১০০ বছরের বেশি সময় পর প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কবলে মুম্বাই

আম্পানের ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি সামাল দিতে না দিতেই ভারতের দিকে চোখ রাঙাচ্ছে ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ৷এবারের ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ ভারতে পশ্চিমভাগে করোনায় বিপর্যস্ত মহারাষ্ট্রের দিকে।

ইতিমধ্যে এটি সুপার সাইক্লোনে রূপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতের আবহাওয়া অধিদফতর।

আবহাওয়া দফতরের বরাতে ভারতের সংবাদমাধ্যম ওয়ানইন্ডিয়া জানিয়েছে, আগামীকাল (বুধবার) ঘূর্ণিঝড় নিসর্গ মহারাষ্ট্র উপকূলে আছড়ে পড়বে৷ এ সময় বাতাসের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১১৫ কিলোমিটার। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিও ঝরবে৷ ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ১২৫ কিমি পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে৷

আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, ১০০ বছরের বেশি সময় পর ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের বাণিজ্যিক নগরী মুম্বাইয়ের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে কোনো সাইক্লোন।

শুধু সাইক্লোনই নয়, এটি আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যে ‘প্রবল সুপার সাইক্লোনে’ পরিণত হতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর।

এমন পূর্বাভাস মাথায় রেখেই সব ধরনের সতর্কতা অবলম্বন করেছে মহারাষ্ট্র সরকার ৷

সংবাদমাধ্যম ওয়ান ইন্ডিয়া জানিয়েছে, আরব সাগরে অবস্থিত লাক্ষাদ্বীপের কাছে তৈরি গভীর নিম্নচাপ এখন ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়ে বুধবার সন্ধ্যার দিকে মহারাষ্ট্রের মুম্বাই, দামান ও হরিহরেশ্বর উপকূলের মধ্য দিয়ে স্থলভাগে আছড়ে পড়তে পারে৷

ঘূর্ণিঝড়টির কারণে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কোঙ্কন, গোয়া, মহারাষ্ট্রের কিছু অংশ ও গুজরাটে ভারী বর্ষণ হবে৷ মুম্বাইয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকা থানে, পালঘর, রত্নগিরি, সিন্ধুদুর্গ জেলা ও কোঙ্কনের আশেপাশের এলাকায় ঝড়টি ব্যাপক তাণ্ডব চালাবে।

নিসর্গের ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষা পেতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ভারত সরকার।

মহারাষ্ট্রে, কেরালা, কর্নাটক, গোয়া, গুজরাত, লাক্ষাদ্বীপের মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে৷ ইতোমধ্যেই রাজ্যের থানে, রায়গড়, রত্নগিরি এবং সিন্ধুদুর্গ এলাকায় উচ্চ সতর্কতা (হাই অ্যালার্ট) জারি করা হয়েছে।

উপকূলীয় অধিবাসীদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে এনডিআরএফ ও ভারতীয় উপকূল রক্ষী বাহিনীর সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ৷

বৈঠকের পর পরই মুম্বাইসহ মহারাষ্ট্রের ছয়টি জেলায় ৯টি টিম পাঠিয়েছে জাতীয় বিপর্যয় মোকাবেলা বাহিনী৷ মুম্বাইয়ে ৩ টি ও পালঘরে ২টি ও থানে, রায়গড়, রত্নগিরি ও সিন্ধুদুর্গে ১টি করে টিম পাঠানো হয়েছে। মহারাষ্ট্র ও গুজরাতে যথাক্রমে ১০ ও ১১টি টিম পাঠানো হয়েছে৷

ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, গুজরাটের ভালসাড় এবং নবসারি জেলার ৪৭টি গ্রামের ২০,০০০ মানুষকে সরানো হয়েছে।

সংবাদসংস্থা পিটিআইকে ভালসাড় জেলা প্রশাসক আর আর রাভাল জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই ৩৫টি গ্রামের ১০,০০০ মানুষকে সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। নবসারি জেলায় ১২টি গ্রামের ১০,২০০ লোককে সরানো শুরু হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি টুইট করেন, ভারতের পশ্চিম উপকূলে ধেয়ে আসা সাইক্লোনের পরিস্থিতির খোঁজ খবর নিলাম। সবার মঙ্গল কামনা করি। আমি সবাইকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক পদক্ষেপ করার আহ্বান জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, দু সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় সুপার সাইক্লোনে সাইক্লোনের কবলে পড়তে যাচ্ছে ভারত। গত মাসে বঙ্গপোসাগরে তৈরি হওয়া ঘুর্ণিঝড় আম্পান পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা উপকূলে তাণ্ডব চালালে প্রায় ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটে। এতে পশ্চিমবঙ্গের ১ লাখ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানানা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার ঘূর্ণিঝড় নিসর্গের ছোবলে কেমন ক্ষতিতে পড়ে মুম্বাই সে আশঙ্কায় ভুগছে ভারতবাসী।

 

সুত্রঃ যুগান্তর