করোনা চেনাচ্ছে মানবিক তামিমকে

‘মনে করতাম, ক্রিকেটাররা অন্য গ্রহের মানুষ। আমাদের মতো মানুষের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে তারা। কিন্তু তামিম ভাইয়ের সাহায্যটা হাতে পেয়ে মনে হলো, তারাও ভাবে আমার মতো সাধারণ মানুষের কথা। তার পাঠানো টাকায় আমার যেটুকু সহায় হোক, এই দুঃসময়ে তো তিনি অন্তত ভেবেছেন’—এই ভালো লাগা যেন রোজিনা আক্তারের হৃদয় ছুঁয়ে গেল। রংপুরে এই কাবাডি খেলোয়াড়ের মতো অনেক খেলোয়াড়ের জীবনে ছোট এক অনুঘটক হয়ে হাজির হয়েছেন তামিম ইকবাল। চার-ছক্কায় মাঠ মাতানোর খেলা স্থগিত রেখে এই ক্রিকেট তারকা মেতেছেন সঙ্গী-সাথিদের জীবন রাঙানোর খেলায়। কাবাডি, জিমন্যাস্টিকস, উশু, ফুটবল, হকির অনেক খেলোয়াড়ের জীবন থেকে করোনা কেড়ে নিয়েছে আনন্দ। কিন্তু তামিম দিচ্ছেন দুঃসময় কাটিয়ে বেঁচে থাকার প্রেরণা।

না। এ নিয়ে তিনি কিছু বলবেন না। নীরবে গিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, তাঁদের জীবনযুদ্ধে সহযোগী হবেন। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের ৯১ জন খেলোয়াড় ছাড়াও অন্যান্য বিপদগ্রস্ত মানুষের হাতে টাকা পৌঁছে দিচ্ছেন বিভিন্ন উপায়ে। জাতীয় হকি দলের সাবেক খেলোয়াড় আশরাফুল ইসলাম শিশু বিকাশে তামিমের উপহার পেয়ে অভিভূত, ‘আমি শুনেছি তামিম সাহায্যটা করছে গোপনে। এটা হলো সত্যিকারের মানুষের পাশে দাঁড়ানো। আমার মতো অনেক খেলোয়াড় তাঁর এই সাহায্য পেয়ে উপকৃত হয়েছে। অনেক বড় মনের মানুষ তিনি, আল্লাহপাক তাঁকে দেখবেন।’ আবাহনীর হয়ে দুইবার লিগ শিরোপাজয়ী এই হকি ফরোয়ার্ড ছয় বছর জাতীয় দলে খেললেও জীবনে বড় ছন্নছাড়া রূপ। ক্রিকেট-ফুটবলের কিছু সৌভাগ্যবান বাদ দিলে বাকি খেলোয়াড়রা দুর্ভাগা। ভালো খেলেও পারেন না গরিবিয়ানার দুর্ভাগ্য বদলাতে।

তা-ও খেলাধুলা থাকলে ছোট খেলার অ্যাথলেটদের কোনো রকমে চলে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাস যে সেই চলাটাও থামিয়ে দিয়েছে। তাই জাতীয় বয়সভিত্তিক সাঁতারে সেরা অ্যানি খাতুনের কাছে তামিমের পাঠানো টাকাটা বড় আশীর্বাদ, ‘বাবা বেঁচে থাকলে হয়তো এতটা দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে যেতে হতো না। সাঁতার কম্পিটিশন থাকলে একরকম হয়ে যায়। এখন ছোট দুই ভাইকে নিয়ে চলতে বড় কষ্ট হচ্ছিল। তামিম ভাইয়ের টাকায় আমাদের কী উপকার হয়েছে।’ এভাবে পেয়েছেন অনেক ফুটবলারও। তাতে সহযোগিতা করেছেন জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড তৌহিদুল ইসলাম সবুজ। এই তালিকায় অনেক দরিদ্র ফুটবলারের নাম যোগ করা সবুজ মনে করেন তামিমের এই উদ্যোগ অতুলনীয়, ‘এই মানবিক উদ্যোগের তুলনা নেই। একজন ক্রিকেটার হয়ে সে অন্যান্য খেলোয়াড়দের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। সে বড় ক্রিকেটার হয়েও ভুলে যায়নি দেশের অন্যান্য ইভেন্টের খেলোয়াড়দের, তাদের দুঃখ-কষ্ট যে তাঁকে ছুঁয়ে গেছে, এটাই তার প্রমাণ। মানুষ হিসেবেও সে অনেক বড় হৃদয়ের। তাঁর সাহায্যে যাদের এতটুকু উপকার হয়েছে তারা সারা জীবন মনে রাখবে তামিমকে।’ এরপর বলেন হতভাগ্য ওই ফুটবলারদের কথা, ‘ফুটবলে প্রিমিয়ারে কিছু টাকা পাওয়া যায়, বাকিরা সেই অর্থে খুব সামান্য পায়। এখন সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। চ্যাম্পিয়নশিপ লিগ, প্রথম বিভাগ ও দ্বিতীয় বিভাগের ফুটবলারদের বড় আয়ের উৎস খেপ খেলা। সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে। এই দুর্দিনে তামিমের সাহায্যটা তাদের কাজে লাগবে।’

করোনাভাইরাসের এই লকডাউন অবস্থায় বিপদে আছে নিম্ন আয়ের মানুষজন। কাজ না থাকায় তাদের পেট চালানো দায় হয়ে গেছে। সরকারি ত্রাণ ছাড়াও মানুষের পাশে মানুষের দাঁড়ানোর উদাহরণ অনেক। এর মধ্যে কিছু গোঁজামিলও দেখতে পাচ্ছেন সাবেক জাতীয় ফরোয়ার্ড আশরাফুল ইসলাম শিশু, ‘খবরে দেখছি, এ সময় অনেকে এটা-সেটা নিলামে তুলছেন। তবে তা দিয়ে গরিবের কতটা সহায় হবে আমি জানি না। এটা যেমন মানুষের বিপদের সময় তেমনি পরীক্ষারও।’ মানবতার পরীক্ষায় ভিক্ষুক নাজিমউদ্দিন লেটার মার্কস পেয়ে উত্তীর্ণ। এরপর হয়তো তামিম ইকবালের মতো সমব্যথী মানুষরাই থাকবেন।

 

সুত্রঃ কালের কণ্ঠ