শনিবার , ৯ মার্চ ২০১৯ | ৭ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরীর খবর
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ওবায়দুল কাদেরের চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসকের শ্বাসরুদ্ধকর বর্ণনা

নিউজ ডেস্ক
মার্চ ৯, ২০১৯ ৯:১৬ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অসুস্থ হওয়ার পর তাকে নিয়ে বিএসএমএমইউতে যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি কেটেছে তার বর্ণনা দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্ডিওলজি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. শেখ ফয়েজ আহমেদ।

ভোররাত থেকে হঠাৎ অসুস্থতা বোধ করছিলেন সেতু মন্ত্রী মহোদয়। পূর্বপরিচিত থাকায় বিএসএমএমইউ এর অধ্যাপক আবু নাসের রিজভী স্যার কে ফোন দেন। স্যার তৎক্ষণাৎ ছুটে যান তার বাসায়। গিয়ে দেখেন মন্ত্রী মহোদয় অত্যন্ত অসুস্থ। তাকে সকাল আনুমানিক পোনে আট-টায় বিএসএমএমইউ এর জেনারেল আইসিসিইউ তে নেয়া হয়। সাথে সাথেই কার্ডিওলজি বিভাগের চেয়ারম্যান স্যারকে অবগত করা হয়। আইসিসিইউ তে আসার পরপরই মন্ত্রী মহোদয়ের কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়।

আমাদের বিভাগের চেয়ারম্যান স্যার নিজহাতে তৎক্ষণাৎ কার্ডিয়াক মেসেজ দেয়া শুরু করেন, এবং তার রক্তে অক্সিজেন এর মাত্রা কমতে শুরু করায় অবিলম্বে এসিস্টেড ভেন্টিলেশন এর নির্দেশ দেন। জেনেরাল আইসিসিইউ এর ফুল টিম ( প্রফেসর, কনসালটেন্ট, মেডিকেল অফিসার, নার্স) ঝাপিয়ে পড়ে।

আল্লাহর রহমতে তিনি সেই মূহুর্তে কার্ডিয়াক এরেস্ট হতে ফিরে আসেন এবং তার হৃদপিন্ড পুনরায় কাজ করা শুরু করে, কিন্ত তিনি তখনও কার্ডিওজেনিক শকে ছিলেন। এই সময়ে কার্ডিওলজির চেয়ারম্যান স্যার সহ সকলেই সিদ্ধান্ত নেন এঞ্জিওগ্রাম করার। এঞ্জিওগ্রামে ধরা পরে RCA 100%, LAD 99% এবং LCX 80% ব্লক। এর মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ LAD তে স্টেন্টিং করা সম্ভব (উল্লেখ্য যে LAD হৃদপিন্ডের ২/৩ অংশ কে রক্ত সঞ্চালন করে)। কিন্তু বাকি ধমনী তে সেই মূহুর্তে স্টেন্টিং প্রায় অসম্ভব।

স্বাস্থ্যপ্রতিমন্ত্রী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি-প্রোভিসি-ট্রেজারার, বিএমএর সভাপতি, ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক, স্বাচিপের সভাপতি ও মহাসচিব, কার্ডিয়াক এর সকল প্রফেসর, আইসিইউ এর প্রফেসর বৃন্দ, বিভিন্ন বিভাগের চেয়ারম্যান ও আরো অনেকের উপস্থিতিতে এবং মন্ত্রীর সহধর্মিণী র অনুমতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় যে LAD তে স্টেন্টিং করা হবে।

স্টেন্টিং এর পর তাকে আইসিইউ তে পুনরায় নিবিড় পরিচর্যাতে রাখা হয়। প্রথম ঘন্টায় তার অবস্থার উন্নতি হলেও আস্তে আস্তে তার রক্তচাপ কমতে থাকে। অতপর মেডিকেল বোর্ডের নির্দেশে আনুমানিক বিকাল ৩টায় আইভিপি স্থাপন করে রক্তচাপ স্বাভাবিকে আনার চেষ্টা করা হয়।

সিরিঞ্জ পাম্পের মাধ্যমে ব্লাড প্রেশার, ব্লাড সুগার ও ইলেক্ট্রোলাইট নিয়ন্ত্রণ এর চেষ্টা চলতে থাকে। ইতমধ্যে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এর পরিচালক, ল্যাব এইড এবং ইউনাইটেড হাসপাতালের এর কার্ডিয়াক সার্জন ও অন্যান্য প্রফেসর গন আমাদের সাথে নিজ উদ্যোগে যোগ হন।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সেতুমন্ত্রীকে দেখতে এসে তাকে নাম ধরে ডাকলে তিনি তাতে সারা দিয়ে চোখ খোলার চেষ্টা করেন। প্রধানমন্ত্রী চলে যাওয়ার পর আমি তাকে স্যার বলে ডাক দিলে তিনি প্রথম চোখ খুলেন এবং ইশারা দেন। তারপর তার সহধর্মিণীর সাথে ঈশারায় কথা বলেন। এসময় তার সহধর্মিণী তাকে চিকিৎসার উদ্দেশ্যে সিংগাপুর নেয়ার কথা বললে উনি মাথা নাড়িয়ে না সম্বোধন করেন।

ধীরে ধীরে তার অবস্থার উন্নতি হতে থাকে। এরপর মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় স্পীকার তাকে দেখতে আসেন। একে একে অনেকেই তাকে এক পলক দেখতে আসেন, এর ফলে অতিরিক্ত দর্শনার্থী দের আগমনে ইনফেকশন এর আশংকা দেখা দেয়। যার ফলে তার WBC count ১১০০০ থেকে বেড়ে ১৮৫০০, পরবর্তীতে তা ২৬০০০ এ পৌছায়। অতিরিক্ত দর্শনার্থী দের সামাল দেয়া খুব কষ্টসাধ্য ছিল, তবুও পুলিশ এবং আমাদের প্রশাসন তা দক্ষভাবে সামাল দেয়ার চেস্টা করেন। এরই মাঝে সিংগাপুর থেকে একটা মেডিকেল টিম চলে আসে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় সিংগাপুর না নিয়ে বিএসএমএমইউতে তার পরবর্তী চিকিৎসা ও পরবর্তী দিনে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট খুলে ফেলার প্ল্যান হয়।

রাত আনুমানিক ৩টার দিকে তার খিচুনি হয়, এবং পরিস্থিতি তৎক্ষণাৎ সামাল দেয়া হয়। সকালে তার অবস্থা স্থিতিশীল ছিল, তবুও মেডিক্যাল বোর্ড তার ভেন্টিলেটর সাপোর্ট আরো ২-৩ দিন অব্যাহত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। অত:পর উপমহাদেশ এর স্বনামধন্য কার্ডিয়াক সার্জন ডা. দেবী শেঠী বাংলাদেশে আসেন। তিনি মন্ত্রী মহোদয় এর অসুস্থতার শুরু হতে সকল চিকিৎসার বিবরণ শুনে মন্তব্য করেন যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হৃদরোগ বিভাগ এর প্রদেয় চিকিৎসা ছিল বিশ্বমানের, ইউরোপ আমেরিকা গিয়েও এর থেকে বেশি কিছু করার নেই এবং এই চিকিৎসার ফলাফল হল মন্ত্রী সাহেবের বর্তমান স্থিতিশীল শারীরিক অবস্থা।

তিনি দেশে থেকে চিকিৎসা করালে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু প্রচুর দর্শনার্থী এবং সামগ্রিক পরিস্থিতে তার পরবর্তী চিকিৎসা এইখানে ব্যাহত হবার আশংকা থাকার কারনে সিংগাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে তাকে স্থানান্তর করার পরামর্শ দেন, এবং এটাও উল্লেখ করেন যে তার বর্তমান স্থিতিশীল পরিস্থিতে তাকে এয়ার এম্বুলেন্স এ সিংগাপুর নেয়া যেতে পারে। তারপর বাকিটা সবাই জানে।

সিংগাপুরে মাননীয় সেতুমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা এখন অনেকটাই ভালো। হার্টের কন্ডিশন ভালোর পথে। কৃত্তিম ভেন্টিলেটর খুলে ফেলা হয়েছে। ডাক দিলে রেসপন্স করছে।

দেশে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত উনার চিকিৎসার সাথে থাকতে পারাটা ছিল আমার পরম প্রাপ্তি, আর উনাকে সকলে মিলে বাচিয়ে রাখতে পারাটা আমাদের সকলের সাফল্য। স্যার সুস্থ হয়ে তাড়াতাড়ি আমাদের মাঝে ফিরে আসুক এই দোয়াই করি।

 

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর