এখনও অটুট হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের বিক্রি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: সমকালীন বাংলা সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক হুমায়ুন আহমেদের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকীতে সাহিত্য আলোচনাসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁকে স্মরণ করা হচ্ছে।

লেখকদের অনেকে বলেছেন, হুমায়ুন আহমেদের লেখা ছোটগল্প এবং জোছনা ও জননীর গল্প কিংবা নন্দিত নরকের মতো উপন্যাসগুলো বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে।

গত পাঁচ বছরেও তাঁর লেখা বই বিক্রি কমেনি বলে প্রকাশকরা বলছেন। নেত্রকোণায় জন্ম নেওয়া এই লেখক পাঁচ বছর আগে এই দিনে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় নিউইয়র্কে মারা যান।

সত্তর দশকের শুরুর দিকে হুমায়ুন আহমেদের প্রথম উপন্যাস নন্দিত নরকে প্রকাশিত হওয়ার পর বাংলাদেশ জুড়ে তা ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

এরপর তাঁর লেখনী তাঁকে জনপ্রিয়তার শীর্ষে নিয়ে যায়। বিপুল জনপ্রিয়তার কারণে তাঁকে সমালোচনারও মুখোমুখি হতে হতো অনেক সময়।

সতীর্থ লেখকদেরই অনেকে তাঁর লেখার গভীরতা এবং সাহিত্যমূল্য নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

তবে কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন মনে করেন হুমায়ুন আহমেদের লেখা বইয়ের প্রতি এখনও যেমন মানুষের আগ্রহে ভাঁটা পড়েনি, একই সাথে সাহিত্যবিচারেও তা টিঁকে থাকবে বলে তিনি মনে করেন।

“এক শ্রেণীর মানুষের ধারণা থাকে যে, জনপ্রিয় লেখক মানেই হালকা মেজাজের লেখক বা তাঁর লেখায় চটুলতা থাকবে। এসব কারনে ঐ শ্রেণীর মানুষ জনপ্রিয় লেখকদের নিয়ে নাক সিঁটকান।”

“কিন্তু হুমায়ুন আহমেদকে আমি শুধু একজন জনপ্রিয় লেখক হিসেবে দেখিনা। তাঁকে বাংলা সাহিত্যের একজন বড় লেখক হিসেবে মনে করি। কারণ তিনি এমন কিছু ছোটগল্প এবং উপন্যাস লিখেছেন, যেগুলো বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে”, বলছিলেন ইমদাদুল হক মিলন।

হুমায়ুন আহমেদ তাঁর লেখায় হিমু এবং মিসির আলীর মতো কয়েকটি জনপ্রিয় চরিত্র সৃষ্টি করেছেন। এসব চরিত্র বাংলা সাহিত্যের আইকন বা প্রতীকে পরিণত হয়েছে বলা যায়।

এইসব দিনরাত্রি, অযোময়-সহ হুমায়ুন আহমেদের টেলিভিশন নাটকগুলোর প্রতিটিই তুমুল জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। ‘কোথাও কেউ নেই’ নামের নাটকের বাকেরভাই চরিত্রর কথা তো সব বয়সের মানুষের মুখে মুখে ছিল।

বাকেরভাই চরিত্রে এবং হুমায়ুন আহমেদের সব নাটকেই অভিনয় করেছেন আসাদুজ্জামান নূর। তিনি বলছিলেন, এসব নাটক কখনও হারিয়ে যাবে না।

“হুমায়ুন আহমেদ বিশেষ করে টেলিভিশন নাটকে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। মানুষের জীবনের ছোট ছোট ঘটনাকে তুলে এনে তিনি গল্পে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছেন। সে কারণেই মানুষ তা গ্রহণ করেছে”, বলছেন তিনি।

একুশে বইমেলা মানেই হুমায়ুন আহমেদের নতুন বই কেনার জন্য সংশ্লিষ্ট স্টলে পাঠকের ভিড় হতো চোখে পড়ার মতো।

তাঁর বইয়ের প্রকাশক অন্য প্রকাশের মাযহারুল ইসলাম জানাচ্ছেন, হুমায়ুন আহমেদ পাঁচবছর আগে মারা গেলেও এখনও তাঁর বই বিক্রি এতটুকুও কমেনি।

ওই প্রকাশক বলছিলেন, “হুমায়ুন আহমেদের নতুন বই বের হলেই ৫০ বা ৬০ হাজার কপি বিক্রি হতো। এখন নতুন বই বের হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু তাঁর পুরোনো বইগুলোই ৫০ বা ৬০ হাজার কপি করে বিক্রি হচ্ছে।”

তিনি আরও বলেছেন, হুমায়ুন আহমেদের বইয়ের নতুন পাঠক সৃষ্টি হচ্ছে। অন্তত বই বিক্রি করতে গিয়ে তাঁরা এমন ধারণাই পাচ্ছেন। সূত্র: বিবিসি বাংলা