রাজশাহীতে পৌরসভা নির্বাচন ঘিরে আ.লীগে বাড়ছে উত্তেজনা, তৎপর মৌসুমি নেতারাও

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশব্যাপী আগামী জানুয়ারি থেকে পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এ নির্বাচনঘিরে রাজশাহীর ১৪টি পৌর এলাকায় এরই মধ্যে সরব হতে শুরু করেছেন প্রার্থীরা। মেয়র থেকে শুরু করে ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদের প্রার্থীরাও এরই মধ্যে ছুটতে শুরু করেছেন সাধারণ মানুষের দোর-গোদাড়ায়। পাশাপাশি দলীয় মনোয়ন পেতে চলছে নানা লবি-গ্রুপিং। এটি করতে গিয়ে নিজের অবস্থানকে শক্ত করতেও মাঠে প্রার্থীরা ছুটছেন দলীয় নেতাদের কাছে সমর্থন পাওয়ার আশায়।

পাশাপাশি নিজ কর্মী-সমর্থকদেরও নানাভাবে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। ফলে এ নিয়ে রাজশাহীর কোথাও কোথাও এরই মধ্যে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। আবার কোথাও উড়ে গিয়ে জুড়ে বসছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী মৌসুমি নেতারা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগের স্থানীয় এমপি বা প্রভাবশালী নেতাদের আশ্রয়ে এসব মৌসুমি প্রার্থীর আনা-গোনা দেখা মিলছে পৌর এলাকায়। তাঁরা দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। আর এ নিয়ে আওয়ামী লীগের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম ক্ষোভ এবং উত্তেজনা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, কোথাও কোথাও দীর্ঘদিন ধরে পৌর মেয়র হিসেবে রাজত্ব করে গেলেও দলীয় নেতা-কর্মীদের তেমন মূল্যায়ন না করায় সেখানেও পাল্টা প্রভাবশালী প্রার্থীর উত্থান ঘটেছে। সেসব প্রার্থীকে দমাতে এরই মধ্যে নানাভাবে চেষ্টা চালাচ্ছেন বর্তমান মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করা আওয়ামী লীগ নেতারা। এ নিয়েও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিচ্ছে চরম উত্তেজনা। রাজশাহীর ১৪টি পৌরসভার মধ্যে অধিকাংশ পৌর এলাকাতেই ঘটছে এমন ঘটনা।

রাজশাহীর তানোর পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সেখানে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবুল বাসার সুজন নামের এক মৌসুমি নেতার নাম ঘোষণা করেছেন স্থানীয় এমপি ওমর ফারুক চৌধুরি। সুজন হলেন রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা। তানোরের ভোটারও নন তিনি। রাজশাহী শহরেও রয়েছে তাঁর বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এমনকি তিনি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের বোয়ালিয়া থানা পশ্চিম শাখার সহসভাপতি পদেও রয়েছেন।

স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, গত পৌরসভা নির্বাচনে এ পৌরসভায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমরুল হক। তিনি মাত্র ১৩ ভোটের ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমানের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। সেই হিসেবে এবারো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ইমরুলকেই চান অধিকাংশ নেতাকর্মী। কিন্তু হঠাৎ করে এমপি ফারুক চৌধুরি উড়ে-গিয়েজুড়ে বসা মৌসুমি নেতা আবুল বাসার সুজনের নাম ঘোষণা করায় চরম ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে নেতাকর্মীদের মাঝে।

জানতে চাইলে তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘এমপি গায়ের জোরে সুজনকে প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণা করেছেন। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ ও উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। সুজন রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। তার বাড়িও রাজশাহীতে। কিন্তু সে কিভাবে তানোরে এসে পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়? আমরা তাঁকে প্রার্থী হিসেবে মানি না। আমাদের প্রার্থী ইমরুলই থাকবেন।’

রাজশাহীর দুর্গাপুরে গত ১০ বছর ধরে মেয়র হিসেবে রয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন। কিন্তু তিনি দলীয় নেতাকর্মীদের জন্য কোনো কাজ না করে নিজের এবং পরিবারের সদস্যদের নামে অর্থ-সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন বলে আওয়ামী লীগ কর্মী মোজাম্মেল হক অভিযোগ করেছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। আগামী নির্বাচনে তোফাজ্জলকে মনোনয়ন না দিয়ে দলের অন্য কোনো ত্যাগী নেতাকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়ারও দাবি তুলেছেন তিনি। এছাড়াও তোফাজ্জলকে সরিয়ে এবার মনোনয়ন পেতে পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল মান্নান ফিরোজ ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কার্যনিবার্হী কমিটির সদস্য ও উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি প্রভাষক আমিনুল হক টুলুসহ অন্তত ৫ জন নেতা দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন জেলা নেতাদের কাছে। ভোটারদের কাছেও যাচ্ছেন তাঁরা। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচিও চলছে। ফলে দলীয় নেতাদের মাঝে দেখা দিয়েছি বিভক্তি ও উত্তেজনা।

জেলার তাহেরপুর পৌরসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে সেখানেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম বিভেদ। নিজের অবস্থান ধরে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীদের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আবুল কালাম আজদ। কিন্তু তাঁকে সরিয়ে এবার মনোয়ন পেতে পোস্টার সাটিয়েছেন স্বীকৃত সর্বহারা ক্যাডার আব্দুর রাজ্জাক ওরফে আর্ট বাবু।

এ নিয়ে এরই মধ্যে গত এক সপ্তাহে পাল্পাপাল্টি মারপিটের ঘটনাও ঘটে। জেল থেকে জামিনে এসে আর্ট বাবু আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ফিরতে চান বলে দাবি করে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার নেতাকর্মীদের মারপিট করছেন মেয়র কালামের লোকজন। তিনি মূলত ত্রাশের রাজত্ব কায়েম করছেন।’

অন্যদিকে মেয়র আবুল কালাম আজাদ অভিযোগ করেন, আর্ট বাবুর মতো স্বীকৃত সর্বহারা ক্যাডার এলাকায় নির্বাচনী পোস্টার সাটিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে পোস্টার সাটানোয় সাধারণ মানুষের মাঝে ভীতির সঞ্চার হয়েছে। মানুষ আতঙ্কে আছে।

এর বাইরে জেলার বাঘা, আড়ানী, গোদাগাড়ী, মন্ডুমালা, কাঁকনহাট, নওহাটা, কাটাখালি এবং কেশরহাট, পুঠিয়া ও চারঘাট পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঝে দেখা দিয়েছে চরম উত্তেজনা ও লবিং-গ্রুপিং।

জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেরাজ উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বড় দল। এখানে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের অভাব নাই। এ নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা থাকবেই। কিন্তু আমরা যাচাই-বাছাই করেই কেন্দ্রে তালিকা পাঠাবো। মনোনয়ন পেলে সবাই দলীয় প্রার্থীর হয়েই কাজ করবেন।’

স/আর