উপনির্বাচন নিয়ে ঈশ্বরদী আ’লীগের বর্ধিত সভায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১২

পাবনা-৪ (ঈশ্বরদী-আটঘরিয়া) আসনের উপনির্বাচন নিয়ে ঈশ্বরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১২ জন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও অন্যদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার সকালে ঈশ্বরদী উপজেলা সদরের স্টেশনরোডে উপজেলা আওয়ামী লীগ ওই সভার আয়োজন করে। সভা শুরুর আগে প্রধান অতিথিকে বরণ করা নিয়ে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ (৫৩) ও সাধারণ সম্পাদক ইছাহাক আলী মালিথার (৪৫) মধ্যে ধাক্কাধাক্কিকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এদিকে ঘটনার পর কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ, জেলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা আওয়ামী লীগের ঊর্ধ্বতন নেতারা বৈঠক করে দুই পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। একই সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রলীগের কমিটি স্থগিতের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে সুপারিশ পাঠিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পাবনা-৫ আসনের সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রথম আলোকে বলেন, ভুল–বোঝাবুঝি থেকে একটু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। সবাই মিলে সেটা ঠিক করা হয়েছে। উপনির্বাচনসহ উপজেলার সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কমিটি স্থগিতের সুপারিশ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দুটি কমিটি স্থগিত থাকবে।

ঘটনায় গুরুতর আহত দুজন হলেন উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবদুস সালাম খানের ছেলে রনি খান (৩০) ও পৌর যুবলীগের সাবেক সভাপতি সানোয়ার হোসেন (৫২)। তাঁরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়া আহতরা হলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সম্পাদক ইছাহাক আলী মালিথা। দুজনের সমর্থকদের মধ্যে রয়েছেন আলমগীর শেখ (৩০), আবদুল মতিন (৪৫), শফিকুল ইসলাম (৩০), জামাদ্দার আলী (৪১), আবু বক্কর (৫০), কবির মালিথা (৪৪) ও রবিউল বিশ্বাস (৩৮)।

উপজেলা আওয়ামী লীগের পাঁচ–ছয়জন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈশ্বরদী পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন প্রয়াত সাংসদ শামসুর রহমান শরীফের জামাতা ও ঈশ্বরদীর মেয়র আবুল কালাম আজাদ। দীর্ঘদিন ধরেই তিনি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী। উপনির্বাচনে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশা করেছিলেন। মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর নিজের আধিপত্য ধরে রাখতে উপনির্বাচনের প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বিভিন্নভাবে শক্তি প্রদর্শন করছেন। অন্যদিকে পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইছাহাক মালিথার নেতৃত্বে অপর একটি পক্ষ আবুল কালাম আজাদকে টপকে নিজেদের অবস্থান প্রকাশের চেষ্টা করে যাচ্ছে।

কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, আধিপত্য রক্ষার এ বিরোধকে কেন্দ্র করে কয়েক দিন ধরেই দুই পক্ষের সমর্থকেরা মহড়া দিচ্ছিলেন। বর্ধিত সভা উপলক্ষ্যে এই মহড়া প্রকাশ্য রূপ নেয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ কামাল হোসেন। বর্ধিত সভা শুরুর আগে প্রধান অতিথিকে ফুল দিয়ে বরণ করতে দুই পক্ষ কার্যালয়ের সামনে জমায়েত হয়। এর মধ্যেই আগে দাঁড়ানো নিয়ে আবুল কালাম আজাদ ও ইসহাক আলী মালিথার ধাক্কাধাক্কি হয়। একপর্যায়ে একে অপরের ওপর চড়াও হলে দুই পক্ষের সমর্থকেরা সংঘর্ষে জড়িয়ে যান। পরে দুই পক্ষের মধ্যে মীমাংসার জন্য বৈঠক বসলে আবার সংঘর্ষ বাধে। একে অপরকে চেয়ার ছুড়ে মারে ও ছুরিকাঘাত করে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হন। খবর পেয়ে থানা–পুলিশ ও জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতারা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।

এ ব্যাপারে জানতে আবুল কালাম আজাদ ও ইসহাক আলী মালিথার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁদের পাওয়া যায়নি। দুজনেরই মুঠোফোন বন্ধ ছিল।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ নাসির উদ্দিন  বলেন, খবর পেয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। বিষয়টি আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ। দলের ঊর্ধ্বতন নেতারাই দুই পক্ষকে শান্ত করেছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় কোনো অভিযোগ দেয়নি।

প্রথম আলো