৩৭ লক্ষ বছর আগের মানব-কঙ্কাল মিলল, এই প্রথম

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

গোড়ালির চারটে হাড় নিয়েই খোঁজ শুরু করেছিলেন প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। সময়টা ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৮ সালের মধ্যে। প্রায় ২০ বছর পর বুধবার সেই খোঁজ শেষ হল!

বিবতর্ন সম্পর্কিত জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে নতুন পালক যোগ করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রত্নতাত্ত্বিকেরা। প্রায় ৩৭ লক্ষ বছরের পুরনো অস্ট্রালোপিথেকাস জনগোষ্ঠীর ‘লিটল ফুট’ প্রজাতির পরিপূর্ণ কঙ্কাল উদ্ধারের চেষ্টায় সফল হলেন তাঁরা। বিলুপ্ত আদিম মানব জাতির জীবাশ্ম উদ্ধারের চেষ্টায় এ এক নতুন অধ্যায়।

দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার জনবহুল শহর জোহানেসবার্গ থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে স্টার্কফোনটেইন গুহায় প্রথম খোঁজ মিলেছিল ‘লিটল ফুট’-এর। তখন তা ছিল কয়েকটি হাড়ের সমষ্টিমাত্র। পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছিল, ওই হাড় কয়েক লক্ষ বছরের পুরনো আদিম মানব প্রজাতির। ১৯৯৫-এ সেই হাড়গুলির নাম দেওয়া হয় ‘লিটল ফুট’।

তারপর কেটে গিয়েছে বহু বছর। পরীক্ষায় বেরিয়ে আসে নানা তথ্য। জানা যায়, হাড়গুলি একটি ছোট্ট মেয়ের। সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, ওই প্রজাতির মানুষেরা তখন সবে দু’পায়ে হাঁটার চেষ্টা চালাচ্ছে। উইটওয়াটারস্ট্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং জীবাশ্মবিদ রন ক্লার্কের কথায়, ‘’হাড়গুলি খুবই নরম এবং ভঙ্গুর। কিন্তু এর গুরুত্ব বিরাট। এই হাড়ই আমাদের পূর্বপুরুষের ইতিহাস জানতে সাহায্য করবে।’’একই মত তাঁর দলের অন্যান্য গবেষকদেরও। রন জানিয়েছেন, বছর কেটে গিয়েছে এই জীবাশ্ম উদ্ধারের চেষ্টায়। তাছাড়া, সময় লেগেছে হাড়গুলি পরিষ্কার এবং খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে।

 

আদিম জনজাতি থেকে আধুনিক মানুষের বিবর্তনের পথে অনেক অন্তর্বর্তীকালীন প্রজাতির উদ্ভব হয়েছিল। তাদের মধ্যে একটি অস্ট্রালোপিথেকাস। দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথম এই প্রজাতির খোঁজ মিলেছিল। অস্ট্রালোপিথেকাস প্রজাতির প্রথম জীবাশ্ম ছিল ‘লুসি’, একটি নারী-কঙ্কাল। ইথিওপিয়ায় ওই জীবাশ্ম আবিষ্কারের পরেই হইহই পড়ে গিয়েছিল গোটা দেশে। মনে করা হত, ‘লুসি’ই ছিল আদিম মানব জাতির প্রথম নিদর্শন। একটি মানব কঙ্কাল কীভাবে গোটা দেশের গর্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে তার নিদর্শন ছিল ‘লুসি’।

পরবর্তীকালে খোঁজ মেলে ‘লিটল ফুট’-এর। এ বারও সেই আফ্রিকা। গবেষকেরা মনে করেন, এই জীবাশ্মের গোটাটাই খুঁজে বার করে আদিমতম জনজাতির রহস্যের উদ্‌ঘাটন করা হবে। তারপরেই শুরু হয় খোঁজ। তবে ‘লুসি’-রও প্রায় পাঁচ লক্ষ বছর আগে ‘লিটল ফুট’ প্রজাতিরা ছিল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। ‘প্যালিওনটোলজিক্যাল সায়েন্টিফিক ট্রাস্ট’এর অন্যতম প্রধান গবেষক রবার্ট ব্লুমেনসাইনের কথায়, ‘’এই আবিষ্কার আফ্রিকার জনজাতির কাছে খুবই গর্বের বিষয়। তবে শুধু আফ্রিকা নয়, সুপ্রাচীন এই কঙ্কাল মানবসভ্যতার অনেক রহস্যের সমাধান করবে। এই খোঁজ আধুনিক প্রজন্মের বুদ্ধিমত্তা এবং প্রযুক্তির জয়।’’