ক্ষমা মুমিনের অনন্য বৈশিষ্ট

ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। এটি প্রকৃত মুমিনদের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ ক্ষমাশীলদের ভালোবাসেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যারা মানুষকে ক্ষমা করে আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)

আল্লাহর রাসুল (সা.) ছিলেন অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তাঁর ওপর ব্যক্তিগত আক্রমণ হলে তিনি তার প্রতিশোধ নিতেন না। বরং ক্ষমা ও ভালোবাসার মাধ্যমে তাকে কাছে টেনে নিতেন। আনাস (রা.) বলেন, আমি নবীজির সঙ্গে হাঁটছিলাম। তাঁর পরনে ছিল মোটা কাপড়ের একটি নাজরানি (ইয়েমেনি) চাদর। এক বেদুইন তাঁর কাছে এসে সেই চাদর ধরে সজোরে টান দিল। আমি দেখলাম মোটা কাপড়ের ঘষায় নবীজির কাঁধে দাগ বসে গেল। লোকটি কর্কশ স্বরে তাঁকে বলল, ‘আল্লাহর যে সম্পদ তোমার কাছে আছে তা থেকে আমাকে কিছু দিতে বলো!’ নবীজি (সা.) লোকটির দিকে ফিরে তাকান এবং মুচকি হাসেন। এরপর তাকে কিছু দেওয়ার নির্দেশ দেন। (বুখারি, হাদিস : ৩১৪৯)

পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে ক্ষমাশীল মনোভাব অবলম্বনের তাগিদ দিয়েছেন। মানুষকে ভালোবাসা দিয়ে দ্বিনের দিকে আকৃষ্ট করার আদেশ দিয়েছেন। মূর্খদের থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন এবং মানুষকে ভালো বিষয়ের আদেশ করুন। আর মূর্খদের উপেক্ষা করুন।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)

আবদুল্লাহ ইবনে জুবায়ের (রা.) মহান আল্লাহর এই বাণী ‘আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন’ সম্পর্কে বলেন, রাসুল (সা.)-কে মানুষের চারিত্রিক দুর্বলতা ক্ষমা করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮৭)

এই আয়াত শুনে ওমর (রা.)-ও কঠিন রাগ নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমাশীলতার পথই অবলম্বন করেছেন। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, উয়াইনাহ ইবনে হিসন ইবনে হুজাইফাহ এসে তাঁর ভাতিজা হুর ইবনে কাইসের কাছে অবস্থান করলেন। ওমর (রা.) যাদের পার্শ্বে রাখতেন হুর নামক ব্যক্তি ছিলেন তাদের একজন। কারি, যুবক-বৃদ্ধ সবাই ওমর ফারুক (রা.)-এর মজলিসের সদস্য এবং উপদেষ্টা ছিলেন। এরপর উয়াইনাহ তাঁর ভাতিজাকে ডেকে বলেন, এই আমিরের কাছে তো তোমার একটা মর্যাদা আছে, সুতরাং তুমি আমার জন্য তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি নাও। তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি তাঁর কাছে আপনার প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করব।

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এরপর হুর উয়াইনাহর জন্য অনুমতি প্রার্থনা করলে ওমর (রা.) অনুমতি দিলেন। উয়াইনাহ ওমরের কাছে গিয়ে বলেন, হ্যাঁ, আপনি তো আমাদের অধিক অধিক দানও করেন না এবং আমাদের মধ্যে সুবিচারও করেন না। ওমর (রা.) রাগান্বিত হলেন এবং তাঁকে কিছু একটা করতে উদ্যত হলেন। তখন হুর বলেন, হে আমিরুল মুমিনিন! আল্লাহ তাআলা তো তাঁর নবী (সা.)-কে বলেছেন, ‘ক্ষমা অবলম্বন করো, সৎকাজের আদেশ দাও এবং মূর্খদের উপেক্ষা করো।’ আর এই ব্যক্তি তো অবশ্যই মূর্খদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর কসম! ওমর (রা.) আয়াতের নির্দেশ অমান্য করেননি। ওমর আল্লাহর কিতাবের বিধানের সামনে চুপ হয়ে যেতেন। (বুখারি, হাদিস : ৪৬৪২)

এভাবেই পবিত্র কোরআনের আদেশ পালন ও রাসুল (সা.)-এর অনুসরণের মাধ্যমে সাহাবায়ে কেরাম সোনার মানুষে পরিণত হয়েছেন। প্রিয় নবীর ক্ষমাশীলতা, উদারতায় মানুষ দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করেছে। প্রিয় নবীর মাঝে যদি এই মহৎ গুণ না থাকত, তাহলে এর চিত্র ভিন্ন রকমও হতে পারত।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর দয়ায় আপনি তাদের প্রতি বিনম্র থেকেছেন। আপনি যদি কর্কশ ও কঠোর মনের হতেন, তাহলে এরা সবাই আপনার চারপাশ থেকে বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ত। সুতরাং তাদের ক্ষমা করুন, তাদের মাগফিরাতের জন্য দোয়া করুন।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫৯)

অতএব আমাদের উচিত, ক্ষমাশীল হওয়া। ঘৃণা নয়, ভালোবাসা দিয়েই সব কিছু জয় করা। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ