৪৫ বছরেও হয়নি চীনামাটি ও রূপার উত্তোলন কাজ

কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ:
নওগাঁর পত্নীতলায় উৎকৃষ্ট মানের চীনামাটি ও রূপার সন্ধান পাওয়া গেলেও দেশ স্বাধীনের পর প্রায় ৪৫ বছর পার হলেও উত্তোলনের কার্যক্রম লক্ষ্য করা যায়নি।

বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের (জিএসবি) তৎকালিন একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ড্রিল কোরের শিলা খন্ডে যেখানে টনপ্রতি ১৪ থেকে ২৮ গ্রাম রূপার উপস্থিতিকে আকর হিসাবে এবং ইন্দোনেশিয়ায় টনপ্রতি ১৪৭ গ্রাম রূপার উপস্থিতিকে রিসোর্স হিসাবে উল্লে¬খ করা হয়। পত্নীতলায় ড্রিল কোরের শিলাখন্ডে প্রাপ্ত রূপার পরিমাণ টনপ্রতি ২৫ গ্রাম।

সূত্রটি জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চলের ভূগর্ভে যেসব শিলায় সোনা, রূপাও দস্তার সন্ধান পাওয়া গেছে সেগুলো মূলত প্রিক্যামব্রিয়ান আগ্নেয় ও রূপান্তরিত শিলা এবং রাজমহল ট্র্যাপ। সন্ধানপ্রাপ্ত এসব মূল্যবান ধাতব পদার্থের অর্থনৈতিক মূল্যায়নের জন্য ব্যাপক ভূতাত্ত্বিক, ভূরাসায়নিক জরিপ ও ভূতাত্ত্বিক খননের প্রয়োজন রয়েছে।

নওগাঁ জেলা সদর হতে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে পত্নীতলা উপজেলার সদর নজিপুর। এই উপজেলা সদর হতে প্রায় ৫ কিলোমিটার উত্তরে পাটিচরা ইউপির নজিপুর ধামইরহাট আঞ্চলিক মহাসড়কের পূর্ব পার্শ্বে জিয়া বাজার সংলগ্ন আমবাটি গ্রামটি।

এই গ্রামের পাশে চকরাধাঁ মৌজার একটি পুকুর পাড়ে ১৯৫৮ সাল থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত ভূতাত্ত্বিক অধিদপ্তর এর একটি শক্তিশালী অনুসন্ধানী দল জরিপ, জায়গা নির্ধারণ ও খননকাজ পরিচালনা করেন। এরপর ভূপৃষ্ট থেকে প্রায় ২ হাজার ফুট গভীরে শত শত স্টিলের পাইপ বসিয়ে এ খনন কার্যক্রম পরিচালনা করেন সংশিষ্ট অধিদপ্তরের লোকজন বলে স্থানীয় প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, এ প্রকল্পের জরিপও খনন কার্যক্রম চলাকালে স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে ছিল জনসাধারণের মাঝে। তৎকালে পূর্বপাকিস্থান ও পশ্চিম পাকিস্থানের মধ্যে বিরোধ চরমভাবে দানা বেঁধে উঠতে শুরু করলে ক্রমান্বয়ে প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এমনকি দেশ স্বাধীন হওয়ার পর প্রায় ৪৫ বছর পার হয়ে গেলেও কোন সরকারের আমলেই গুরুত্ব পায়নি এ প্রকল্পটি। দেশের খনিজ মানচিত্রে এ প্রকল্পটি একটি বিন্দুতে স্মৃতি হয়ে রয়েছে মাত্র।

আমবাটি গ্রামের জমির মালিক আলীমুদ্দিনের ছেলে আব্দুর রহমান (৬০) বলেন, উল্লে¬খিত সময়ে এ খনিজের স্থানটিতে খননকার্য চলাকালে প্রায় শতাধিক দেশী-বিদেশী কর্মকর্তা কর্মচারী কর্মরত ছিলেন। এ জরিপ টিমটি প্রায় দশবছর এ কার্যক্রম চালান।

ভূমির মালিকসহ স্থানীয় ফয়জুল ইসলাম (৬৫) জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর পত্নীতলা উৎকৃষ্টমানের চীনামাটির সন্ধান পাওয়া গেছে বলে ৫ম শ্রেণীর পাঠ্য বইতে অর্ন্তভুক্ত হলেও স্বাধীনতা উত্তর কোন সরকারই এ খনিজ সম্পদটি কাজে লাগানোর ব্যাপারে কোন উদ্যোগ গ্রহন করেননি।

স্থানীয়দের অনেকেই জানান, বর্তমানে আবাদি জমির মাঝখানে খননকৃত জায়গাটির স্মৃতি চিহ্ন পিলারগুলো বিঘ্ন সৃষ্টি করার কারনে জমির মালিকরা ভাঙ্গার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। অনেকের আশংকা এ স্মৃতি চিহৃ‎গুলোও একদিন হারিয়ে যাবে। তারা জানান, উলে-¬খিত স্থানটিসহ একই ইউপির চকনিরখিন মোড় ও গাহন মৌজায় ২টি স্থানেও একই সময় জরিপও খননকার্য চালানো হয়। তবে কোন স্মৃতি চিহ্ন বর্তামানে খুজে পাওয়া যায় না।  বরেন্দ্র এলাকায় পল¬ী অঞ্চলে এ প্রকল্পটির স্থান হওয়ায় প্রচার মাধ্যমগুলোর সুনজরে আসেনি বললেই চলে।

অপরদিকে, জেলার বদলগাছী উপজেলার তাজনগর গ্রামের চুনা পাথর খনির খনন সহ উত্তোলনের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া একই উপজেলার ভগবানপুর গ্রামে কয়লার সন্ধান পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে জরিপ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে।

জিএসবির পরিচালক সিরাজুল ইসলাম খান জানান, উক্ত খনির ১টি কুপের খনন কাজ শেষ হয়েছে এবং অপর ১টি কুপের খনন কাজ শুরু হয়েছে। তিনি আরোও জানান অচিরেই এই খনি থেকে প্রচুর মূল্যবান কয়লা পাওয়া যাবে।

স/আ