করোনা: বিদেশে যাচ্ছে না রাজশাহীর আম

নিজস্ব প্রতিবেদক:


রাস্তার দুই ধারে সারিসারি আমবাগান। সুস্বাদু জাতের আমের কথা উঠলেই চলে আসে রাজশাহীর নাম। রাজশাহীর আমের মধ্যে বাঘা উপজেলার আম বিখ্যাত। বাঘা উপজেলার মাটি গুনগত আমচাষের জন্য উপযোগী। ফলে বাঘার আমের খ্যাতি দেশজুড়ে।
এ উপজেলার আম গত মৌসুমে দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, সুইডেন, নরওয়ে, পর্তুগাল, ফ্রান্স, রাশিয়া রফতানি করা করা হয়েছিল। কিন্তু এ মৌসুমে করোনা ভাইরাসের কারণে বিদেশে যাচ্ছে না। চলতি মৌসুমে ৫০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানির কথা ছিল। তবে এই উপজলোর আম দেশের মধ্যে আগুরা সুপার সপসহ জনপ্রিয় সুপার সপে চালান দেয়া হচ্ছে।

জানা যায়, হটেক্স ফাউন্ডেশন ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের যৌথ আয়োজনে বিশ্ব খাদ্য সংস্থার মাধ্যমে এ আম রফতানির কাজ শুরু করা হয়েছিল। আম রফতানির জন্য ৫০ জন বাগান মালিককে উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে নিরাপদ ও বিষমুক্ত আম উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তালিকাভুক্ত করে সনদপত্র প্রদান করা হয়। এই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চাষিরা কৃষি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাগানে উৎপাদিত ও ক্ষতিকর রাসায়নিকমুক্ত আম উৎপাদন করেন।


আরও পড়ুন:আজ চালু হচ্ছে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’: আমের দামে খুুশি চাষিরা

আরও পড়ুন:রাজশাহী-চাঁপাইয়ের কৃষিপণ্য পরিবহণে ‘ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন’


প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে থেকে গুটি আম, ২০ মে থেকে গোপালভোগ ও লক্ষণভোগ, ২৫ মে থেকে লখনা, ২৮ মে থেকে হিমসাগর, ৬ জুন থেকে ল্যাংড়া, ১৩ জুন থেকে আম্রপালি, ১৫ জুন থেকে ফজলি, ১০ জুলাই থেকে আশ্বিনা, ১০ জুলাই থেকে বারি-৪ আম নামোনো যাবে।

বাঘা উপজেলার আমের মধ্যে ফজলি, খেরসাপাত (হিমসাগর), গোপালভোগ, মহনভোগ, ল্যাংড়া বিখ্যাত। এই আমের নাম মানুষের সবার মুখে মুখে। এছাড়া বৌ-ভুলানি, রানি পছন্দ, জামাই খুশি, বৃন্দাবন, তুতাপরি, লখনা, বোম্বাই, খেরসাপাত, দাউদ ভোগ, সেন্দুরি, আম্রপালি, আশ্বিনা, ব্যানানা, মল্লিকা, ক্ষুদি খেরসাপাত, কালীভোগসহ শতাধিক জাতের আম রয়েছে। প্রতি বছর আম মৌসুমে এ উপজেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হয়। বাঘা উপজেলায় কৃষি অফিসের তথ্য মতে, এ উপজেলায় আম বাগান রয়েছে ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর। এ উপজেলার মানুষ প্রতি বছর আম মৌসুমে আয় করেন প্রায় চার থেকে পাঁচ’শ কোটি টাকা।

বৃহস্পতিবার (৪ জুন) গুটি আম পাইকারি হিসেবে প্রতিমণ ৮০০-১০০০ টাকা, খেরসাপাত (হিমসাগর) ও গোপালভোগ ১৫০০-১৬০০ টাকা, লখনা ৬০০-৭০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাঘার আম রাজধানী ঢাকা, নরসিংদী, ভৈরব, বরিশাল, সিলেট, চট্টগ্রাম ও ফেনীসহ দেশের অন্যান্য স্থানে কেনাবেচা হয়।

কলিগ্রামের আমচাষি (লিড ফার্মার) আশরাফুদৌলা, আড়পাড়া গ্রামের মহসীন আলী বলেন, ইতোমধ্যে আম ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রফতানি শুরু হয়েছে। তবে করোনার কারণে দেশের বাইরে আম না যাওয়ায় কিছুটা ক্ষতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে।

আড়ানীর আম ব্যবসায়ী মঞ্জুরুল হক বলেন, কয়েকটি উপজেলার মধ্যে আম প্রধান উপজেলা হিসেবে বাঘার আম ব্যাপক পরিচিত। প্রতি বছর আমের এই মৌসুমে গ্রামে গ্রামে আমের বাজার গড়ে ওঠে। এইসব বাজারে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক আম ব্যবসায়ীরা ব্যস্ত সময় কাটান। ব্যবসায়ীরা চুক্তি মূল্যে বাগান কিনে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শহরে আম চালান করেন। ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা বসে থাকে না। তারা ফেরি করে গ্রামে গ্রামে আম ক্রয় করেন। স্বল্প পরিসরে এগুলো নিকটতম বাজারে বিক্রি করে।

বাঘা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শফিউল্লা সুলতান বলেন, উপজেলায় ৮ হাজার ৩৬৮ হেক্টর জমিতে আম বাগান রয়েছে। এ বছর উৎপাদন ধরা হয়েছে হেক্টর প্রতি ৬ থেকে ৭ মেট্রিক টন। এই উপজেলায় খাদ্য শস্যের পাশাপাশি অর্থকরি ফসল হিসেবে আম প্রধান। উপজেলার মাটি আম চাষের জন্য উপযোগী। চলতি মৌসুমে ৫০ মেট্রিক টন আম বিদেশে রফতানি করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা রয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে কোনো কার্গো বিদেশে চলাচল না করায় রফতানি হচ্ছে না।

বাঘা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, গত চারবছর থেকে দেশের বাইরে আম যেতো বাঘার আম। কিন্তু এবছর করোনা ভাইরাসের কারণে বিদেশে আম রফতানি করা সম্ভব হচ্ছে না।

স/আ