ইভিএম হ্যাকিংয়ের অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর (ভিডিও)

পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলার রাধানগর ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পরাজিত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রশিদুল ইসলাম ওই নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) হ্যাকিংসহ ভোটে কারচুরির অভিযোগ তুলেছেন। গত রবিবার আদালতে মামলা করে ওই ইউনিয়নে পুনরায় ব্যালট পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

রাধানগড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও চেয়ারম্যান প্রার্থী রশিদুল ইসলাম গতকাল সোমবার দুপুরে জেলা শহরের পঞ্চগড় কমিউনিটি সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে এই অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে রশিদুল ইসলাম বলেন, রাধানগর ইউনিয়নের মোট ভোটারের ৮০ শতাংশ আমার পক্ষের। আমি নিশ্চিত ছিলাম জয় আমার হবেই। তাই হ্যাকাররা যখন আমাকে ৪০ লাখ টাকায় ভোটে জয়ী করে দিতে প্রস্তাব দিয়েছিল আমি তাদের কথায় সাড়া দেইনি। কিন্তু আমার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবু জাহেদ এই হ্যাকার চক্রের সাহায্যেই ইভিএমগুলো হ্যাক করে জয়ী হয়েছেন। মূলত ইভিএমে কারসাজি করে আমাকে পরাজিত করা হয়েছে। ভোটের দিন প্রত্যেক কেন্দ্রে একাধিক বার ইভিএম মেশিন নষ্ট হয়েছে। আঙুলের ছাপ না মিললে অন্য কোনো পদ্ধতি প্রয়োগ না করে আমার শত শত ভোটারকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার পোলিং এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। ভোটের ফলাফলে ইভিএম কপি দেওয়ার বদলে হাতে লেখা কপি সরবরাহ করা হয়েছে। আবার সেখানে এজেন্টদের স্বাক্ষর নেই। এভাবে দিনভর নানা নাটকীয়তা আর অনিয়মের মাধ্যমে অনেক দেরীতে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। তাই আমি আদালতে মামলা করেছি। একই সঙ্গে আমার অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করাসহ পুনরায় ব্যালট পদ্ধতিতে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। ব্যালট পদ্ধতিতে নির্বাচিত হলে আমি ৮০ শতাংশ ভোটারদের সমর্থন পাব।

আটোয়ারী উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা রিটার্নিং অফিসার শহিদুল আলম জানান, ইভিএম মেশিন হ্যাক হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ভোটের দিন দুপুরে কিছু কিছু কেন্দ্রে ইভিএম মেশিনে ত্রুটি দেখা দেয়। ইভিএমে ত্রুটির সময়ে ঢাকা থেকে দুই সদস্যের একটি টিম কাজ করেছিল। প্রায় ঘণ্টা খানেক ভোট গ্রহণে বিলম্ব হয়েছিল। পরে ওই মেশিনগুলো পরিবর্তন করা হয়েছিল। পোলিং এজেন্টের স্বাক্ষর করা প্রতি কেন্দ্রের ফলাফল এখনো আমাদের হাতে রয়েছে। এখানে কারচুপির কোনো সুযোগ নেই।

মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী এ কে এম আনোয়ারুল ইসলাম খায়ের জানান, নির্বাচন ট্রাইবুন্যাল আদালতে রাধানগর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবু জাহেদ, জেলা প্রশাসক, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রশিদুল ইসলাম। মামলাটি স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ)/আইন ২০০৯ এর ২২ ধারার অনুকূলে স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) নির্বাচন বিধি, ২০১০ এর ৫৩(১) ধারা মতে দাখিল করা হয়েছে। আদালত আগামী ১৫ ডিসেম্বর মামলাটির বিষয়ে শুনানির দিন নির্ধারণ করেছেন।

গত ২৮ নভেম্বর পঞ্চগড় সদর উপজেলার ১০টি ও আটোয়ারী উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে রাধানগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী আবু জাহেদকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পান সাত হাজার ৩০৬ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী রশিদুল ইসলাম আনারস প্রতীক নিয়ে পান সাত হাজার ১০৩ ভোট।

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ