গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহেও উৎপাদনে পিছিয়ে পিডিবি

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক

গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন-সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অতিসম্প্রতি গ্যাসের পর্যাপ্ত সরবরাহ পাওয়া সত্ত্বেও সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারেনি বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। কাগজে-কলমে সক্ষমতার যে হিসাব দেখানো হয়, তার চেয়ে উৎপাদন অনেক কম।

পিডিবি থেকে অনেক সময় অভিযোগ তোলা হয়, চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ থেকে গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে না পারায় এ কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতার অর্ধেক বিদ্যুৎও উৎপাদন করা যায় না। এদিকে পেট্রোবাংলা সারা বছর পিডিবির চাহিদা অনুযায়ী গ্যাসের জোগান দিতে না পারলেও এবার ঈদের সময় পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করে, তা সত্ত্বেও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎ উৎপাদনে যেতে পারেনি পিডিবি। সঙ্গতকারণেই প্রশ্ন উঠেছে, পিডিবি সারা বছর গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতার যে হিসাব দিয়ে আসছে, সেটা গোঁজামিলের হিসাব কিনা?

এদিকে কেউ কেউ বলছেন, পিডিবি কাগজে-কলমে ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের হিসাব দিলেও কার্যত গড়ে ১২ থেকে ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। এর মধ্যে ভারত থেকে আমদানিকৃত প্রায় ২৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎও আছে।

পিডিবির ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, দেশে আট ধরনের জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। এগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২৮ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের সক্ষমতা মোট বিদ্যুৎ উৎপাদানের ৪৫ শতাংশ অর্থাৎ ১২ হাজার ২১৬ মেগাওয়াট। তবে গ্যাসভিত্তিক ডিরেটেড ক্যাপাসিটি হলো ১১ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট, যা সক্ষমতার ৪৪ দশমিক ২ শতাংশ। বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলার পরিচালক (অপারেশন)

মো. কামরুজ্জামান আমাদের সময়কে বলেন, এবারের ঈদ এবং ঈদ-পরবর্তী সময়ে বিদ্যুতে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ ছিল। তারপরও পিডিবি সর্বোচ্চ ৭ হাজার ১০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা জানিয়েছে। আমরা পিডিবিকে বলেছিলাম, চাইলে তারা বিদ্যুতে পর্যাপ্ত গ্যাসের সরবরাহ পাবে। সে ক্ষেত্রে পিডিবি তাদের আরও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালাতে পারত। তবে পিডিবি তাদের অভ্যন্তরীণ কোনো সমস্যার কারণে সরবরাহের সক্ষমতা থাকার পরও বেশি গ্যাস নেয়নি। একই কথা জানান জ্বালানি সচিব মো. নুরুল আলমও।

জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এপ্রিলে পিডিবির গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর জন্য গ্যাসের চাহিদা ছিল এক হাজার ২৯০ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে ঈদে শিল্প-কারখানাসহ অন্যান্য খাতে গ্যাসের চাহিদা কম থাকায় এবং এলএনজি সরবরাহ বেশি থাকায় পিডিবিকে প্রয়োজনের বেশি গ্যাসের সরবরাহ করা সম্ভব ছিল। এ সুযোগে তারা তাদের সক্ষমতার পুরো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রাখতে পারত। কিন্তু পিডিবি সেটা পারেনি।

এদিকে পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)-এর ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত ১৩ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুতের চাহিদার প্রেক্ষিতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ২৯০ মেগাওয়াট। এর মধ্যে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে সাত হাজার ৩২ মেগাওয়াট।

পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদন হিসাব ও সক্ষমতা নিয়ে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, পিডিবির হিসাব অনুযায়ী ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা। তবে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের মধ্যে অনেক পুরনো গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে। যেগুলো কার্যত অকার্যকর এবং অনেক পুরনো। ফলে পিডিবিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রের নতুন তালিকা করতে, যাতে প্রকৃত উৎপাদন সক্ষমতা নির্ধারণ করা যায়।

এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. শামসুল আলম বলেন, পিডিবির অনেক হিসাবই গোঁজামিলের। তারা একের পর এক গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বানিয়েছে। অথচ কোথা থেকে গ্যাস আসবে সেই হিসাব করেনি। গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে বলছে, গ্যাসের অভাবে উৎপাদন করতে পারছি না। পিডিবির বিরুদ্ধে কম খরচের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র বসিয়ে রেখে ব্যক্তি মালিকানাধীন কেন্দ্র থেকে বেশি দামে বিদ্যুৎ কেনার অভিযোগ আছে। এ ছাড়া পিডিবি উৎপাদন সক্ষমতার যে হিসাব দেয়, সেটাও সঠিক নয়।