৩ হাজার টাকা বেতন নিয়ে শিক্ষার্থীদের ডেকেছে রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজ

নিজস্ব প্রতিবেদক:


করেনার সঙ্কটময় সময়ে ৩ হাজার টাকা বেতন চেয়ে নোটিশ দিয়েছে রাজশাহী বরেন্দ্র কলেজ। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের এমন নোটিশ দেয় গত ৩০ জুন। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ- বেতন না দিলে ফরমপূরণে স্বাক্ষর করতে দেওয়া হবে না। তবে অভিযোগটি অস্বীকার করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধান জানান- সমস্যার কথা শিক্ষার্থীরা জানালে আমরা দেখবো।



তবে গত ২০২০ সালে ১৮ নভেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয় থেকে জেলা শিক্ষা কার্যালয়গুলোতে একটি নির্দেশনা পাঠানো হয়। এতে বলা হয়, অধিদপ্তরের আওতাধীন বেসরকারি মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহ (এমপিওভুক্ত ও এমপিওবিহীন) শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টিউশন ফি গ্রহণ করবে কিন্তু অ্যাসাইনমেন্ট, টিফিন, পুনঃ ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন ও উন্নয়ন বাবদ কোনো ফি গ্রহণ করবে না বা করা হলে তা ফেরত দেবে। অথবা টিউশন ফির সঙ্গে সমন্বয় করবে। এ ছাড়া অন্য কোনো ফি যদি অব্যয়িত থাকে, তা একইভাবে ফেরত দেবে বা টিউশন ফি এর সঙ্গে সমন্বয় করবে।

ওই নির্দেশনায় আরও বলা হয়, একইভাবে ২০২১ সালের শুরুতে যদি কোভিড-১৯ পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এমন কোনো ফি—যেমন টিফিন, পুনঃ ভর্তি, গ্রন্থাগার, বিজ্ঞানাগার, ম্যাগাজিন, উন্নয়ন গ্রহণ করবে না, যা ওই নির্দিষ্ট খাতে শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যয় করতে পারবে না। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পুনরায় আগের মতো সব ধরনের যৌক্তিক ফি গ্রহণ করা যাবে।

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন জানান, ‘বিষয়টি অমাবিক। এই সময় একসঙ্গে ৩ হাজার টাকা দেওয়া অনেক শিক্ষার্থীর পক্ষে সম্ভব না।’



বরেন্দ্র কলেজ নোটিশ সূত্রে জানা গেছে, ‘২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের দ্বাদশ শিক্ষার্থীদের জানানো হয়েছে এপ্রিল ২০২০ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত মাসিক বেতন ২০০ টাকা করে ১৫ মাসের ৩ হাজার টাকা ১৫ জুলাই তারিখের মধ্যে দিতে বলা হয়।’  তবে পরে তা শিক্ষার্থীদের মৌখিক ভাবে আগামী (১ আগস্ট) রোববার এর মধ্যে কলেজ থেকে রশিদ নিয়ে ব্যংকে জমা দেয়ার জন্য বলা হয়।

এদিকে, কঠোর লকডাউনে বন্ধ থাকা সত্বেও মাসিক বেতন আদায় করা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শিক্ষার্থী ও অভিবাভকরা। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে কলেজ। এরপরও এপ্রিল ২০২০ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত সম্পূন্ন বেতন দিতে বলা হয়েছে। করেনা মহামারি কারণে কর্মহীন হয়েছে অনেক অভিভাবকও। আর লকডাউন অবস্থায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডেকে বেতন আদায় করা শিক্ষার্থী ও  তার পরিবারের উপর চাপ প্রয়োগের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থীরা জনান, কলেজের বেতন ৩ হাজার টাকা ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে দিতে বলা হয়। পরে তা আগামী রোববারের মধ্যে দিতে বলা হয়। না হলে রেজিস্ট্রেশনে সই (স্বাক্ষর) করতে দেয়া হবে না। বর্তামনে আমাদের অনেকের পরিবারের পরিস্থিতি এক নয়। লকডাউনে অনেকের পরিবারের আয় বন্ধ থাকায় একসাথে ৩ হাজার টাকা দেয়া সম্ভব নয়। অবার যদি বেতন না দেয়া হয় তবে রেজিস্ট্রেশন হবে না। এই অবস্থায় পরীক্ষা দেয়া অ্যাসাইনমেন্ট কার্যক্রম নিয়ে সংশয়ে পড়তে হচ্ছে আমাদের।

বরেন্দ্র কলেজ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিতাই লাল বাছাড় বলেন, `আমরা একাদশের কোন শিক্ষার্থীর থেকে বেতন নেয় নি। এখন নেওয়া হচ্ছে। তবে কোন শিক্ষার্থীর বেতন দিতে সমস্যা হলে। তার বিষয়টি দেখা হবে।’

স/অ