হেলিও এস৬০ : নজরকাড়া দেশি ফ্ল্যাগশিপে ভালোর দিকই বেশি

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

মাত্র দুই বছর আগেও ফোন কেনার সময় সবাই প্রথমেই জানতে চাইতেন হার্ডওয়্যার কী, সফটওয়্যার সংস্করণ কত কিংবা হ্যাং করবে কিনা।

অথচ দু’বছরর পরের চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। এখন ফোনটি যথেষ্ট ফ্যাশেনেবল কিনা, সে প্রশ্নই থাকে সবার আগে।

এমন চিন্তা থেকেই দেশি ব্র্যান্ড হেলিও এনেছে তাদের নতুন ফ্ল্যাগশিপ ‘হেলিও এস৬০’। অন্যান্য সকল স্পেসিফিকেশন নিয়ে আলোচনার আগেই বলে নেয়া যায়, নজরকাড়ার ক্ষেত্রে ফোনটি পাবে ১০/১০।

শুরুতেই দেখে নেওয়া যাক কী আছে ফোনটিতে

  • ডুয়াল মাইক্রো সিম, ফোরজি
  • ৬ দশমিক ২ ইঞ্চি, ইন-সেল আইপিএস এলসিডি ডিসপ্লে, রেজুলেশন ২২৪০ x ১০৮০ পিক্সেল
  • ২ গিগাহার্জ অক্টাকোর প্রসেসর, যার ৪টি কোর কর্টেক্স এ৭৩ আর ৪টি কর্টেক্স এ৫৩, মডেল হেলিও পি৬০। প্রযুক্তি ১২ ন্যানোমিটার
  • ৪ গিগাবাইট এলপিডিডিআর৪ র‌্যাম
  • ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ
  • মালি জি৭১ এমপি৩ জিপিউ
  • অ্যান্ড্রয়েড ৮.১ ওরিও অপারেটিং সিস্টেম, ট্রেবল সমর্থিত
  • ডুয়াল ব্যান্ড ওয়াইফাই, ব্লুটুথ ৪.২, জিপিএস, থ্রিডি জাইরোস্কোপ
  • মেমরি কার্ড ব্যবহারের সুবিধা
  • ইউএসবি টাইপ সি পোর্ট
  • তারহীন চার্জিং, এফ এম রেডিও
  • পেছনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর, সামনে ইনফ্রারেড থ্রিডি ফেইস আইডি যা অন্ধকারেও কাজ করে
  • পেছনে ১৬ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা এবং ৫ মেগাপিক্সেল ডেপথ সেন্সর, দুটিরই অ্যাপার্চার এফ/২.০, আছে ফেইস ডিটেকশন অটোফোকাস
  • সামনে ১৬ মেগাপিক্সেল সেলফি ক্যামেরা, অ্যাপার্চার এফ/২.০
  • ব্যাটারি ৩০০০ এমএএইচ

ডিজাইন

সামনে পেছনে গ্লাস আর পলিশ করা ধাতব ফ্রেম ফোনটিকে করেছে খুবই আকর্ষণীয়। পেছনে গ্লাসের নিচে রূপালী রঙ থাকায় আয়নার মত সেটি আলো প্রতিফলন করে। ফলে হাতে বা টেবিলে যেখানেই রাখা হোক, সবার দৃষ্টি তার দিকে যাবেই।

ডিসপ্লের রঙের গভীরতা এবং ব্রাইটনেসও চোখে পড়ার মত।

সামনের প্রায় পুরোটা জুড়েই আছে ডিসপ্লে এবং উপরের মাঝ বরাবর আছে ডিসপ্লে নচ। পেছনে আছে হেলিও লোগো, ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর এবং বাম কোনায় আছে ডুয়াল ক্যামেরা।

ফোনের ডান পাশে আছে ভলিউম এবং পাওয়ার বাটন, বাম পাশে আছে সিম ও মেমরি কার্ড স্লট। স্পিকার ও টাইপ-সি পোর্ট আছে ফোনের নিচে।

সব মিলিয়ে, ফোনটির ডিজাইন ফ্ল্যাগশিপ মানের। আইফোন ১০-এর সঙ্গে মিল থাকলেও, পেছন থেকে কপি বলা যাবে না।

ডিসপ্লে

বিশাল ৬ দশমিক ২ ইঞ্চি ডিসপ্লের কালার ও কন্ট্রাস্ট শুরুতেই নজর কাড়বে। ইন-সেল প্রযুক্তি ব্যবহারে ডিসপ্লে আর টাচ সেন্সরের মধ্যে নেই কোনও ফাঁকা জায়গা। তাই ডিসপ্লের প্রতিটি জিনিস মনে হবে যেন ফোনের ওপর ভেসে আছে।

ব্রাইটনেসেও পিছিয়ে নেই এটি। সরাসরি রোদেও ব্যবহার করতে কষ্ট হবে না। ডিসপ্লের কালার অ্যাকুরেসিও যথেষ্ট ভালো, অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড মনে হবে না ছবি।

ডিসপ্লেতে নচ নিয়ে যাদের সমস্যা আছে তাদের জন্য ফোনটিতে নচ লুকিয়ে রাখার অপশন দেয়া হয়েছে। তবে নচ সাধারণত সমস্যা করে না।

পারফরমেন্স

অত্যন্ত শক্তিশালী হেলিও পি৬০ প্রসেসরটি ফোনে দৈনন্দিন থেকে ভারি সব কাজই সুন্দরভাবে সামলে নিতে পারবে। আর তৈরিতে ১২ ন্যানোমিটার প্রযুক্তি ব্যবহার হওয়ায় তেমন গরমও হবে না, ব্যাটারির ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে না।

গিকবেঞ্চ অনুযায়ী হেলিও এস৬০ পয়েছে সিঙ্গেলকোরে ১৫০০ পয়েন্ট এবং মাল্টিকোরে ৫৭০০ পয়েন্ট। প্রায় স্ন্যাপড্রাগন ৮২১য়ের কাছাকাছি প্রসেসিং ক্ষমতা আছে এতে।

গেইমিং করার জন্য চাই শক্তিশালী জিপিউ। এতে দেয়া হয়েছে মালি জি৭১ এমপি৩ ফ্ল্যাগশিপ গ্রাফিক্স প্রসেসর। সর্বশেষ ক্রেইজ পিউবিজিও এই ফোনে সুন্দরভাবে চালানো গেছে, তবে মিডিয়াম গ্রাফিক্সে। অন্য সকল গেইম ফুল গ্রাফিক্সে চালাতেও কোনও সমস্যা হয়নি।

র‌্যামের অভাব আজকের কোনও ফোনেই নেই, এটিও ব্যতিক্রম নয়। মাল্টিটাস্কিং থেকে ভারি গেইম, সবকিছুই ৪ গিগাবাইট র‌্যামে সুন্দরভাবে করা যাবে।

সব মিলিয়ে, পারফরমেন্সে হেলিও এস৬০ আছে এগিয়ে।

অডিও

স্টেরিও স্পিকার না থাকায় হেডফোন ছাড়া গান বা ভিডিও দেখতে একটু কষ্ট হবে। স্পিকারে সাউন্ড খুব জোরালো নয়, সাধারণ মানের।

হেডফোনে সাউন্ডের মান যথেষ্ট ভালো হলেও অল্পবিস্তর ভলিউমের ঘাটতি দেখা গেছে। যারা গান শুনতে ভালবাসেন তাদের ফোনটি হতাশ করবে না।

ক্যামেরা

হেলিও এস৬০তে ক্যামেরা অপশনের শেষ নেই। সাধারণ অটো মোড দিয়েই ক্যামেরার মানের পরিচয় নির্ধারণ করা হয়। সে দিক দিয়েও পিছিয়ে নেই এ ফোন।

দিনের আলোয় ছবির মান খুবই ভালো, বিশেষ করে আলো ছায়ায় ভরা দৃশ্যের ছবিও এটি সহজেই এইচডিআর ব্যবহার করে মানসম্মতভাবে ধারণ করতে পারে।

ছবিতে ডিটেইলের অভাব একেবারেই নেই। বিশেষ করে ব্যাকলাইট থাকলেও ছবিতে ডিটেইল কমে যাওয়া বা এক্সপোজারে সমস্যা দেখা যায়নি।

কালার এবং ডাইনামিক রেঞ্জের অল্পবিস্তর ঘাটতি রয়েছে; কিন্তু তা বড় সমস্যা নয়। সামনে আপডেটে ক্যামেরা আরও উন্নত করা হবে বলে জানিয়েছে এডিসন গ্রুপ।

আজকের তুমুল জনপ্রিয় ‘বোকেহ’ ব্যাকগ্রাউন্ড ছবির জন্য আলাদা বোকেহ মোড দেয়া হয়েছে এতে। ব্যাক ক্যামেরা ছাড়াও সেলফিতেও সেটি কাজ করে।

বাজারের অনেক ফ্ল্যাগশিপের সঙ্গে এটি ফোকাসে থাকা সাবজেক্ট এবং ব্যাকগ্রাউন্ডের মধ্যে তফাত করার ক্ষমতা তুলনা করা যেতে পারে। এআই বিউটি মোডও অল্পবিস্তর ব্যবহার করে বাস্তবসম্মত ছবি তোলা যাবে।

ক্যামেরার দুর্বলতা দুটি, একটি হচ্ছে স্ট্যাবিলাইজেশনের অভাব। ভিডিওতে বিশেষ করে হাতের কাঁপুনি বোঝা যায়। আর সে জন্য রাতের ছবিতেও পরেছে প্রভাব, ছবি ঠিকমত তোলা না গেলে নয়েজ দেখা যাবে।

সব মিলিয়ে, হেলিও এস৬০তে থাকা ক্যামেরা মূল্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যতাপূ্র্ণ।

ব্যাটারি লাইফ

ব্যাটারি তেমন বড় না হলেও, বেশ ভালো ব্যাটারি লাইফ দিতে সক্ষম হেলিও এস৬০। এক চার্জে টানা দেড় দিন মাঝারিভাবে ব্যবহার করা যাবে, স্ক্রিন অন টাইম পাওয়া যাবে ৮ ঘণ্টা।

চার্জ হতেও খুব বেশি সময় লাগবে না। এক ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে ফুল চার্জ হয়ে যাবে। তারহীন চার্জিংয়ের গতিও কাছাকাছি।

নিরাপত্তা

ফোনটিতে রয়েছে দু’প্রকার বায়োমেট্রিক নিরাপত্তা- ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ও ফেইস আইডি। অন্যান্য অ্যান্ড্রয়েডের মত এতে সেলফি ক্যামেরা দিয়ে চেহারার ছবি তোলা হয় না, ফেইস স্ক্যান করার জন্য আছে আলাদা ইনফ্রারেড স্ক্যানার। ফলে ছবি ব্যবহার করে আনলক করার উপায় নেই।

পরিশেষ

বক্সেই তারহীন চার্জার, চোখে লাগার মত ডিজাইন, তৈরির মানে আপোস না করা, শক্তিশালী প্রসেসর এবং ওয়ারেন্টি ফোনটিকে বেশিরভাগ ব্যবহারকারীদের কাছেই করবে কেনার মতো একটি ডিভাইস।

শুধু যারা ফোনেই লম্বা ভিডিও করেন বা ফোনকে গেইমিং ডিভাইস হিসেবে ব্যবহার করেন তাদের জন্য হেলিও এস৬০ কিছুটা সমস্যাজনক।

মূল্য

২৫ হাজার ৯৯০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে হেলিও এস৬০।

এক নজরে ভালো

  • ডিজাইন
  • পারফরমেন্স
  • ব্যাটারি লাইফ
  • দিনের আলোয় ক্যামেরা
  • সেলফি
  • তারহীন চার্জিং

এক নজরে খারাপ

  • রাতে ক্যামেরা ব্যবহার
  • ভিডিওতে কাঁপুনি
  • ফাস্ট চার্জিংয়ের অনুপস্থিতি