস্থুল কাণ্ড। প্রথম ছবি মুক্তির আগেই ১৯টি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন পরী। এরপর থেকেই শুরু হয় তার বেপরোয়া জীবন। নজরুলের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে বসবাস করতেন। সেখানে প্রভাবশালীদের যাতায়াত ছিল।

অভিনয় জীবন ছাড়া ব্যক্তিজীবন নিয়েও বিতর্কিত এ নায়িকা। ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ মামলায় পলাতক আসামি বিতর্কিত ব্যবসায়ী চলচ্চিত্র প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার আবদুল আজিজের সঙ্গেও তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আজিজ তাকে বিএমডব্লিউ গাড়ি উপহার দেন বলেও জানা গেছে।

এছাড়া ছবিতে অভিনয় করা কালেই তার সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের এক সংসদ সদস্যের ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। দীর্ঘদিন পরী তার ছত্রছায়ায় ছিলেন। বিভিন্ন কারণে সেই সংসদ সদস্যের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। তবে এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং কিছু শিল্পপতির সঙ্গে তার সখ্য গড়ে উঠে। শত বিতর্কের পরও ঘুরে দাঁড়িয়েছেন পরীমনি। নানা কার্মকাণ্ডের মাধ্যমে সাহসী বার্তাই ছড়িয়েছেন তিনি।-সূত্র : যুগান্তর