৬ মাসের মধ্যে সরকারিভাবে করোনা টিকা উৎপাদনের সুপারিশ

 

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

দেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী একমাত্র সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কম্পানির মাধ্যমে করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদনের সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির বৈঠকে আগামী ৬ মাসের মধ্যে টিকা উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া করোনা টিকা নিয়ে যাতে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান লাভবান না হয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

আজ মঙ্গলবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম। বৈঠকে কমিটির সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক, মুহিবুর রহমান মানিক, ডা. মো. মনসুর রহমান, ডা. মো. আব্দুল আজিজ, সৈয়দা জাকিয়া নুর ও মো. আমিরুল আলম মিলন এবং সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কমিটি সূত্র জানায়, এর আগে গত ২০ জুন অনুষ্ঠিত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে সরকারিভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়ে আলোচনা হয়। ওই বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, গত এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব শেফিল্ডের গবেষক সানজান কে দাস স্বাস্থ্য সচিবের কাছে সরকারি পর্যায়ে টিকা উৎপাদনের লক্ষ্যে অবকাঠামো তৈরি করতে একটি প্রস্তাব পাঠান। সানজান দাসের টিকা তৈরির প্রযুক্তির আরএনডি ও প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়াল হয়েছে বলে কার্যপত্রে বলা হয়। সরকারি প্রতিষ্ঠান এসেনশিয়াল ড্রাগসের বিদ্যামান কিছু অবকাঠামো এবং নতুন কিছু যন্ত্রপাতি কিনলে টিকা উৎপাদন সম্ভব বলে কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়। বিষয়টির কারিগরি দিক পর্যালোচনার ব্যাপারে মন্ত্রণালয় বিবেচনা করছে বলে জানানো হয়।

বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, সরকারিভাবে করোনা টিকা উৎপাদনের জন্য জোরালোভাবে বলা হয়েছে। কমিটি বলেছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে এসেশিয়াল ড্রাগস কম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে টিকা উৎপাদন করতে হবে। টিকা উৎপাদনের ক্ষেত্রে দুই দেশের সরকারের মধ্যে (জিটুজি) চুক্তি করার জন্যও বলা হয়েছে। এর আগেও সরকারিভাবে করোনা টিকা উৎপাদনের সুপারিশ করা হয় বলে তিনি জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের কাছ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা কোভিশিল্ডের তিন কোটি ডোজ চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউট দুই চালানে ৭০ লাখ ডোজ পাঠানোর পর ভারত রফতানি বন্ধ করে দিলে টিকার সংকটে পড়ে বাংলাদেশ। পরে সরকার অন্য উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের চেষ্টা শুরু করে। জরুরিভাবে দেশে সিনোফার্ম ও রাশিয়ার স্পুটনিক-ভি টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়। চীন ও রাশিয়া থেকে কেনার পাশাপাশি দেশে যৌথ উৎপাদনের আলোচনাও তখনই শুরু হয়। এরই প্রেক্ষাপটে গত ১৬ আগস্ট সরকার ও ইনসেপটার মধ্যে হওয়া চুক্তির আওতায় চীন থেকে বাল্ক টিকা এনে বাংলাদেশে ভায়ালে ভরা ও লেবেলিংয়ের কাজটি করবে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের কাছ থেকে সরকার সেই টিকা কিনে নেবে। সব ঠিক থাকলে ‘মাস তিনেকের মধ্যে’ ইনসেপটা দেশে কোভিড টিকার কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।

বৈঠকে বেসরকারীভাবে টিকা উৎপাদনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান কমিটির একজন সদস্য। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, কমিটির বৈঠকে আমরা বলেছি, করোনাভাইরাসের টিকা উৎপাদন নিয়ে যাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের লাভের কথা ভাবা না হয়। টিকা আমাদের অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সরকার সর্বাত্মক চেষ্টা করছে। এখানে কোনো মহল যাতে কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে লাভ দেওয়ার চিন্তা না করে। এর আগে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির পক্ষ থেকে বেসরকারি পর্যায়ে টিকা কার্যক্রম পরিচালনায় বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনা দেখা দিবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হয়।

কমিটি সূত্র জানায়, বৈঠকে করোনা টিকা প্রদানে বয়সসীমা আরো কমিয়ে আনার সুপারিশ করা হয়। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে শহীদ ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্য কর্মীদের জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা’ দ্রুততম সময়ে তাঁদের পরিবারের নিকট পৌঁছানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এ ছাড়া বাংলাদেশ কর্ম কমিশন কর্তৃক সুপারিশপ্রাপ্ত ডাক্তারদের দ্রুত নিয়োগদানের তাগিদ দেওয়া হয়।

সূত্র:কালের কন্ঠ