১৪ বছর পর নওগাঁ-নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়কের অসমাপ্ত কাজ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক, নওগাঁ:

অবশেষে ১৪ বছর পর নওগাঁ (রাণীনগর)-নাটোর (আত্রাই) আঞ্চলিক মহাসড়কের অসমাপ্ত কাজ শুরু হয়েছে। চলছে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ব্রিজ ও সেতু নির্মাণের কাজ। আবার কোথাও চলছে মাটি ভরাটের কাজ। এ মহাসড়কের কাজ শেষ হলে দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নওগাঁ ও নাটোরসহ কয়েকটি জেলার মানুষ যুক্ত হবে। কাজ শেষ হলে কয়েকটি জেলার মানুষ নাটোর হয়ে ৩-৪ ঘন্টায় ঢাকায় যেতে পারবে। ঢাকার সঙ্গে নওগাঁর দূরত্ব কমবে ৬০ কিলোমিটার।

সূত্রে জানা যায়, ২০০৪ সালে রাজধানী ঢাকার সাথে এই জনপদের লোকজনের জীবনমান উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্যে ব্যাপক প্রসার ঘটানোর লক্ষ্যে নওগাঁ,রাণীনগর-আত্রাই,নাটোর আঞ্চলিক মহাসড়ক নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করা হয়। কিন্তু কাজ সমাপ্ত না করেই অদৃশ্য কারণে বন্ধ হয়ে যায় এই বৃহৎ কাজটি।

এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর অসমাপ্ত রাস্তাটির কাজ সমাপ্ত করতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম সংসদে ১৪ বার দাবি উপস্থাপন করেন। এরপর সেতু ও সড়ক মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি উত্তরাঞ্চলে সফরে নওগাঁ আসলে তাকে মহাসড়কটির অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার জোর দাবি জানান স্থানীয় এমপি ইসরাফিল আলম। এরপর সুপারিশ করে নথিপত্র সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ করা হলে ২০১৬-২০১৭ অর্থ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী সভার নিয়মিত বৈঠকে (একনেক) অসমাপ্ত কাজের সমাপ্তকরণ প্রকল্প অনুমোদন প্রদান করেন এবং নওগাঁ-নাটোর মহাসড়কের ৫১ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ২৫.৫ কিলোমিটার রাস্তার কাজ সম্পন্ন করার জন্য ২ শত ১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।
বরাদ্দের আলোকে ৬টি গ্রুপে গতবছরের জুন মাসে টেন্ডার আহ্বান করা হয়। এতে প্রথম পর্যায়ের নওগাঁ জেলার অংশের ১৯কিমি রাস্তার অসমাপ্ত কাজ শুরু হয়। কাজটি শেষ হলে রাজধানী ঢাকা ও দক্ষিণাঞ্চলের সাথে একদিকে যেমন প্রায় ৬৫ কিলোমিটার রাস্তার দূরত্ব কমবে অন্য দিকে অর্থ-সময় বাঁচবে এবং মানুষের ভোগান্তিও লাঘব হবে। এতে করে রাণীনগর-আত্রাই এলাকার উন্নয়নের সাথে নতুন আরো একটি মাইলফলক যোগ হলো বলে এলাকাবাসি দাবি করছেন। বদলে যাবে এই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান ও অর্থনৈতিক চাকা।

উপজেলার প্রবীণ শিক্ষক মো: গিয়াস উদ্দিন বলেন, এই মহাসড়কটি অবহেলিত রাণীনগরবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিলো। অবশেষে এই সড়কটির কাজ শুরু হওয়ায় আমরা আনন্দিত। কারণ এই মহাসড়কের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই জনপদের হাজার হাজার মানুষের জীবন। সড়কটির কাজ শেষ হলে এই জনপদে উৎপাদিত ফসল খুব সহজেই কৃষক ও ব্যবসায়ীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে চালান করতে পারবে। সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থানের জায়গা। যার কারণে পাল্টে যাবে এই জনপদের মানুষের ভাগ্যের চাকা।

রাণীনগর খট্টেশ্বর ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান পিন্টু বলেন, কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এই আঞ্চলিক মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। এই অঞ্চলে স্থাপিত হবে নতুন নতুন কল-কারখানা। সেগুলোতে কর্মস্থানের ব্যবস্থা হবে শত শত বেকার মানুষের। পাল্টে যাবে এই জনপদের মানুষের জীবনমান। এই মহাসড়কে যুক্ত হয়ে কয়েকটি জেলার মানুষ খুব সহজেই বগুড়া না হয়ে ২ঘন্টা কম সময়ে ঢাকায় যেতে পারবে।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য মো: ইসরাফিল আলম বলেন, বিগত জোট সরকারের সময় কাজ না করেই অর্থ লোপাট করার কারণে বন্ধ হয়ে যায় এই মহাসড়কটির কাজ। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে মহান জাতীয় সংসদে বিষয়টি ১৪ বার উপস্থাপন করেছি। কারণ এই মহাসড়কটি এই জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি ছিলো। অনেক চেষ্টার পরে অবশেষে প্রায় ১৪ বছর পর শুরু হয়েছে সড়কটির অসমাপ্ত কাজের। আমি আশা রাখি অতিদ্রুত এই কাজ শেষ হবে এবং এই জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর হবে।

স/শা