৩৩ বছরেও চালু হয়নি কাহালু বেতার কেন্দ্র

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

 

বগুড়ার কাহালু উপজেলায় অবস্থিত বেতার কেন্দ্রটি দেখে অনেকেই মনে করেন এটি বন্ধ কিংবা অচল। আজ থেকে ৩৩ বছর আগে এই কেন্দ্রটি স্থাপন করা হলেও আজও শুরু হয়নি নিজস্ব কোনো সম্প্রচার। অনুষ্ঠান সম্প্রচার বঞ্চিত থাকায় এতে পিছিয়ে পড়ছে এ অঞ্চলের শিল্পী, কলাকুশলী, সাংস্কৃতিক ও সংবাদকর্মীরা।

কাহালু বেতার অফিস সূত্রে জানা যায়, বগুড়া জেলা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার পশ্চিমে বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের দক্ষিণে কাহালু উপজেলার দরগাহাট বাজারের পাশে বেতার কেন্দ্রটি নির্মাণ করা হয়। কোলাহলমুক্ত নিরিবিলি পরিবেশে ১৯৮৫ সালে ২৫ একর জমির ওপর প্রায় ৮ কোটি ৫১ লাখ ৬ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয় এই বেতার কেন্দ্র। সেই সময় নির্মিত হলেও বাংলাদেশ বেতারের একটি উচ্চশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র এটি। এ কেন্দ্রের ফ্রিকোয়েন্সি ৮৪৬ কিলোহার্জ, তরঙ্গ দৈর্ঘ্য ৩৫৪.৬০ মিটার, ১০০ কিলো ওয়াট ট্রান্সমিটার ক্ষমতা। বর্তমানে এ কেন্দ্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রের অনুষ্ঠান রীলে (সম্প্রচার) করা  হয়। রীলে কার্যক্রম সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে রাত ১১-১৫ মিনিট পর্যন্ত প্রচার পেয়ে থাকে।

এরপর প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর কেটে গেলেও চালু হয়নি বগুড়া বেতার কেন্দ্র। উত্তরাঞ্চলের মধ্যে প্রচার সক্ষমতার দিক থেকে অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন কেন্দ্রটি রেকর্ডিং স্টুডিও না থাকায় শুধু ভবনটি দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয় অনুষ্ঠান সম্প্রচার না হওয়ায় বঞ্চিত এ অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মী, কলাকুশলী ও সংবাদকর্মীরা। বেতার কেন্দ্রটি চালু হলে বগুড়ার সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে সংস্কৃতজনরা প্রত্যাশা করছেন। জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের কাছে বাংলাদেশ বেতারের কাহালু কেন্দ্রটি শিগগিরই পূর্ণাঙ্গরূপে সম্প্রচারের দাবি জানিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।

জানা গেছে, সারাদেশের পাঁচটি ১ শ কিলোওয়াট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বেতার কেন্দ্রের মধ্যে অন্যতম বগুড়ার এই কেন্দ্রটি। ঢাকার বাইরে সারাদেশে মাত্র ৫টি ১০০ কিলোওয়াট উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বেতার কেন্দ্র রয়েছে। উত্তরাঞ্চলের রাজশাহী, রংপুর ও ঠাকুরগাঁও থেকে মাত্র ১০ কিলোওয়াট ট্রান্সমিটার দিয়েই পূর্ণাঙ্গ বেতার কেন্দ্র চালু আছে। এফএম, স্টুডিও-সহ নানা সমস্যায় জর্জরিত থাকার কারণে আজও নিজস্ব সম্প্রচারে আসতে পারেনি মাইক্রোওয়েভ লিংকে ১০০ কিলোওয়াট উচ্চশক্তির ট্রান্সটারের বাংলাদেশ বেতারের বগুড়ার কাহালু কেন্দ্রটি।

এদিকে পূর্ণাঙ্গ বেতার কেন্দ্রের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সাংষ্কৃতিক সংগঠন মানববন্ধনসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপি পাঠালেও সুফল পাওয়া যায়নি। অথচ বগুড়ার বেতার কেন্দ্রটি চালু হলে স্বাস্থ্যসেবা, কৃষি পরামর্শ, নাটক ও অন্যান্য অনুষ্ঠান স্থানীয় ভাষায় শুনতে পারবেন এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। কর্মসংস্থান হবে অসংখ্য শিল্পী, নাট্যকর্মী, কলাকুশলী ও সাংবাদিকের। উজ্জীবিত হবে এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ও নাট্য সংগঠনগুলো। কৃষি, শিল্প সাহিত্য, শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়ে যাবে এখানকার শিশু-কিশোররা।

কাহালু থিয়েটারের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নাট্যভিনেতা মনসুর রহমান তানসেন জানান, অবহেলিত শিল্পীদের কর্মসংস্থানের একটি মাধ্যম ছিল এই বেতার কেন্দ্র। এটি পুরোপুরি চালু হলে এই অঞ্চলের সাংস্কৃতিক কর্মীদের জীবনমান উন্নত হয়ে যেত। সবসময় কাজের মধ্যে থেকে নিজেদের পরিবার পরিজনকে নিয়ে ভালোভাবে থাকতো পারতো।

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট বগুড়ার সভাপতি তৌফিক হাসান ময়না বলেন, বেতার কেন্দ্র চালুর দাবিতে বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। আর যে জনপদে একটি বেতার কেন্দ্র থাকে তাকে ঘিরেই সেই অঞ্চলের সংস্কৃতিক আন্দোলত উজ্জীবিত হয়, বেগবান হয়, সংস্কৃতি চর্চায় অনেকেই আগে আসেন। তাই এখানে পূর্ণাঙ্গ বেতার কেন্দ্র চালু করা হোক।

এ প্রসঙ্গে বগুড়া বেতার কেন্দ্রের আবাসিক প্রকৌশলী মো. শহিদুর রহমান জানান, বগুড়ার এই কেন্দ্রটি বাংলাদেশ বেতারের উচ্চশক্তি প্রেরণ কেন্দ্র-৫। বর্তমানে এই কেন্দ্রটির মাধ্যমে বাংলাদেশ বেতার রাজশাহী কেন্দ্রের অনুষ্ঠান রীলে (সম্প্রচার) করা হয়। তবে নিজেস্ব কোনো প্রচার কেন্দ্র ও এফ এম নেই।

 

সূত্র: কালেরকন্ঠ