গরম চা-কফি কি করোনা থেকে সুরক্ষা দিতে পারে?

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চা, কফি ও গরম পানি বেশ কার্যকরী বলে মনে করেন অনেকে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইন্টারনেটে এখন এ ধরনের অনেক দাবি ও পরামর্শ ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বিশেষ করে ঠাণ্ডার সময়ে এক কাপ গরম পানীয় হয়তো কিছুটা স্বস্তি বা আরাম দিতে পারে; কিন্তু করোনাভাইরাসের মতো কঠিন সময়ে কি এটি কোনো সহায়তা করতে পারে? গরম পানি পান করলে করোনাভাইরাস থেকে বাঁচা যায়- এ ধরনের ভুয়াবার্তা এতটাই ছড়িয়ে পড়েছে যে, ইউনিসেফ এ বিষয়ে একটি বিবৃতি দিতে বাধ্য হয়। তারা জানায়, এ রকম কোনো ঘোষণা তারা দেয়নি।

যুক্তরাজ্যের কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ রন একেলিস বলেছেন, গরম পানীয় ভাইরাসের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি। ঠাণ্ডা ও ফ্লুতে ভোগার সময় ঠাণ্ডা পানি খেলে কি ঘটে, তা নিয়ে অতীতে গবেষণা করেছেন একেলিস। তিনি দেখতে পেয়েছেন যে, ঠাণ্ডা লাগলে গরম পানীয় হয়তো খানিকটা স্বস্তি দিতে পারে। কারণ গরম পানীয় মুখ ও নাকের লালা এবং শ্লেষ্মার নিঃসরণ বাড়িয়ে দিতে পারে, যা প্রদাহ কমিয়ে দিতে পারে।

তিনি জানান, গরম পানি দিয়ে ভাইরাস দূর করা যায় বলে অনেক ভ্রান্ত বক্তব্য সামাজিকমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেসব কারণে সংক্রমণ হয়ে থাকে, সেই ভাইরাস মুক্ত করতে পারে না গরম পানীয়। পানি খেলে বা গার্গল করলেও এই ভাইরাস ধুয়ে যায় না।

এ ছাড়া কাশি বা হাঁচির মাধ্যমে ক্ষুদ্র আকারে এটি নাক বা মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করার পর মানুষকে সংক্রমিত করে থাকে।

প্রথমত এটি মানুষের ফুসফুসের কোষগুলোকে আক্রমণ করে। পরে কোষগুলো এমন একটি এনজাইম ব্যবহার করে, যা ভাইরাস ফুসফুসের ভেতরে প্রবেশ করে। শ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে এসব ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র ফোঁটা ফুসফুসের গভীরে পৌঁছে যায়- যেখানে মুখ থেকে যাওয়া যে কোনো তরল পৌঁছানো সম্ভব। গরম পানির গার্গলে গলার ভেতরের ভাইরাস মেরে ফেলা যায় না

একবার শরীরে প্রবেশ করার পর ভাইরাস খুব দ্রুত মানব শরীরের কোষের ভেতরে চলে গিয়ে নিজের অনেকগুলো কপি করতে তৈরি করে। ফলে এটিকে মুছে বা ধুয়ে ফেলার যে কোনো চেষ্টা থেকেই সেটি নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

অনেক ভুল পরামর্শে দাবি করা হয় যে, চায়ের মধ্যে বেশ কিছু উপাদান মিশ্রিত করা হলে সেটি করোনার বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে পারে। তবে এর পক্ষে বিজ্ঞানসম্মত কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তাই গরম পানীয়ের হয়তো অনেক ভালো দিক থাকতে পারে। তবে করোনা প্রতিরোধ করতে পারে এমন কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। করোনা থেকে নিজেকে রক্ষার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা, নিয়মিতভাবে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশাবলি মেনে চলা।

 

 

সুত্রঃ যুগান্তর