শুক্রবার নমাজের পরেই ফুঁসে উঠুক প্যালেস্তাইন, আহ্বান হামাসের

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

শুক্রবারের নমাজের পরেই কি ফুঁসে উঠবে প্যালেস্তাইন? সেই আগুনের ফুলকি কি ছড়িয়ে পড়বে গোটা পশ্চিম এশিয়ায়? আবার একজোট হয়ে যাবে আরব দুনিয়া?

স্বাধীন প্যালেস্তাইন রাষ্ট্রের দাবিতে যারা আন্দোলন করে চলছে দীর্ঘ দিন ধরে, সেই হামাসের তরফে বৃহস্পতিবার এমন ইঙ্গিত মিলেছে।

একটি বিবৃতিতে হামাসের তরফে বলা হয়েছে, তেল আভিভের বদলে জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দিয়ে আরব মুলুকে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেরুসালেমের ক্ষতি করা হয়েছে।

প্রতিবাদে প্যালেস্তাইনের মানুষকে কাল, শুক্রবার ‘ক্রোধ দিবস’ পালনের আহ্বান জানিয়েছে হামাস। নমাজের প্রার্থনা মিটলেই আমেরিকার প্রয়াসকে রোখার জন্য যা যা করা যায়, প্যালেস্তাইনের মানুষকে তাতে সামিল হওয়ার আর্জি জানিয়েছে হামাস। বিক্ষোভে ফেটে পড়তে বলা হয়েছে গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ককে।

হোয়াইট হাউস জেরুসালেমকে ইজরায়েলের রাজধানীর স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রতিবাদে, বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠেছে গোটা ইউরোপ ও পশ্চিম এশিয়া। ইতিমধ্যেই ফুঁসে উঠেছে প্যালেস্তাইন। ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা আরব দুনিয়ায়। খুশি নয় আমেরিকার ‘বন্ধু’ সৌদি আরবও। ইরান, তুরস্ক, ফ্রান্স, জর্ডন, মরক্কো ও মিশর হাবেভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা কেউই খুশি নয়। আমেরিকার বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি। প্রতিবাদে গোটা মুসলিম দুনিয়াকে একজোট হওয়ার আবেদন জানিয়েছেন তিনি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তায়িপ এর্দোগান ১৩ ডিসেম্বর থেকে ‘অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কোঅপারেশন’ (ওইসি)-এর শীর্ষ বৈঠক ডেকেছেন মুসলিম দেশগুলিকে একজোট করার লক্ষ্যে। পোপ ফ্রান্সিসও সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে।

দিল্লিও জানিয়ে দিয়েছে, ইজরায়েলের রাজধানী তেল আভিভ হোক বা জেরুসালেম, প্যালেস্তাইনের স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে ভারতের অবস্থান একটুও বদলাবে না। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রবীশ কুমার বলেছেন, ‘‘প্যালেস্তাইনের প্রশ্নে ভারতের অবস্থান বরাবরই নিরপেক্ষ। সেই অবস্থানটা তৈরি হয়েছে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি আর স্বার্থ থেকে। কোনও তৃতীয় পক্ষ তা বদলাতে পারবে না। সেই অবস্থান আগে যা ছিল, ভবিষ্যতেও তাই থাকবে।’’ প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বুধবারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে ফেসবুক, টুইটার সহ সব ধরনের সোশ্যাল মিডিয়া।

ট্রাম্প যে এমন একটা কিছু করতে পারেন, কয়েক দিন ধরেই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছিল। অভিন্ন জেরুসালেমকে চিরদিনই নিজেদের রাজধানী বলে দাবি করে এসেছে ইজরায়েল। কিন্তু ১৯৬৭ সালে ইজরায়েল যে ভাবে পূর্ব জেরুসালেমের দখল নেয়, তা নিয়ে আপত্তি রয়েছে প্যালেস্তাইনের। সেখানে ইহুদিদের কয়েক ডজন ‘অবৈধ’ বসতি সত্ত্বেও, এখনও সংখ্যাগরিষ্ঠ প্যালেস্তাইনিরাই। বরাবর তারা বলে আসছে, পূর্ব জেরুসালেমই হবে স্বাধীন প্যালেস্তাইনি রাষ্ট্রের রাজধানী। তাদের আশঙ্কা, গোটা জেরুসালেমটাই ইজরায়েলের নামে করে দিয়ে আমেরিকা এখন স্বাধীন প্যালেস্তাইনের সম্ভাবনাটাই নস্যাৎ করে দিতে চাইছে।

কিন্তু দূতাবাস সরানোর কী হবে? হোয়াইট হাউস সূত্রের খবর, ট্রাম্প সেই নির্দেশ জারি করতেও দেরি করবেন না।

১৯৯৩ সালে ইজরায়েল-প্যালেস্তাইনের মধ্যে যে শান্তি চুক্তি হয়েছিল, তাকে সম্মান জানাতেই এত দিন সব দেশ তেল আভিভেই নিজেদের দূতাবাস রেখেছে। ব্যতিক্রম নয় আমেরিকাও। সেখান থেকে দূতাবাস জেরুসালেমে সরিয়ে নেওয়া হবে না বলে প্রতি ছ’মাস অন্তর সম্মতি জানিয়ে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টরা। সেই ১৯৯৫ সাল থেকে। এ দফায় ট্রাম্পের সইয়ের তারিখ পেরিয়ে গিয়েছে দু’দিন আগে। তাই দূতাবাস আদৌ তেল আভিভে থাকবে কি না, তা নিয়ে ধন্দ তৈরি হয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনও ঘোষণা হলেও, তা কার্যকর হতে হতে অন্তত বছর চারেক লেগে যাবে বলে জানাচ্ছেন কূটনীতিকেরা। কিন্তু পশ্চিম এশিয়ায় যে নতুন ভাবে হিংসার সম্ভাবনা তৈরি হল তা মেনে নিচ্ছেন কূটনীতিকেরা। সিরিয়ার পরিস্থিতির ফলে ওই অঞ্চল অগ্নিগর্ভ হয়ে রয়েছে। এই ঘোষণার ফলে প্যালেস্তাইনে ফের আগুন জ্বলতে পারে।