হাত ভাঙ্গা আহত ছাত্রকে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিলেন শিক্ষক

পুঠিয়া প্রতিনিধিঃ

অন্যের পানি পান করার অপরাধে সপ্তম শ্রেনীর স্কুল ছাত্রকে মেরে হাত ভেঙ্গে দিয়েছে আরেক সহপাঠী ছাত্র। সে হাত নিয়ে ছেলেটি স্কুলের পিয়ন থেকে শুরু করে কয়েকজন শিক্ষকের কাছে ধরনা দিলেও কেও তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি বরং তার এ অবস্থা দেখে হাত ভাঙ্গেনি বলে মন্তব্য করে এক শিক্ষক তাকে ছুটি দিয়ে একা একা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পরে পরিবারের লোকজন রাজশাহী মেডিকেলে নিয়ে গেলে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানায় তার ডান হাত ভেঙ্গে গেছে।

ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল শনিবার দুপুর পর রাজশাহী জেলার পুঠিয়া উপজেলা সদরে অবস্থিত পি এন সরকারী উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। সেখানে তখন স্কুলটির আসন্ন এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের ভুরিভোজ চলছিলো।

এদিকে এ ঘটনায় স্কুল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার ইঙ্গিত দিয়ে ক্ষুদ্ধ অভিভাবক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক হৃদয় বিদারক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। যাতে শিক্ষকদের এমন জ্ঞানহীন কাণ্ডে সমালোচনার ঝড় বইছে।

আহত ছাত্রের নাম অনির্বান সেন গুপ্ত পরশ (১২) সে স্কুলটির সপ্তম শ্রেনীতে পড়াশোনা করে। আর তাকে মেরে হাত ভেঙ্গে দেয়া সহপাঠী ছাত্রের নাম মোজাহিদ (১২) সেও একই শ্রেনীতে পড়াশোনা করে। আহত পরশ বর্তমানে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে বিছানাগত হয়ে রয়েছে। তবে প্রচন্ড ভয়ে সে স্বাভাবিক ভাবে কথা বলতে পারছে না।

শনিবার দুপুর পর থেকে রোববার দুপুর পর্যন্ত এ ঘটনার একদিন পার হয়ে গেলেও স্কুলের পক্ষ থেকে তার খোঁজ নিতে পর্যন্ত যায়নি। তবে মারধরকারী শিক্ষার্থীর বাবা তাকে দেখতে গিয়ে তাদের সান্তনা জানিয়ে এসেছেন।

আহত অনির্বান সেনগুপ্ত পরশ জানায়, খাবার খাওয়া অবস্থায় তার বুক জ্বালা পোড়া শুরু করলে দেখে বোতলের পানি ফুরিয়ে গেছে। তার পাশে থাকা মুজাহিদের বোতলের পানি পান করে। অনুমতি না নিয়ে মুজাহিদের পানি পান করায় সে তার ডান হাতে কি যেন দিয়ে আচমকা বাড়ি মারে। মারের আঘাতে সে আহত হয়।

পরশ বলেন, ব্যথা পেয়ে খাবারের প্যাকেট ফেলে দিয়ে আমি কাদতে কাদতে স্কুলের বাইরে চলে যাই। পরে কয়েকজন বন্ধু আমাকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলের পিয়ন যগা দার কাছে নিয়ে যায়। তিনি স্কুলের ক্যারানি স্যারের কাছে গিয়ে হাতে বরফ দেয়ার পরামর্শ দেন। ক্যারানির কাছে গেলে তিনিও বিউটি ম্যাডামের কাছে যেতে বলেন। বিউটি ম্যাডাম একটু অপেক্ষা করতে বলে চলে যায় আর খোঁজ নেয়নি। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর হাতের ব্যথা আরো বেশি হতে থাকলে সে স্কুলটির সহকারী শিক্ষক মশিউর রহমানের কাছে যায়। তিনি তার এ অবস্থা দেখে “হাত ভাঙ্গেনি” বলে মন্তব্য করে বলেন, তুমি বাড়িতে চলে যাও।

পরশ আরো বলেন, বইয়ের ব্যাগটি কাঁধে নিয়ে এবং ভাঙ্গা হাত বুকের ওপর ধরে আমি একা একাই বাড়িতে চলে আসি।

এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠান

পরশের বাবা পল্লব কুমার সেনগুপ্ত জানান, তার এ অবস্থা দেখে পরশের মা আমাকে ফোন দেয় আমি আমার কর্মস্থল থেকে দ্রুত বাড়িতে গিয়ে দেখি ছেলের এ অবস্থা পরে তাকে পুঠিয়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করেন। সেখানে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে চিকিৎসকরা জানান পরশের ডান হাতের কব্জার হাড় ভেঙ্গে গেছে।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমিও একটি স্কুলে শিক্ষকতা করি। এখানে কোন শিক্ষার্থী অসুস্থ হলে তাকে সুচিকিৎসা দিয়ে তার অভিভাবককে ফোন করে জানিয়ে দেই। তারা আমার ছেলে হাসপাতালে না নিতে পারলেও আমাকে ফোন করেও তো জানাতে পারতো।

তিনি শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তুলে বলেন, স্কুলটিতে শিক্ষক কর্মচারী মিলে প্রায় ২৫-৩০ জন দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে কি একজনও দায়িত্ববান ছিলো না? এর পর কোন নিরাপত্তায় আমরা আমাদের সন্তানদের পড়াশোনা করতে পাঠাবো? ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তিনি একটি আবেগঘন স্ট্যাটাস শেয়ার করেছেন। যেখানে শিক্ষকদের এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কর্মকান্ডের সমালোচনা করে অনেকেই মন্তব্য করেছেন।

এদের মধ্যে স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে অংশগ্রহনকারী শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. ইমদাদুল হক দুলাল লিখেন, সমবেদনা জানানোর ভাষা আমার নেই, ছেলেটা তাড়াতাড়ি সুস্হ হোক এই কামনা রইল, আমার অনেক খারাপ লাগছে। কারণ ওর অনেক গল্প বকুল মাডামের কাছে শুনেছি তবে হেড মাস্টার সাহেবকে আরও কড়া ভাষায় আরও কিছু বলতে হতো।

এ ব্যপারে জানতে স্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রশান্ত কুমারকে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করে সাংবাদিক পরিচয় শুনে মিটিং এ আছেন পরে কথা বলবেন বলেই ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

তবে এ ব্যপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোঃ ওলিউজ্জামান।