নিজস্ব প্রতিবেদক:
দীর্ঘ ১৫ বছর বন্ধ থাকার পর অবশেষে আংশিক ভাবে চালু হলো রাজশাহী রেশম কারখানা। আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহী রেশম কারখানার কয়েকটি মেশিন চালিয়ে সচল করা হয়। যা সর্বশেষ চলেছিল ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর।
রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা রেশম কারখানা আবার চালু করতে বুধবার মেশিন গুলো পরীক্ষা করে দেখেন।
এসময় তিনি বলেন, রেশম কারখানা বন্ধ হওয়াতে দুর্ভাগ্য ছিল রাজশাহীবাসীর জন্য। আবার সফলতা আসবে রাজশাহীবাসীর জন্য। রাজশাহী রেশম কারখানা খুলে দেয়ার দাবিতে আমারা অনেক অন্দোলন-সংগ্রাম করেছি।
তিনি আরো বলেন, আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে রেশম কারখানা খুলছে। তিন স্তরের মাধ্যমে রেশম কারখানা চালু হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে পুরো কারখানা চালু হবে। তুত চাষের উন্নয়নে ভারত থেকে ৩০ কোটি টাকা অনুদান পাওয়া গেছে। সরকার দেবে আরও দুই কোটি টাকা। রেশম শিল্পকে এগিয়ে নিতে এই টাকা তুতচাষিদের ঋণ দেয়া হবে।
রেশম কারখানা খুলে দেয়াটা রাজশাহীবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি। তিনি সেই দাবি পূরণ করে রাজশাহীর ঐতিহ্যকে রক্ষা করছেন বলেও বাদশা বলেন।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী সরকার, বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য কামাল উদ্দিনসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নূর-উর-রহমান বলেন, কারখানার লুমগুলোর অবস্থা ভাল। খুব স্বল্প সময়ের মধ্যেই একটি চালু করা গেছে। বাকিগুলোও চালু করা গেলে রাজশাহীকে আমরা সিল্ক হাব হিসেবে পরিচিত করতে পারবো।
রাজশাহী রেশম কারখানা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা যায়, বন্ধ ঘোষণার সময় রেশম কারখানায় মোট ৬৩টি লুম ছিল। এর মধ্যে উৎপাদন চলতো পুরনো ৩৫টি লুম দিয়ে। নতুন ২৮টি লুম চালুর আগেই কারখানাটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বন্ধের আগে কারখানাটি বছরে এক লাখ ৬ হাজার মিটার রেশম কাপড় উৎপাদন করতো। আগামি দেড় মাসের ভেতর কারখানার অন্তত পাঁচটি লুম চালু করা হবে। এরপরই উৎপাদনে যাবে রেশম কারখানা। পর্যায়ক্রমে কারখানার সব লুমই চালু করা হবে। এই ৬৩টি লুম চালু হলে বছরে কাপড় উৎপাদন হবে দুই লাখ ৮৭ হাজার মিটার।
এর আগে গত শনিবার রেশম কারখানা পরিদর্শনে গিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা কারখানার লুমগুলো চালুর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরপর শুরু হয় পুরনো লুমগুলোর মেরামতের কাজ। একটি লুম এরই মধ্যে চালানোর উপযোগী করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, রাজশাহী নগরের শিরোইল বাস টার্মিনাল এলাকায় ১৯৬১ সালে সাড়ে ১৫ বিঘা জমির ওপর স্থাপিত হয় রাজশাহী রেশম কারখানা। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার প্রায় ১০ কোটি টাকার নতুন যন্ত্রপাতি কিনে কারখানাটির আধুনিকায়ন করে। লোকসান থাকলেও কোম্পানিটি তখন ভালোই চলছিল। কিন্তু মূলধন না থাকার অজুহাতে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর কারখানাটি বন্ধ করে দেয়। ওই সময় কারখানাটির কাঁধে ছিল ১ কোটি ১৩ লাখ টাকার ঋণের বোঝা। ওই সময় সেখানে কর্মরত ছিলেন প্রায় ৩০০ স্থায়ী শ্রমিক। বন্ধের পর স্থায়ী-অস্থায়ী মিলিয়ে চার শতাধিক শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েন। পাশাপাশি বিপাকে পড়েন আরো প্রায় ৫০ হাজার পলুচাষী। সে সময় আন্দোলন করেও কারখানাটি চালু করতে পারেনি রাজশাহীবাসী। বিক্রির জায়গা না পেয়ে এ অঞ্চলের পলুচাষীদের অনেকেই চাষ কমিয়ে দিতে বাধ্য হন।
স/অ