‘আড়িয়ল বিলের একটি ধানও নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না’

করোনাভাইরাসের কারণে দেশব্যাপী অচলাবস্থা তৈরি হওয়ায় আড়িয়ল বিলের প্রায় ২৪ হাজার একর জমির ধান কাটা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছিল। শ্রমিক সংকটের কারণে দিশেহারা কৃষকদের কাপালে পরেছিল চিন্তার ভাঁজ। প্রশাসনের সহায়তায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আড়িয়ল বিলের শ্রীনগর অংশে ধান কাটতে ইতিমধ্যে প্রায় ২হাজার ২শ শ্রমিক এসেছে। স্থানীয়ভাবে ধান কাটার জন্য প্রস্তুত রয়েছে প্রায় ৫ শতাধিক শ্রমিক। এছাড়া বিলের ধান কাটার জন্য এসেছে একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার। আরো কয়েকটি আনার প্রক্রিয়া চলছে। এতো কিছুর পরেও কৃষকেদের মধ্যে বৃষ্টি নিয়ে নতুন শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সবকিছু প্রস্তুত থাকার পরও বৃষ্টি ও বজ্রপাতের কারণে কৃষক ধান কাটার জন্য মাঠে নামতে পারছেনা। এভাবে চলতে থাকলে বৃষ্টির পানির সাথে যদি বর্ষার জোয়ারের পানি যোগ হয়ে যায় তাহলে বিলের পাকা ধান তলিয়ে যাবে।

তবে দেশের এই অবস্থায় কোন ভাবেই আড়িয়ল বিলের একটি ধানও নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না। এজন্য যথাযথ প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে বলে শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার জানিয়েছেন।

গত কয়েক দিনের বৃষ্টির কারণে শ্রীনগর, শ্যামসিদ্ধি, গাদিঘাট, মত্তগ্রাম, মাইজপাড়া, নতুনবাজার, ষোলঘর, সমসাবাদ, কেয়টখালী, হাঁসাড়া, লস্করপুর, পুটিমারা, আলমপুর, শ্রীধরপুর, বাড়ৈখালী, মদনখালী সহ বিলপাড়ের কৃষকদের মধ্যে অস্থিরতা বিজার করছে।

ঢাকার দোহার,নবাবগঞ্জ ও মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার মধ্যে অবস্থিত ২৬ হাজার একর আয়তনের আড়িয়ল বিলে প্রায় ২৪ হাজার একর জমিতে ধান চাষ হয়। এর মধ্যে শ্রীনগর উপজেলায় ধান চাষ হয় প্রায় সাড়ে ৯ হাজার একর জমিতে। বিলটিতে প্রতিবছর ধান উৎপাদনের পরিমান প্রায় ৪০ হাজার টন। বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি ধান কাটা শুরু হয়ে তা ১৫ দিনের মধ্যে শেষ হয়। তা না হলে বিলের অধিকাংশ জমি নীচু হওয়ায় বৃষ্টি ও বর্ষার পানিতে ধান তলিয়ে যায়।

করোনাভাইরাসের কারণে দেশে খাদ্য সংকট তৈরি হতে পারে এই আশংকা থেকে আড়িয়ল বিলের ধান কোন ভাবেই যেন নষ্ট না হয় এজন্য শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বৃন্দ ও উপজেলা প্রশাসন জোড় দিয়ে মাঠে নামে। সরকারের সদিচ্ছার ফলে দ্রত সময়ে চলে আসে কম্বাইন্ড হারভেস্টার। বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা শ্রীনগর আসার পথে সৃষ্ট বাধা দূর করার জন্য কাজ করেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসক, শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ।

শ্রীনগর উপজেলা কৃষি অফিসের উপ সহকারী কর্মকর্তা মোঃ আমিনুল ইসলাম জানান, সরকারী ৫০ ভাগ ভুতুর্কির আওতায় একটি কম্বাইন্ড হারভেস্টার এসেছে। উপজেলায় আরো ৮টি চাহিদার বিপরীতে ৩টি কম্বাইন্ড হারভেস্টার আসার অপেক্ষায়। এছাড়া ৭ টি রিপার মাঠে রয়েছে। অড়িয়ল বিলের উচু জমির ধান কম্বাইন্ড হারভেস্টার দিয়ে কাটা সম্ভব।

শ্রীনগর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ওয়াহিদুর রহমান জিঠু জানান, তার বাড়ি আড়িয়ল বিলের পাড়ে। বিলের ধানের উপর নির্ভর করে বহু কৃষকের সংসার চলে। আমরা শ্রমিক ও হারভেস্টার আনার জন্য কাজ করেছি। এখন শ্রমিক ও হারভেস্টার প্রস্তুত থাকলেও আগামী ১ সপ্তাহে যদি আবহাওয়া অনুকূলে না আসে তাহলে ধান ঘরে তোলা কঠিন হয়ে যাবে।

শ্রীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসাম্মৎ রহিমা আক্তার জানান, আড়িয়ল বিলের কৃষকদের চাহিদার বিপরীতে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ধান কাটার জন্য মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ২ হাজার ২শ’র উপরে শ্রমিক এসেছে। তাদের আসার পথে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা দূর করা হয়েছে। আরো অনেকেই আসার অপেক্ষায় রয়েছে। স্থানীয়ভাবেও অনেক শ্রমিক ধান কাটার সাথে সম্পৃক্ত হবে। স্থানীয় ভাবে যারা ধান কাটবে তাদেরকে ত্রানের আওতায় আনা হবে। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়নে ৩ জন করে সেচ্ছাসেবীর তালিকা করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাদের মাধ্যমে অন্যান্য সেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগানো হবে। দেশের এই অবস্থায় কোন ভাবেই আড়িয়ল বিলের একটি ধানও নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ