কেন্দ্র সচিব এক প্রশ্ন আনতে গিয়ে পরবর্তী পরীক্ষার প্রশ্নও নিয়ে আসেন

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্কঃ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কারণে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডের চারটি বিষয়ের এসএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। এর আগে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্র সচিবসহ তিন শিক্ষককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

গতকাল বুধবার পরীক্ষা স্থগিত করা বিষয়গুলো হলো আজ বৃহস্পতিবারের গণিত, ২৪ সেপ্টেম্বরের পদার্থবিজ্ঞান, ২৫ সেপ্টেম্বরের কৃষি শিক্ষা ও ২৬ সেপ্টেম্বরের রসায়ন। নোটিশে এ তথ্য জানায় দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আবু বকর ছিদ্দীক বলেছেন, ভূরুঙ্গামারীতে প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার কারণেই এসব পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে একটি কর্মশালা শেষে তিনি এ বিষয়ে জানান।

গত মঙ্গলবার বিকেলে অভিযুক্ত তিন শিক্ষককে আটক করে ভূরুঙ্গামারী থানায় নেওয়া হয়। রাতে মামলার পর তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গতকাল বিকেলে আসামিদের কুড়িগ্রামের আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তার তিনজন হলেন ভূরুঙ্গামারীর নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব মো. লুত্ফর রহমান, একই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল ও খণ্ডকালীন শিক্ষক মাওলানা জুবায়ের হোসেন। মামলায় এই তিনজন ছাড়াও বিদ্যালয়টির কেরানি আবু হানিফ ও অজ্ঞাতনামা ১০ থেকে ১৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আবু হানিফ পলাতক। মামলার বাদী নেহাল উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আদম মালিক চৌধুরী। এ ছাড়া জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দুই শিক্ষক হামিদুল ইসলাম ও সোহেল আল মামুনকে থানায় নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সচিব আরো বলেন, আগের প্রশ্ন ফাঁস এবং এবারের প্রশ্ন ফাঁসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এবারের প্রশ্ন ফাঁসটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ কোথাও ছড়িয়ে পড়েনি। তিনি বলেন, ভূরুঙ্গামারীতে লকার থেকে প্রশ্ন আনার সময় এ প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটে। সেখানকার কেন্দ্র সচিব এক দিনের প্রশ্ন আনতে গিয়ে সঙ্গে পরবর্তী বিজ্ঞান পরীক্ষার প্রশ্নও নিয়ে আসেন। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে, নাকি কোনো ব্যক্তিকে সহায়তার জন্য প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা ঘটেছে, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে।

কুড়িগ্রামের পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম জানিয়েছেন, সুনির্দিষ্ট প্রমাণের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মামলাটি গুরত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। তিনি নিজেই তদন্তকাজ তদারকি করছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এজাহারে যা বলা হয়েছে

মামলার বাদী এজাহারে অভিযোগ করেছেন, ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষা শেষে মঙ্গলবার দুপুরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে কেন্দ্র সচিব লুত্ফর রহমানকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তিনি স্বীকার করেন, তাঁর কাছে পরের একাধিক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র রয়েছে। এরপর লুত্ফর রহমানের কক্ষে বইয়ের তাকে একটি কাপড়ের ব্যাগ পাওয়া যায়। এতে গণিত, রসায়ন, উচ্চতর গণিত, কৃষি শিক্ষা ও পদার্থবিজ্ঞানের প্রশ্নপত্রের প্যাকেট ছিল। এর মধ্যে একটি ছাড়া অন্য প্যাকেটগুলোর মুখ খোলা ছিল। প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব পূর্বপরিকল্পিতভাবে কৌশলে আবু হানিফের সহায়তায় প্যাকেটগুলো থানা থেকে কেন্দ্রে আনেন।

জানা গেছে, থানায় প্রশ্নপত্র বাছাইয়ের (সর্ট) সময় কেন্দ্র সচিব লুত্ফর রহমান কৌশলে চার বিষয়ের চারটি প্রশ্নপত্র সরিয়ে ফেলেন। পরে সেগুলো একটি পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের প্যাকেটে গোপনে ভরে নিয়ে আসেন। নির্দিষ্ট প্রশ্নপত্র কেন্দ্রে আনার সময় কেন্দ্রে দায়িত্বরত ট্যাগ অফিসার বোর্ডের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী পাঠানো প্রশ্নেপত্রের খাম গণনা করে থাকেন। কিন্তু এ সময় ট্যাগ অফিসার দায়িত্ব অবহেলা করে তা করেননি। পরে প্রধান শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষকের সহায়তায় ফাঁস করা প্রশ্নপত্রের উত্তর তৈরি করে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের মধ্যে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যে বিক্রি করেন। ঘটনাটি স্থানীয় সাংবাদিকদের নজরে এলে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক ও ভূরুঙ্গামারী ইউএনওকে জানানো হয়। তাঁরা প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেন। মঙ্গলবার ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মা, সহকারী পুলিশ সুপার মোর্শেদুল হাসান ও ওসি আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল প্রধান শিক্ষকের কক্ষে অভিযান চালিয়ে গণিত, কৃষিবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের প্রশ্নপত্র পায়। পরে বিকেলে পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুর রহমান ও প্রধান শিক্ষক লুত্ফর রহমানকে থানায় আনে। তবে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে শিক্ষক আমিনুর রহমান রাসেল ও জোবায়ের হোসাইনকে আটক করা হয়।

তদন্ত কমিটি

প্রশ্নপত্র ফাঁসের এ ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড। কমিটিকে সাত দিনের মধ্যে বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা হলেন (প্রধান) কলেজ শাখার পরিদর্শক ফারাজ উদ্দিন তালুকদার, উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক হারুন অর রশিদ এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শাখার উপপরিদর্শক আকতারুজ্জামান। বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. কামরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শামসুল আলম জানান, মামলায় অভিযুক্ত আসামি ছাড়াও দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কর্মকর্তার গাফিলতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ভূরুঙ্গামারী থানার ওসি আলমগীর হোসেন বলেন, ঘটনায় আরো কারো সম্পৃক্ততা থাকলে তাদেরও গ্রেপ্তার করা হবে।

পরীক্ষা স্থগিত হওয়ায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশা বিরাজ করছে।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ