বৃহস্পতিবার , ২৯ আগস্ট ২০২৪ | ১৪ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও দুর্নীতি
  3. অর্থ ও বাণিজ্য
  4. আইন আদালত
  5. আন্তর্জাতিক
  6. কৃষি
  7. খেলা
  8. চাকরি
  9. ছবিঘর
  10. জাতীয়
  11. তথ্যপ্রযুক্তি
  12. দুর্ঘটনা
  13. ধর্ম
  14. নারী
  15. নির্বাচিত খবর

ভুয়া সনদে চাকরি করছেন নওহাটা কলেজের প্রভাষক আব্দুর রব

Paris
আগস্ট ২৯, ২০২৪ ১২:১৬ পূর্বাহ্ণ

নিজস্ব প্রতিবেদক :
রাজশাহীর নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজে একের পর এক প্রতারণা করে চাকরি করছেন প্রভাষক আব্দুর রব। তিনি এই কলেজে প্রভাষক হিসাবে নিয়োগ পাওয়ার পর চাকরি বাঁচাতে ও বেতন কাঠামো অনুমোদনের জন্য একের পর এক প্রতারণার আশ্রয় নিলেও কলেজ কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

নিয়োগের সময় সার্টিফিকেটে অসঙ্গতি, জাল সার্টিফিকেট প্রদান, কলেজে উপস্থিতি নিয়ে জটিলতা, অধ্যক্ষকে ভয়ভীতি দেখানোসহ তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। প্রভাষক আব্দুর রবের এমন কর্মকাণ্ডে নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজের যেমন সুনাম নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ক্ষোভ বিরাজ করছে শিক্ষকদের মাঝে। এতে নষ্ট হচ্ছে কলেজে শিক্ষার পরিবেশ।

জানা গেছে, নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজে শিক্ষক ও কর্মচারি নিয়োগের নিমিত্তে গত ২০১৪ সালের ১২ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয় সরকারী বিধি মোতাবেক ইতিহাস ও ইসলামের ইতিহাস ও সাংস্কৃতি বিষয়ে শূণ্য পদে একজন প্রভাষক ও ডিগ্রি পর্যায়ে ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে দুইজন প্রভাষক নিয়োগ দেয়া হবে। ইসলাম শিক্ষা পদে বেশ কয়েকজন আবেদন করেন। তারমধ্যে আব্দুর রব একজন।

নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ আবেদনগুলো যাচাইবাছাই করে ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা নেনব। পরে আব্দুর রবকে চুড়ান্ত প্রার্থী নির্বাচিত করা হয়। তিনি ৭ জন প্রার্থীর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৯ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে নিয়োগ বোর্ড আব্দুর রবকে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করে। সেই সুপারিশ অনুযায়ী কলেজ কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়োগ দেন। ২০১৫ সালের ৮ জানুয়ারী তিনি কলেজে যোগদান করেন।

এদিকে আব্দুর রব প্রভাষক পদে আবেদনের সময় তার সর্বশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র জমা দেন কলেজে। তার দেয়া শিক্ষাগত সনদে অসঙ্গতিতে ভরা। তিনি আবেদনপত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ দেন, দাখিল পাস ২০০২, জিপিএ ৩.১৭, আলিম পাস ২০০৬, জিপিএ ৩.৬৭, ফাজিল পাস ২০০৯, সিজিপিএ ২.৩৩, কামিল পাস ২০১১, সিজিপিএ ৩.৩০, দেখানো হয়। তার নিবন্ধন নং এসটি.আর.সি.এ : ৪২৭১৮৩০১/১৪।

এরপর তিনি বেতন কাঠামোর (এমপিও) জন্য আরেক ধরনের সনদপত্র কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দেন। আবেদনের সময় যেসব শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদপত্র তিনি জমা দিয়েছিলেন তার সাথে বেতন কাঠামোর জন্য দেয়া সনদের কোন মিল নেই। বেতনের জন্য যে সনদপত্র তিনি দিয়েছেন তা হলো, দাখিল পাস ২০০২, জিপিএ ৩.১৭, আলিম পাস ২০০৬, জিপিএ ১.৯২, ফাজিল পাসের সাল ২০০৯, সিজিপিএ ২.৩৩, কামিল পাস ২০১১, সিজিপিএ ৩.৩০। সাথে তিনি অতিরিক্ত বিএ (সম্মান) ও এমএ পাসের সনদ দিয়েছেন। যা আবেদনের সময় দেয়া ছিল না।

এতে দেখা গেছে, তিনি বিএ (সম্মান) পাস করেছেন ২০১০ সালে, যার সিজিপিএ ৩.৫৫ ও এমএ (ইসলামী স্ট্যাডিস) পাস করেছেন ২০১১ সালে, যার সিজিপিএ ৩.৬০। তিনি দারুল ইহসান বিশ^বিদ্যায় থেকে এমএ পাস করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আর বিএ (সম্মান) পাস করেছেন ঢাকার কোনো এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে।

যদিও তার সার্টিফিকেটগুলো যাচাই-বাছাই করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানতে পারে দারুল ইহসান ইউনিভারসিটির দেয়া সার্টিফিকেট ভুয়া। ্টমেন কি বিএ পাসের সার্টিফিকেটেও অসঙ্গতি রয়েছে।

দেখা গেছে, ২০১১ সালে আব্দুর রব কামিল পাস করেছেন। আবার একই সালে তিনি এমএ পাস করেছেন। আবার দেখা গেছে তিনি ২০১০ সালে বিএ (সম্মান) পাস করেছেন, আর ২০১১ সালে আবার কামিল পাস করেছেন ? একজনই ব্যক্তি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটা প্রতারণার আশ্রয় নিতে পারে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটগুলো জ¦লন্ত উদাহরণ।

এদিকে নিয়োগ বিধিতে বলা হয়েছে স্বীকৃত বিশ^বিদ্যালয় হতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিসহ ২য় শ্রেণি/সমমানের স্নাতকত্তোর ডিগ্রি অথবা স্বীকৃত বিশ^বিদ্যালয় হতে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চার বছর মেয়াদি ২য় শ্রেণি/ সমমানের স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি, বর্ণিত সর্বশেষ ডিগ্রি ব্যতিত শিক্ষা জীবনের অন্যান্য স্তরে যেকোনো একটি ৩য় শ্রেণি/ সমমান গ্রহনযোগ্য হবে। এ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, প্রভাষক আব্দুর রবের সবকটি সার্টিফিকেটবিবেচনা করলে তিনি ওই পদে আবেদনের যোগ্যতাই রাখেন না। এছাড়াও নিয়োগ বোর্ডে দেয়া তার সনদের তথ্যে ৮ পয়েন্ট দেখানো হয়েছে। সেটিও হবে ৭ পয়েন্ট।

নিয়োগ পাওয়ার পর তিনি গত সাড়ে ৯ বছর যাবৎ পদটির বেতন কাঠামো (এমপিও) করার চেষ্টা করছেন। কিন্তু তার ভুয়া সার্টিফিকেট ও অন্যান্য সার্টিফিকেটে অসঙ্গতির কারণে তা করতে পারেননি। এমপি আেেনর সুপারিশে তিনি নিয়োগ পেলেও বেতন করতে পারেননি। সর্বশেষ তিনি দুর্গাপুর-পুঠিয়া আসানের সাবেক এমপি কাজী আব্দুল ওয়াদুদ দারার স্বরণাপন্ন হন। এরপর সাবেক এমপি দারা রবকে তার সাবেক পিএস শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আলমগীর হোসেনের কাছে পাঠান। সেখানে উপসচিব আলমগীর হোসেন চলতি বছরের গত ৫ মার্চ তার আবেদনটি রিভিউ করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠান। সেখানে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শেখ মোমেনা বেগমকে দিয়ে গত ১১ জুলাই তার পদ সৃজন করে নেন। বর্তমান প্রভাষক আব্দুর রবের এমটিপও’র পুরো কাগজপত্র শিক্ষা মন্ত্রনালয রযেছে।

জানা গেছে, আব্দুর রব রাজশাহী জেলা যুবলীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক। এমপি আয়েন উদ্দিন নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজের সভাপতি থাকার সময় রবের চাকরি হয়। রব লিখিত ও ভাইভা পরীক্ষায় অযোগ্য হওয়ার পরও শুধু মাত্র এমপি আয়েনের সুপারিশে তাকে নম্বর বেশি দিয়ে উত্তীর্ণ করা হয়। তিনি চাকরি পেলেও বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন রাজনীতি করে। তিনি মাসের বেশিরভাগ সময় কলেজে উপস্থিতি থাকতেন না। কর্তৃপক্ষ তাকে কলেজে উপস্থিত হওয়ার জন্য নিদের্শনা দিলে উল্টো কলেজ কর্তৃপক্ষকে হুমকি দেয়া হতো। অধ্যক্ষকে ভয় দেখানো হতো। যার কারণে টানা প্রায় সাড়ে ৯ বছর তিনি কলেজ না করেই পার করেছেন। সম্প্রতি অধ্যক্ষ তাকে কলেজে আসার তাগিদ দেয়ায় অধ্যক্ষকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। এর ফলে তাকে কলেজ থেকে শোকজ করা হয়।

এব্যাপারে নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ, আবু সুফিয়ান মোহাম্মদ মোস্তফা জামান জানান, আব্দুর রবের চাকরি হয়েছে বিগত অধ্যক্ষের সময়। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর তার কোনো কাগজপত্র আমাকে দেখানো হয়নি। আব্দুর রব নিজেই বেতন করার জন্য কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন। একি সালে কামিল ও এমএ পাস কিভাবে সম্ভব, এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, শুনেছি তার নিয়োগ প্রক্রিয়, সার্টিফিকেট নিয়ে বিতর্ক আছে। তার এমএ সার্টিফিকেট ভুয়া যেটা মন্ত্রনালয় জানিয়েছেন। সেই জায়গা থেকে আব্দুর রবের চাকরি বৈধ নাকি অবৈধ প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি মন্ত্রনালয়ের ব্যাপার। এখানে আমার কিছু বলার নেই, করাও নেই।

এব্যাপারে নওহাটা সরকারী ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক আব্দুর রব জানান, আমি কাগজপত্র দিয়ে নিয়োগের জন্য আবেদন করেছি। সেই কাগজপত্র দেখে কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি দাবি করেন তার দেয়া সনদপত্রে কোনো অসঙ্গতি নেই।

সর্বশেষ - রাজশাহীর খবর