আজ চালু হচ্ছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’: আমের দামে খুুশি চাষিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:


আজ শুক্রবার থেকে রেলসেবায় যুক্ত হলো নতুন কৃষিপণ্যবাহী ট্রেন। ‘ম্যাংগো স্পেশাল’ ট্রেন নামে আজ থেকে একজোড়া ট্রেন চলাচল করবে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী-ঢাকা রুটে। যা কৃষি পণ্যবাহী (পার্শ্বেল) হিসেবে চলাচল করবে। আজ বিকেলে ট্রেনটি চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুর স্টেশন থেকে যাত্রা শরু করবে। ১ ও ২ নামের ট্রেন দুইটি সপ্তাহে ৭ দিনই এই রুটে আম-সবজিসহ বৈধ পণ্যসামগ্রী নিয়ে যাতায়ত করবে। স্টেশনের দূরত্ব ভেদে ভাড়া পড়বে সর্বনিম্ন ১ টাকা ১০ পয়সা থেকে সর্বোচ্চ ১ টাকা ৩০ পয়সা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রাজশাহী স্টেশনে সংবাদ সম্মেলন করে ট্রেন দুটি ভাড়া ও চলাচলের সময়সহ বিস্তারিত তুলে ধরেন পশ্চিম রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ফুয়াদ হোসেন আনন্দ। এসময় উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার আব্দুল করিমসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।


আরও পড়ুন: করোনা: বিদেশে যাচ্ছে না রাজশাহীর আম

আরও পড়ুন:রাজশাহী-চাঁপাইয়ের কৃষিপণ্য পরিবহণে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’


 

এদিকে এবার গতবারের তুলনায় আমের উৎপাদন অনেকটায় কম হচ্ছে বলে মনে করছেন চাষিরা। ফলে করোনা দুর্যোগেও আমের দাম নিয়ে খুশি চাষিরা। গত ৩১ মে’র পর থেকে প্রতিদিনই আমের দাম বাড়ছে। চাষিরা বলছেন, এবার বৈরী আবহাওয়া সঙ্গে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে আমের ক্ষতি হয়েছে। সে কারণে আমের রংও এবার খারাপ হচ্ছে। পাশাপাশি উৎপাদনও কম হচ্ছে।

গতকাল বৃহস্পতিবার রাজশাহী রেলস্টেশনে ট্রেনে আম ও কৃষিপণ্য পরিবহণ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে জনানো হয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন পর্যন্ত প্রতি কেজি পণ্য পাঠাতে খরচ পড়বে ১ টাকা ৩০ পয়সা। আর রাজশাহী স্টেশন থেকে খরচ পড়বে ১ টাকা ১৭ পয়সা। এর মাঝে পণ্যা নামানো যাবে টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, মৌচাক, জয়দেবপুর, টংগী, বিমানবন্দর ও তেজগাঁও স্টেশনে। এছাড়াও রোহনপুর আমনুরা, সিতলাই, সরদহরোড, আড়ানী, আব্দুলপুর স্টেশন থেকেও ঢাকার উদ্দেশ্যে পণ্য পরিহবণ করা যাবে।

একই ভাড়ায় ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে আসা যাবে। এর মাঝে টাঙ্গাইল, মির্জাপুর, মৌচাক, জয়দেবপুর, টংগী, বিমানবন্দর ও তেজগাঁও স্টেশন থেকেও পণ্য রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে নিয়ে আসা যাবে।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশন থেকে ‘ম্যাংগো স্পেশান ২’ ট্রেনটি বিকাল ৪টায় ছেড়ে যাবে। রাজশাহী স্টেশনের পৌঁছাবে ৫টা ২০ মিনিটে। ৩০ মিনিট যাত্রা বিরতীর পর ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে ৫ টা ৫০ মিনিটে। ট্রেনটি ঢাকার কমলাপুর স্টেশনে পৌছোবে রাত্রি ১টায়।

এদিকে ঢাকার কমলাপুর স্টেশন থেকে ‘ম্যাংগো স্পেশান ১’ ট্রেনটি রাত্রি ২টা ১৫ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। ট্রেনটি রাজশাহী স্টেশনে এসে পৌঁছাবে সকাল ৮ টা ৩৫ মিনিটে। ২০ মিনিট যাত্রা বিরতীর পর ৮টা ৫৫ মিনিটে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। ট্রেন দুইটিতে মোট ৬টি ওয়াগন বা বগি থাকবে। প্রতি বগিতে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার কেজি পণ্য পরিবহণ করা যাবে।

এদিকে আমের সিজন শেষ হওয়ার পরো পণ্যবাহী এই ট্রেনটির যাত্রা অব্যাহত থাকবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ফুয়াদ হোসেন আনন্দ জানান, রাজশাহী-আব্দুলপুর রুটের রেল লাইনের ধারণ ক্ষমতা অনুসারে প্রতিদিন ২২ জোড়া ট্রেন এই রুটে চলাচল স্বাভাবিক। সেখানে প্রতিদিন চলাচল করে ৩৪ জোড়া ট্রেন। এমন অবস্থায় করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এই রু্েটর নিয়মিত ট্রেনগুলো যাতায়ত শুরু করলে হয়তো এই ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’ দুটির সেবা অব্যাহত রাখা সম্ভব হবে না বলে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করেন।

অন্যদিকে জেলার পবা উপজেলার দামকুড়া এলাকার মকছেদ আলী বলেন, অন্যান্য বার যে গাছটিতে ৩০ মণ আম ছিল এবার সেখানে হচ্ছে বড় জোর ২০ মণ। ফলে এবার আমের উৎপাদন কমেছে। ঈদের আগে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড়ে আমের ক্ষতি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। এই ঝড়ে যেমন আম ঝরে পড়েছে, তেমনি আমের রংও নষ্ট হয়েছে। ফলে উৎপাদন কম হচ্ছে এবার। তবে দাম ভালো আছে।’

আরেক আমচাষি দুর্গাপুরের হযরত আলী বলেন, এবার আম ঝড়ে পড়ে গেছে অনেক। এ কারণে উৎপাদন কম হচ্ছে। তবে দাম ভালো পাওয়া যাচ্ছে। এখন প্রতি মণ গোপাল বিক্রি হচ্ছে দুই হাজার থেকে ২৬ টাকা মণ। আবার খিরসাপাত বিক্রি হচ্ছে ১৭শ ১৮শ টাকা মণ।’

অন্যদিকে পুঠিয়ার বানেশ্বর বাজারেও এখন আমে ভরে উঠছে। বেচা-কেনাও হচ্ছে বেশ। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসছেন পাইকারী ক্রেতারা। ফলে আমের চাহিদাও বেড়েছে অনেক। গতকাল এ বাজারে আম বিক্রি হয়েছে গোপাল ২২-২৬শ টাকা মণ, খিরসাপাত বিক্রি হয়েছে ১৫-১৮শ টাকা মণ দরে। জানিয়েছেন বাজারের আম বিক্রেতা বাবু হোসেন।

স/আর