এসপি মীজানের অবৈধ সম্পদ, দুদকের মামলা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

পুলিশ সুপার (এসপি) মীজানুর রহমান ও তাঁর স্ত্রী সালমা আক্তার ওরফে নীপ মীজানের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ বিষয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করেছে কমিশন।

পুলিশ সুপার পদমর্যাদার রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্সেসের (আরআরএফ) কমান্ড্যান্ট মীজানুর রহমানের নামে প্রায় এক কোটি ১৭ লাখ টাকা এবং তাঁর স্ত্রী নীপা মীজানের নামে দুই কোটি ৩২ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ আছে বলে দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর তেজগাঁও মডেল থানায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক মো. ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে মামলা দুটি দায়ের করেন। তেজগাঁও থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মামলার এজাহারে মীজানুর রহমানের নামে তাঁর নিজ জেলা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৯৮ লাখ ৪০ হাজার টাকার বাড়ি, ১৩.০৮ একর জমি, ঢাকার তেজকুনিপাড়ায় ১৮০০ বর্গফুট ও ১৭১৮ বর্গফুটের দুটি ফ্ল্যাট, ঢাকার জুরাইনে একটি দোকান, মিরপুরসহ বিভিন্ন মৌজায় তিন দাগে ১৫ শতাংশ জমি, উত্তরায় তিন কাঠার আরেকটি প্লটের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর নামে ব্যাংক হিসাবে নগদ ৯১ লাখ ১২ হাজার ৫৪৭ টাকা ও ৭৫ লাখ টাকার স্থায়ী আমানত, মোল্লা এনপিকেএস লিমিটেড সার কারখানার নামে দুই লাখ টাকার শেয়ারের তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মেঘনা ফার্টিলাইজার কম্পানি লিমিটেড, মেসার্স খোয়াজ ফার্টিলাইজার, ফার্ম নেস্ট অ্যান্ড মিল্ক প্রডাক্টস লিমিটেড ও একটি মাইক্রোবাসের মালিকানার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন।

অন্যদিকে মীজানুরের স্ত্রী নীপার নামে উল্লেখযোগ্য সম্পদের মধ্যে আছে ঢাকার মিরপুর মাজার রোডে তিনতলা ভবনসহ পাঁচ কাঠা জমি, দুই কাঠা জমিতে দোকান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে দোতলা বাড়িসহ ১০ শতাংশ জমি ও ৬৬ শতাংশ জমি, তেজকুনিপাড়ায় ১৮০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় ৫.৩৮ একর জমি এবং ব্যবসায়িক মূলধন ও নগদ অর্থসহ মোট সাত কোটি আট লাখ ৬৩ হাজার ৩৮৪ টাকার অস্থাবর সম্পদ।

সাভারের হেমায়েতপুরের আলীপুর ব্রিজসংলগ্ন ৮৪ শতাংশ জমির ওপর বাড়ি তৈরি ও ঢাকার মিরপুরের মাজার রোডের আলমাস টাওয়ারের পাশে আরো একটি বাড়ি নির্মাণে জোগালি ও শ্রমিক হিসেবে পুলিশের ৬০ সদস্যকে দিয়ে কাজ করানোর অভিযোগ ওঠে এসপি মীজানুর রহমানের বিরুদ্ধে। ২০১৬ সালে বিষয়টি অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়ে উপপরিচালক এস এম মফিদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে নকল সার কারখানা পরিচালনার অভিযোগ পাওয়া যায়। এটিও যুক্ত হয় অভিযোগ নথিতে।

এর আগে ২০১১ সালে মীজানুরের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করেন কমিশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয়ের তৎকালীন অনুসন্ধান কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মো. আমিরুল ইসলাম। অনুসন্ধানে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি চাকরিতে থাকা অবস্থায় স্ত্রীর নামে ব্যবসা পরিচালনাসহ নানা অভিযোগ পাওয়া যায়।

উল্লেখ্য, গত বছর কালের কণ্ঠে এসপি মীজানের নকল সার কারখানা নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ফসল উৎপাদনে বহুল ব্যবহৃত টিএসপি বা ট্রিপল সুপার ফসফেট সার নকল করার চারটি বড় কারখানার সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি কারখানা রয়েছে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আর অন্য দুটি ঢাকার অদূরে হেমায়েতপুরে। ওই চারটি কারখানায় প্রতিদিন এক হাজার টন নকল টিএসপি সার তৈরি করা হতো, যার দাম প্রায় এক কোটি ৪০ লাখ টাকা।

এ ছাড়া সাভারে বাড়ি নির্মাণে জোগালি ও শ্রমিক হিসেবে পুলিশের ৬০ সদস্যকে দিয়ে কাজ করানোর ঘটনায় কালের কণ্ঠে প্রতিবেদন ছাপা হয়।