মঙ্গলবার , ২২ অক্টোবর ২০২৪ | ২১শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

সরকার কি চাইলে এখন রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিতে পারে?

Paris
অক্টোবর ২২, ২০২৪ ৮:২০ অপরাহ্ণ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক :

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের মন্তব্যের পর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারীদের অনেকেই তার বিদায় চাইলেও আইন ও সংবিধান অনুযায়ী তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সুযোগ আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

একই সঙ্গে তারা অবশ্য বলছেন যে গণ-অভ্যুত্থানের পর ‘আইন ও সংবিধানের’ বিষয়টিই গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। ফলে ‘জনআকাঙ্ক্ষার’ আলোকে রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে অন্য কাউকে সে পদে বসাতে চাইলেও সেটি অসম্ভবও কিছু নয়। যদিও সরকার পরিবর্তনের পর দেশের সংবিধান স্থগিত করা হয়নি।

অন্যদিকে রাজনৈতিক দলগুলো বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী রাষ্ট্রপতির তীব্র সমালোচনা করলেও ‘তার পদত্যাগ কিংবা অপসারণের’ দাবির প্রশ্নে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

বিএনপি দলীয়ভাবে সিনিয়র নেতাদের এ বিষয়ে বিচ্ছিন্নভাবে মন্তব্য না করার পরামর্শ দিয়েছে আর জামায়াতে ইসলামী শুধু বলেছে ‘রাষ্ট্রপতি অসত্য বক্তব্য দিয়ে ওই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন’। যদিও উভয় দলের নেতাদের কাছে বিবিসির প্রশ্ন ছিল যে ‘রাষ্ট্রপতি সরে যাক, এটি তারা চান কি না?

প্রসঙ্গত, দৈনিক মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী তার লেখা এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন যে রাষ্ট্রপতি তাকে বলেছেন ‘শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো দালিলিক প্রমাণ তার হাতে নেই’।

তার এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ এনেছেন আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা।

রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় মিছিল-সমাবেশ করে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবি করেছেন তারা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অন্তর্বর্তী সরকার সমর্থক ও আওয়ামী লীগ বিরোধীরা রাষ্ট্রপতির তীব্র সমালোচনা করে তার পদত্যাগ কিংবা তাকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছাড়ার পর প্রথমে সেনাপ্রধান ও পরে রাষ্ট্রপতি জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন এবং তিনি তা গ্রহণ করেছেন বলে জানিয়েছিলেন।

সোমবারের বিতর্কের পর বঙ্গভবন থেকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলা হয়েছে, ‘মীমাংসিত বিষয়ে নতুন করে কোনো বিতর্ক সৃষ্টি না করার জন্য’, রাষ্ট্রপতি সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

এখানে বলে রাখা দরকার, বাংলাদেশে অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপ্রধান হওয়া কিংবা বিদায় নেওয়ার ঘটনা নতুন কিছু নয়।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার ঘটনার পর নিজেকে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন খন্দকার মোশতাক আহমেদ।

ওই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সেনা কর্মকর্তাদের সমর্থন নিয়ে ১৯৭৫ সালের ২০ আগস্ট খন্দকার মোশতাক সামরিক আইন জারি করে নিজেই প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব নিলেন। ‌এরপর তিনি নিজেই নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করেছিলেন।

৩ নভেম্বরের সামরিক অভ্যুত্থানের মুখে খন্দকার মোশতাক আহমদ ৫ নভেম্বর রাষ্ট্রপতির পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

সেদিনই সামরিক অফিসারদের অনুরোধে নতুন রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম।
১৯৭৭ সালের ২১ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জিয়াউর রহমানের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন বিচারপতি সায়েম।

অন্যদিকে প্রবল গণ-আন্দোলনের মুখে ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন সাবেক সামরিক শাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। ওই দিন প্রথমে পদত্যাগ করেছিলেন তখনকার ভাইস প্রেসিডেন্ট মওদুদ আহমদ।

এরপর জেনারেল এরশাদ বিচারপতি সাহাবুদ্দিনকে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ করেন এবং নিজে পদত্যাগ করেন। এরপর অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হন বিচারপতি সাহাবুদ্দিন।

রাষ্ট্রপতিকে কি সরিয়ে দেওয়া সম্ভব?

বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী, সংসদ রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসন করতে পারে। কিন্তু সরকার পরিবর্তনের পর সংসদ বাতিল করে দেওয়ায় সেই সুযোগ আর নেই। আবার রাষ্ট্রপতি চাইলে স্পিকারের কাছে পদত্যাগ করতে পারেন।

কিন্তু স্পিকার পদত্যাগ করেছেন এবং ডেপুটি স্পিকার কারাগারে থাকায় সেটিও সম্ভব হচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার পদত্যাগ ইস্যুতে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণের দাবি উঠলেও সেটি সংবিধান অনুযায়ী হওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করেন সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক।

‘রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ করতে পারে সংসদ। কিন্তু সেটি বাতিল করা হয়েছে। আবার তার পদত্যাগেরও সুযোগ নেই । সে কারণে সংবিধান ও আইনগতভাবে তাকে সরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তবে স্বৈরাচারী সরকারের বিদায়ের পর সব কিছু তো সংবিধান অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই নিয়ম বা সংবিধানের প্রশ্ন অবান্তর। বরং জনআকাঙ্ক্ষার আলোকে তাকে সরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা সরকার চাইলে করতেই পারে’, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

এখানে বলে রাখা ভালো যে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ, নির্বাচন কমিশন ও পাবলিক সার্ভিস কমিশন থেকে অনেকেই পদত্যাগ করেছেন।

‘আন্দোলনের সঙ্গে ছিলেন না কিংবা বিদায়ি সরকারের ঘনিষ্ঠ হিসেবে অনেককেই তো সরকার সরে যেতে বলেছে। সেসব ক্ষেত্রে তো সংবিধান দেখা হয়নি। সুতরাং রাষ্ট্রপতির ক্ষেত্রেও তা হতে পারে’, বলছিলেন মালিক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন বলছেন, গণ-অভ্যুত্থানের পর সব কিছুই বাতিল করা যেত, কিন্তু তা না করে কোনোটি বাদ দেওয়া হয়েছে- আবার কোনোটি রাখা হয়েছে বলেই এই জটিল পরিস্থিতি সামনে এসেছে।

‘সংবিধান স্থগিত করা হয়নি। কিন্তু আবার সেটি পুরোপুরি অনুসরণও করা হচ্ছে না। সব মিলিয়ে একটি লিগ্যাল অ্যানার্কি বা আইনি নৈরাজ্য তৈরি হয়েছে। এর ফলে হয়তো অনেক কিছুই করতে হচ্ছে, যা নিয়ম মেনে হবে না’, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তিনি বলছেন প্রেসিডেন্ট নিজেই বর্তমান সরকারকে শপথ করিয়েছেন। সরকার তাকে সংসদ ছাড়া অভিশংসন করলে বা বাদ দিলে এখন হয়তো কেউ কিছু বলবে না কিন্তু ভবিষ্যতে তো আইনি প্রক্রিয়া নিয়ে কথা উঠতে পারে।

‘অভ্যুত্থানের পরপরই আন্দোলনকারী সব দল, শ্রেণি ও পেশার প্রতিনিধি নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে আগের সব বাতিল করলে এখনকার সংকটের তৈরি হতো না। তখন রাষ্ট্রপতিকে পরিবর্তন করলেও বলা যেত যে জরুরি পরিস্থিতিতে জনগণের ম্যান্ডেট অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে’, বলছিলেন তিনি।

এই বিষয়ে ‘রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন’ নামে একটি সংগঠনের প্রধান সমন্বয়ক ও সিনিয়র আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, ‘এখন অস্বাভাবিক সরকার কাজ করছে, তাই সংবিধানের মাঝ দিয়ে বৈধতা-অবৈধতা সাংবিধানিক পদ্ধতিতে খুঁজে পাওয়া কঠিন।’

‘তবে সেটাও তারা কাভার করার জন্য আপিল বিভাগ থেকে একটি রেফারেন্স (প্রাসঙ্গিক মতামত বা সুপারিশ) করে নিয়ে আসছে। এখন পর্যন্ত তারা সংবিধানের সঙ্গে সংগতিপূর্ণভাবে চলার চেষ্টা করছেন। যা সংগতিপূর্ণ না, সেগুলো রেফারেন্সের মাধ্যমে। তাই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এই রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের পদ্ধতি কী হবে, সেটার জন্য তাদেরকে এখন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে রেফারেন্স নিতে হবে।’

‘সেই রেফারেন্স অনুয়ায়ী তারা একজনকে বাদ বা নতুন একজনকে নিয়োগ দিতে পারেন। বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় এ ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নাই’, তিনি যোগ করেন।

রাষ্ট্রপতি বিষয়ে দলগুলোর ভাবনা

শেখ হাসিনার পদত্যাগ নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্য প্রকাশের পরপরই তীব্র শোরগোল ও আইন উপদেষ্টার কঠোর সমালোচনার পরেও রাজনৈতিক দলগুলো- বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াত সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।

গতকালই এক অনুষ্ঠানে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেছেন, ‘শিক্ষাজীবনে ছাত্রলীগ করা রাষ্ট্রপতি পলাতক শেখ হাসিনাকে পুনর্বাসিত করার চেষ্টা করছেন।’

তবে এ বিষয়ে আজ মঙ্গলবার বিবিসির পক্ষ থেকে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির দুজন সদস্যের মতামত নেওয়া হলেও পরে তারা দুজনই ফোন করে জানান যে তাদের এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করার জন্য দলীয় হাইকমান্ড থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

তবে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে আরো কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলোচনা করে যে ধারণা পাওয়া গেছে, তাতে বিএনপি আসলে বোঝার চেষ্টা করছে যে রাষ্ট্রপতি এ মন্তব্যের ক্ষেত্রে ‘কতটা সিরিয়াস’ ছিলেন। অর্থাৎ তিনি কী তথ্য হিসেবে উল্লেখ করেছেন নাকি সরকারকে কোনো ধরনের সংকটে ফেলার চিন্তা থেকে এমন মন্তব্য করেছেন।

আবার দলের একটি অংশ বোঝার চেষ্টা করছে রাষ্ট্রপতির ওই মন্তব্য ‘অন্য কারো প্ররোচনায় হয়েছে কি না’। তবে ‘অন্য কারো’ বলতে কাদের বোঝানো হচ্ছে, এমন প্রশ্নের কোনো সরাসরি উত্তর মেলেনি।

যদিও দলটির কোনো কোনো নেতা মনে করেন, সরকারের মধ্যেই একটি অংশ আছে যারা ‘দ্রুত গণতন্ত্রে উত্তরণ বা রাজনৈতিক সরকার আসার পথ সুগম’ করতে অনুৎসাহী। রাষ্ট্রপতির মন্তব্যের ক্ষেত্রে তাদের কোনো ভূমিকা আছে কি না, তা নিয়েও আলোচনা আছে দলের মধ্যে।

‘চাইলে তো রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে যে কাউকে রাষ্ট্রপতি পদে বসিয়ে দিতে পারে। কিন্তু সেটি গণতন্ত্রে উত্তরণে কোনো ভূমিকা রাখবে কি না সেদিকে আমাদের দৃষ্টি থাকবে। এমন কিছু করতে দেওয়া যাবে না, যেটি দেশকে বিরাজনীতিকরণের দিকে নিয়ে যেতে পারে’, বলছিলেন দলটির একজন সহসভাপতি। তিনি তার নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেছেন।

স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বিবিসি বাংলাকে বলেছেন অভ্যুত্থানের পর বিদায়ি সরকারের কারোরই বহাল থাকা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন। কিন্তু দলের দিক থেকে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তিনি আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলছেন রাষ্ট্রপতি নিজেই বলেছিলেন যে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগপত্র তিনি পেয়েছেন আর পরে সাংবাদিকদের বলছেন পাননি।

‘এর অর্থ হলো এখন তিনি মিথ্যা বলছেন, যা শপথ ভঙ্গের নামান্তর। এর মাধ্যমে তিনি ওই পদে থাকার অধিকার হারিয়েছেন’, বিবিসি বাংলাকে বলছিলেন তিনি।

তবে জামায়াতে ইসলামী বর্তমান রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ কিংবা অপসারণ চায় কি না, এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব দেননি তিনি।

 

সূত্র: কালের কণ্ঠ

সর্বশেষ - জাতীয়