ট্রেনের ধাক্কায় পশ্চিমবঙ্গে তিন হাতির মৃত্যু

সিল্কসিটি নিউজ ডেস্ক:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আলিপুরদুয়ার জেলার রাজাভাতখাওয়ায় রেললাইন পেরোনোর সময় মালগাড়ির ধাক্কায় একটি শাবকসহ তিনটি হাতি মারা গেছে। স্থানীয় সময় সোমবার সকাল ৭টা ২০ মিনিট নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে। শিলিগুড়ির দিক থেকে মালগাড়িটি আসছিল। তারই ধাক্কায় তিনটি হাতির মৃত্যু হয়।

একটি হাতি পূর্ণবয়স্ক, একটি মাঝ বয়সী এবং একটি শাবক। আলিপুরদুয়ারের রেল কর্মকর্তা অমরজিৎ গৌতম সাংবাদিকদের বলেছেন, রেল ও বন দপ্তরের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল গেছেন। এটা খুবই খারাপ ঘটনা। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। চালকের মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি নেশার ঝোঁকে এই কাণ্ড করেছেন কি না, তা দেখা হচ্ছে। এই ঘটনার পর তিন ঘণ্টার মতো ট্রেন চলাচল বন্ধ ছিল।
গত আগস্টেই দেশটিতে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু হয়েছিল। দুই মাস যেতে না যেতেই আবার তিনটি হাতি সেই ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেল।ভারতের বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলছে, দেশটিতে ২০০৯-১০ সাল থেকে ২০২০-২১ সাল পর্যন্ত ১৮৬টি হাতি ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে আসামে—৬২টি, তারপর পশ্চিমবঙ্গে ৫৭টি।

২০২১ সালেই কম্প্রট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেলের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বন ও রেল মন্ত্রণালয়—কেউই হাতির মৃত্যু ঠেকাতে নিয়ম অনুসরণ করছে না। যে জায়গাগুলো হাতির চলাচলের জায়গা বলে চিহ্নিত, সেখানেই বেশি করে হাতি মারা যাচ্ছে।

এরপর রেল একটা অভিনব পরীক্ষা করে। তারা হাতি চলাচলের জায়গায় রেললাইনের পাশে মৌমাছির চাষ করে। তাদের ধারণা ছিল, এভাবে ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু আটকানো যাবে। কিন্তু ২০১৯ থেকে ৪৫টি হাতিসহ ১৮৮টি বন্য প্রাণী ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেছে।

সাবেক ইলেক্রনিক্স ও তথ্য-প্রযুক্তিমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব লোকসভায় লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, ২০১৯ থেকে ২০২১ পর্যন্ত  ট্রেনের ধাক্কায় ৪৫টি হাতির মৃত্যু হয়েছে।

হাতি যেখান দিয়ে যাতায়াত করে, সেখানে ট্রেনের গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হয়। কোথাও ঘণ্টায় ২৫ কিলোমিটার, কোথাও ৪০-৪৫ কিলোমিটার। কিন্তু সেই নিয়মও অনেক ক্ষেত্রে মানা হয় না বলে অভিযোগ।

প্রবীণ সাংবাদিক শরদ গুপ্তা বলেছেন, ‘হাতিরা সাধারণত এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেতে পছন্দ করে। তাদেরও যাওয়ার একটা রাস্তা আছে। সেই রাস্তা যদি মানুষ বন্ধ করে দেয় অথবা সেখান দিয়ে জোরে ট্রেন চলাচল করে, তাহলে এই ঘটনা ঘটবেই। বন্য প্রাণীদের প্রতি ন্যূনতম সচেতনতা দরকার।’

গত আগস্ট মাসে ভারতের রেল জানিয়েছিল, তারা এভাবে হাতির মৃত্যু এড়তে ৭৭ কোটি রুপি দিয়ে ট্রেনগুলোতে ইনট্রুশন ডিটেকশন সিস্টেম বা আইডিএস লাগাবে। ট্রেন চালকদের বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করা হবে। রেলের কর্মকর্তারা নজরদারিও করবেন। রেললাইনে হাতি দেখলেই সেই তথ্য বন ও রেল বিভাগ বিনিময় করবে। কিন্তু এত সব সিদ্ধান্তের পরও ট্রেনের ধাক্কায় হাতির মৃত্যু আটকানো যাচ্ছে না।