হিলারি-আল গোরের তিক্ত স্মৃতি তাড়া করছে ডেমোক্র্যাটদের

২৯ লাখের বেশি পপুলার ভোট বেশি পেয়েও ২০১৬ সালের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন প্রেসিডেন্ট হতে পারেননি।

একই অবস্থা ছিল ২০০০ সালে জর্জ ডব্লিউ বুশ ও আল গোরের মধ্যে। ডেমোক্র্যাট প্রার্থী আল গোর সেবার পপুলার ভোট বেশি পেলেও ইলেকটোরাল ভোটে ধরা খান। যুক্তরাষ্ট্রের জটিল ইলেকটোরাল ভোটের মারপ্যাঁচে জিতে যান জর্জ ডব্লিউ বুশ।

এবারের জনমত জরিপে প্রচারের শুরু থেকেই এগিয়ে ছিলেন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেন। কিন্তু মার্কিন নির্বাচনের ফল নির্ধারণ করে সুইং স্ট্যাটগুলো। সেগুলোতে যে ভালো করেন তিনিই প্রেসিডেন্ট হন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্যে দুই প্রার্থীর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের আভাস পাওয়া গেছে।

এবারও ধারণা করা হচ্ছে, পপুলার ভোটে জিতবেন বাইডেন। কিন্তু ইলেকটোরাল ভোট কার বাক্সে বেশি পড়ে সে বিষয়ে পূর্বানুমান করা কঠিন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় ৩ নভেম্বর মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটিক সমর্থকরা ব্যাপকভাবে ভোট দিয়েছেন জো বাইডেনকে। এ ক্ষেত্রে বাইডেনের প্রতি সমর্থন যতটা, তার চেয়ে বেশি কাজ করেছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের চার বছরের শাসন নিয়ে চরম অসন্তোষ।

ডেমোক্র্যাটরা বাইডেনকে ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রগুলোয় এলেও তাদের তাড়া করছে এখনও নিকট অতীতের হিলারি ও আল গোরের হেরে যাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা। যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ডেমোক্র্যাটিক দলের আল গোর ও হিলারি ক্লিনটন বিপর্যয় ভুলে থাকা সম্ভব নয়। উভয় প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বীদের থেকে মোট ভোট বেশি পেয়েছিলেন।

ডেমোক্র্যাটদের অনেকের এখনও বিশ্বাস– আল গোরকে নির্বাচনে হারানো হয়েছে আদালতে কারসাজির মাধ্যমে। হিলারির মতো প্রার্থীর জাতীয়ভাবে মোট ভোট বেশি পেয়েও ইলেকটোরাল ভোটে হেরে যাওয়া এখনও মানতে পারেননি অনেকে।

সব সম্ভবের দেশ মনে করা হয় যুক্তরাষ্ট্রকে। ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেও হয়তো কোনো দিন মনে করেননি, যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হবেন তিনি।

যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেকে এর আগে রাজনীতির মঞ্চেই ছিলেন না। দ্রুতই তিনি ক্ষুব্ধ মানুষের ক্ষোভকে ধরতে পেরেছেন। উসকে দিয়েছেন অজানা নানা ভয়কে।

যুক্তরাষ্ট্রের রক্ষণশীল লোকজনকে যেসব অজানা ভীতি তাড়া করছিল, তারই প্রতিনিধি হয়ে ওঠেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই মানুষেরাই ট্রাম্পকে তাদের ত্রাতা হিসেবে গ্রহণ করে।

মার্কিন রাজনীতিতে ট্রাম্পের আবির্ভাব হঠাৎ করেই। চেনা যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তির সম্পূর্ণ বাইরে গিয়ে এক সদা ক্ষুব্ধ মানুষ হিসেবে ট্রাম্প একের পর এক হামলা করেছেন চিরচেনা নানা ব্যবস্থাকে।

নির্বাচনের দিনও দেখা গেছে ট্রাম্প সমর্থকরা দলে দলে ভোট দিতে ভোটকেন্দ্রে যাচ্ছেন। তাদের কাছে এ নির্বাচন করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে মাস্ক পরা না পরার নির্বাচন নয়।

ট্রাম্পের বিজয়ের সঙ্গে তাদের অস্তিত্বের যোগ রয়েছে বলে তারা মনে করেন। তাদের মতে, ট্রাম্প হেরে গেলে যুক্তরাষ্ট্র আর যুক্তরাষ্ট্র থাকবে না; অভিবাসী আর অপরাধীদের অভয়ারণ্য হয়ে যাবে।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হবে, বেহাত হবে সব কর্মসংস্থান এবং জ্বালানি তেলের দাম বাড়বে। তাদের এসব ভীতির পেছনে কোনো তথ্য-উপাত্ত বা যুক্তি নেই। নিছক বিশ্বাসের বশে তারা দাঁড়িয়ে আছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে।

অন্যদিকে গত চার বছরের বিশৃঙ্খলা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য এবার বাইডেনের পক্ষে গণজোয়ার দেখা গেছে প্রচারের শুরু থেকেই।

গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গরাজ্য নিউজার্সি, ক্যালিফোর্নিয়াসহ যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন ও শ্রেষ্ঠত্বের জন্য যে জনমিশ্রনকে বাহবা দেয়া হয়, সেসব এলাকায় বেশিরভাগ লোকের অবস্থান ভিন্ন। তারা মনে করেন, যথেষ্ট হয়েছে; আর নয়। যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্তরাষ্ট্র হিসেবেই তারা দেখতে চান।

যুক্তরাষ্ট্র একটি সহমর্মী দেশ। বিশ্বজুড়ে নানা অপকর্ম করে বেড়ালেও মার্কিন জনগণ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে চায়। এই যুক্তরাষ্ট্রের চিরচেনা ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতেই মানুষ, তাই মরিয়া হয়ে জো বাইডেনকে ভোট দিচ্ছেন।

 

সূত্রঃ যুগান্তর