করোনা, বন্যার শঙ্কায় হাওরের ধান দ্রুত উঠছে কৃষকের ঘরে

সাতটি জেলার হাওরাঞ্চলে ৩ মে পর্যন্ত ৮৬ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আর তিন-চার দিনের মধ্যেই হাওরের সব ধান কৃষকের ঘরে উঠে যাবে বলে জানিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পাহাড়ি ঢল, আগাম বন্যা হওয়ার আশঙ্কায় এবং করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে এবার প্রশাসন হাওরের ধান কাটার ওপর অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছে।

দেশের হাওরবেষ্টিত সাতটি জেলায় বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার টন, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগ। হাওরের ধান যেন এবার না হারাতে হয়, সে কারণেই প্রশাসনের এই গুরুত্ব। এর আগে বন্যায় হাওরের ধান ডুবে যাওয়ায় সেখানকার কৃষকরা যেমন দুর্ভোগে পড়েছিলেন, তেমনি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সক্ষম হয়নি সরকার।

boro_harvest

এবার বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের শুরু থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলে আসছেন, করোনার কারণে সারাবিশ্বে খাদ্য সংকট দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে বক্তব্য দেয়ার সময় দেশবাসীর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এক ইঞ্চি জায়গা যেন পতিত না থাকে। একটা সবজি গাছ, একটা ফল গাছ অর্থাৎ প্রতি ইঞ্চি মাটি যেকোনোভাবে যেন ব্যবহার হয়। উৎপাদিত সবজি নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে যেন অনেকে বিক্রি করতে পারে। দেশে খাদ্য উৎপাদন বেশি করতে পারলে আমরা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অন্যদের সহযোগিতা করতে পারব। এ ছাড়া হাওরের বোরো ধান যেন এবার কৃষকের গোলায় উঠে, সেজন্য কৃষিমন্ত্রীকে বারবার তাগাদা দিয়েছেন তিনি। সেখানে যেন কোনো শ্রমিক সংকট না হয়, সেজন্য তিনি শ্রমিক অধ্যুষিত জেলা প্রশাসকদের শ্রমিক পাঠানোর ব্যবস্থা করতে নিদের্শ দেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় এই নির্দেশ পাওয়ার পরপরই দ্রুত কাজ শুরু করে। হাওরের ধান কাটার জন্য জরুরিভিত্তিতে মোট ৩৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও এক হাজার ৫৬টি রিপার দেয়া হয়। করোনার কারণে অন্য শ্রমিকদেরও সেখানে ধানকাটতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগ ও কৃষক লীদের নেতাকর্মীরাও কৃষকের ধান কেটে দেন। সব মিলিয়ে কোনো আপদ-বিপদ ছাড়াই ৮৬ভাগ ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে।

boro_harvest

কৃষি সচিব মো. নাসিরুজ্জামান  বলেন, করোনা ও বন্যার আশঙ্কায় হাওরাঞ্চলের ধান দ্রুত ঘরে তোলার জন্য সরকার কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ধান কাটায় জরুরিভিত্তিতে ১৮০ কম্বাইন হারভেস্টার ও ১৩৭টি রিপার সরবরাহ করে। বর্তমানে হাওরাঞ্চলে ৩৬২টি কম্বাইন হারভেস্টার ও এক হাজার ৫৬টি রিপার কাজ করছে। এ ছাড়া সাত জেলায় হাওরের ধান কাটার জন্য ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থাসের বেকার শ্রমিকদের কাজে লাগানো হয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিক এনে দ্রুত ধান কাটার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সে কারণেই ইতোমধ্যে হাওরের ৮৬ শতাংশ ধান কাটা হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কন্ট্রোলরুমে দায়িত্বরত কৃষিবিদ রাশেদ ইফতেখার  বলেন, রোববার (৩ মে) সন্ধ্যা পর্যন্ত হাওরাঞ্চলে ৮৬ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। আর সারাদেশে ধান কাটা হয়েছে ২১ ভাগ।

boro_harvest

তিনি বলেন, মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হাওরের ধান কেটে কৃষকের ঘরে তোলার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করা হয়। আর তিন-চার দিনের মধ্যে হাওরের সব ধান কৃষকের ঘরে উঠে যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশের হাওরবেষ্টিত সাত জেলায় বোরো ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৭ লাখ ৪৫ হাজার টন, যা মোট লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২০ ভাগ। আশা করছি এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

 

সুত্রঃ জাগো নিউজ