ফুলব্রাইট স্কলারশিপ শুধু ডিগ্রি নয়, জীবনদর্শনে নতুন ধর্ম-সংস্কৃতি জানার সুযোগ

ফুলব্রাইট প্রোগ্রাম অনেকের জন্য হয়তো ডিগ্রি। কিন্তু আমরা যারা এটি পাই এটা আমাদের জন্য শুধু ডিগ্রি নয়। এটি জীবনদর্শনে নতুন ধর্ম-সংস্কৃতি জানার সুযোগ। অন্যদিকে নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির ঊর্ধ্বে যে পরিবর্তন! উদারতার যে ছোঁয়া, অন্যকে ধারণ করার শক্তি, সাহস নিজের ভেতরে গড়ে তোলা। এই নানাবিধ বিষয়ে এই প্রোগ্রামে ভাবিত থাকে। রাজনীতি, অর্থনীতি সবকিছু দেখার সুযোগ হয়। ফলে একজন ব্যক্তি উন্নত মানুষে রূপান্তরিত হয় বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান।

ফুলব্রাইট প্রোগ্রামের ৭৫ বছর পূর্তিতে শুভেচ্ছ জানিয়ে ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আখতারুজ্জামান এসব কথা বলেন। তিনি ২০০২ সালে ফুলব্রাইট স্কলারশিপের অধীনে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তিনি আমেরিকার রাষ্ট্রীয় কার্যাবলী, সামাজিক ও দৈনন্দিন জীবনে ধর্ম কতটুকু প্রভাব বিস্তার করে সেই বিষয়ে গবেষণা করেন।

প্রোগ্রাম সম্পর্কে তিনি বলেন, প্রোগ্রামটা মূলত বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে কাজ করে। পৃথিবীর সব দেশ থেকেই সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষ এই প্রোগামের অধীনে সেদেশে যায়। এর মাধ্যমে গ্লোবাল নেটওয়ার্ক তৈরি হয়। বেশ কয়েকটি প্রোগ্রামের অধীনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এই সুযোগ পায়। প্রোগ্রাম ভিন্নতায় ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য উদ্দেশ্য। আমেরিকার সমাজ ও সংস্কৃতিকে গভীরভাবে জানা ছিলো আমার প্রোগ্রামের উদ্দেশ্য। প্রোগ্রামের অধীনে যেসব শিক্ষার্থী আমেরিকায় যায় তাদের আর্থিক কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটার মাধ্যমে আমেরিকার সমাজে বিভিন্ন সম্প্রদায় ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানের মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ হয়। এমনকি সেই দেশের খেলাধুলা, রীতিনীতি সবকিছুই খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা সুযোগ হয়। যা উন্নত জীবন গড়তে সহায়তা করে।

শিক্ষার্থীদের মাঝে কী পরিবর্তন আসে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এদেশের সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা একজন শিক্ষার্থী হঠাৎ করে সম্পূর্ণ ভিন্ন সংস্কৃতিতে সেখানে গেলে সবকিছুই অন্যরকম লাগবে। একটা উন্নত সমাজের সঙ্গে মিশে যখন সবকিছুকে উন্নত দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ হয়। নিঃসন্দেহে সেটা একটা অসাধারণ অনুভূতি। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জীবনে মূল্যবোধের প্রসার ঘটে।

নেতৃত্বের পরিবর্তন আনে কিনা জানতে চাইলে অধ্যাপক আখতারুজ্জামান জানান, ‘নেতৃত্বের পরিবর্তন ঘটে, দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন ঘটবে, ল্যাঙ্গুয়েজ প্রফেসিয়েন্সি চলে আসবে। নতুন সমাজ, একটি উন্নত বিশ্বের সমাজ, নতুন জাতিগোষ্ঠী, নতুন ভাষাগোষ্ঠী, মাল্টিকালচারাল একটি সোসাইটির বিচরণ করলে ব্যক্তির দৃষ্টিভঙ্গি, মনোভঙ্গি, নানাক্ষেত্রে পরিবর্তন ঘটবে। তবে এটা শুধু আমেরিকায় না। যেকোনো উন্নত সমাজে গেলেই ঘটবে। আমাদের আঠারো জনের একটা টিম ছিলো। আমাদের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের মিশরের ছিলো, জর্ডানের ছিলো। তাদের সঙ্গে আমাদের সাংস্কৃতিক ভাবের আদান প্রদান হয়েছে। ফলে জাতিগত সাংস্কৃতিক পরিবর্তনের মাধ্যমে সহনশীলতার গুণ তৈরি হয়।

স্কলারশিপটা আপনার ব্যক্তিজীবনে কোনো পরিবর্তন এনেছে কিনা জানতে চাইলে উপাচার্য বলেন, ‘না তেমন না। তবে গুনগত মান, জীবনমান, মাল্টিকালচারাল সোসাইটি, সমাজের বহুমাত্রিকতা, মাল্টিকালচারাল ডাইমেনশন, মাল্টিরিলিজিয়াস সোসাইটি সম্পর্কে প্রভাব পড়েছে। আমাদের মুসলিম সোসাইটি বা সম্প্রদায় সম্পর্কে আমাদের যে ধারণা। অন্যান্য ধর্মাবলম্বী সংবলিত সমাজে গেলে আমাদের ধারণাটা আরো খোলামেলা হবে। আরো উদার হবে। বুঝতে পারবে পৃথিবীতে আরো মানুষ আছে, আরো ধর্ম আছে। তাদের মধ্যে সভ্যতা, ভব্যতা, আদর্শ আছে এটা বুঝা যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রে দৈনিন্দন কাজে ধর্মের প্রভাবের বিষয়ে তিনি বলেন, ওদের সংবিধানেই ধর্মের স্বীকৃতি রয়েছে। আন্তঃধর্মীয় ফরম্যাটে অনেক গ্রুপ রয়েছে। কিছু গ্রুপ আছে উদারতাবাদী। আবার কিছু আছে কট্টরপন্থী। অন্য যে মাইনরিটি গ্রুপ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে হয়তো দৃশ্যমান নেই। মুসলিম কমিউনিটি তাদের ডিক্লারেশন দিয়ে এক জায়গায় বসবাস করে। আমাদের যে ইসলামিক সেন্টারগুলোতে মুসলিম কমিউনিটির কাজ দৃশ্যমান। মসজিদ যদি হয় ইসলামিক সেন্টার সেখানে শুধু তারা নামাজ পড়ে না। ঐখানে আমাদের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন হয়। লাইব্রেরি থাকে, ওয়েডিং সিরেমনি হবে। মসজিদ শুধু একটি মসজিদ না। সামাজিক কার্যাবলি সম্পন্ন করার জন্য সোশ্যাল ইন্টারেকশন, সোশ্যাল এক্টিভিটিস, সোশ্যাল গ্যাদারিং ইত্যাদির ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে অনেক কিছুই আছে যেগুলো অনুসরণ করার মতো।’

 

সূত্রঃ কালের কণ্ঠ