কারাগার থেকে পালিয়ে ট্রেনে নরসিংদী

সিনেমা স্টাইলে চট্টগ্রাম কারাগারের নির্মাণাধীন ৪তলা ভবনের ছাদ থেকে কারা প্রাচীরের বাইরে লাফ দিয়ে পালিয়ে যায় হত্যা মামলার আসামি ফরহাদ হোসেন রুবেল। তাকে মঙ্গলবার সকালে নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করে সিএমপির কোতোয়ালী থানা পুলিশ। কারাগার থেকে পালিয়ে রুবেল ট্রেনে করে নরসিংদী চলে যায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মঙ্গলবার ফরহাদকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রাম নিয়ে এসে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয় এরপর তাকে কোতোয়ালী থানায় নিয়ে আসা হয় সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটে। থানার আশেপাশে উৎসুক মানুষ এবং গণমাধ্যমকর্মীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। কোতোয়ালী থানায় যখন তাকে আনা হয় তখন দেখা যায় রুবেলের এক পায়ে প্লাস্টার আর মুখমন্ডলে অসংখ্য দাগ এবং চোখ ফুলে রক্ত জমাট। ডান হাতে স্ট্রেচার ভর দিয়ে এবং পুলিশ সদস্যদের সহযোগিতায় তাকে হাঁটিয়ে আনতে দেখা গেছে।

এরপর কোতোয়ালী থানা প্রাঙ্গনে সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) পলাশ কান্তি নাথ বলেন, ‘চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়া হত্যা মামলার আসামি রুবেলকে নরসিংদী জেলার আদিয়াবাদ শেরপুর কান্দাপাড়া চরাঞ্চল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। রুবেল ৬ মার্চ ভোর ৫টা ১৫মিনিটে কারাগারের ওয়ার্ড থেকে নিচে নেমে ডান পাশের গেইট দিয়ে বের হয়ে ওই ভবন থেকে ২০০ গজ দূরে যায়’। ‘সেখানে একটি নির্মাণধীন ভবনের ৪তলার ছাদ থেকে লাফ দিয়ে নিরাপত্তা প্রাচীর টপকে অপর প্রান্তে বের হয়ে পড়ে। এরপর সকাল ১০টা নাগাদ চট্টগ্রাম থেকে ট্রেনযোগে ঢাকা হয়ে নরসংদী চলে যায়। মামলা হওয়ার পর সিএমপির পাঁচটি টিম দেশের বিভিন্ন স্থানে রুবেলকে গ্রেপ্তার করার জন্য অভিযান চালায়। অবশেষ মঙ্গলবার সকালে রুবেলকে তার ফুফুর বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

কারাগারের চারতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে ভাঙা পা নিয়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন থেকে কীভাবে নরসিংদী গেল, সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা পলাশ কান্তি বলেন, ‘রুবেলের পা ভাঙেনি। তার পায়ে ফ্র্যাকচার হয়েছে। তাকে এখনো জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়নি। কিছু বিষয় তদন্তের স্বার্থে গোপন রাখছি পরবর্তীতে তা জানানো হবে।’

তাকে পালাতে কেউ সহযোগিতা করেছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) বলেন, ‘রুবেল আগেও বিভিন্ন দুধর্ষ কাজ করত। সে ছিনতাইকারী। তার আগেও চারটি মামলা রয়েছে। তাকে এলাকার সবাই ভয় পায়। শারীরিকভাবে রুবেল খুবই সক্ষম। তার হাতে সবসময় চাকু থাকত।’

শনিবার সকালে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রুবেলের অনুপস্থিতির বিষয়টি নজরে আসে কারা কর্তৃপক্ষের। এ ঘটনায় কোতোয়ালী থানার সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর শনিবার রাতেই কোতোয়ালী থানায় মামলা করা হয়।

হাজতি ফরহাদ কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের পঞ্চম তলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ছিলেন এবং শনিবার ভোর সোয়া ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে তিনি ওয়ার্ড থেকে বের হয়ে যান বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। নিখোঁজ হাজতি রুবেল নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মীরেরকান্দি গ্রামেবাসিন্দা। সে নগরীর সদরঘাট থানার হত্যা মামলার আসামি। এ ঘটনায় ৮ ফেব্রুয়ারি ডবলমুরিং থানার মিস্ত্রিপাড়া থেকে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি কারাগারে ছিলেন।

এই ঘটনার জেরে গত রবিবার জেলার মো. রফিকুল ইসলাম ও ডেপুটি জেলার মোহাম্মদ আবু সাদতকে প্রত্যাহার করা হয়। এ ছাড়া মো. নাজিম উদ্দিন ও মো. ইউনুস নামে দুই কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করার পাশাপাশি কামাল হায়দার নামে এক কারারক্ষীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা করা হয়। এরপর গত সোমবার ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে কারাগারের অভ্যন্তরে, বিভিন্ন সেফটি ট্যাংক-নালা, ভবনের ছাদে তল্লাশি শুরু করে কেন্দ্রীয় কারা কর্তৃপক্ষের তদন্ত কমিটি।

সোমবার রাতে তদন্ত কমিটির প্রধান খুলনা বিভাগের ডিআইজি-প্রিজন ছগির মিয়া কারাগারের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করে জানিয়েছেন, হাজতি রুবেল কারা অভ্যন্তরে ফাঁসির সেলের পাশে নির্মাণাধীন চারতলা ভবনের ছাদে উঠে সেখান থেকে পালিয়ে যান।