হরিণ নিধন সারা বছর

‘তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।’ সোনার হরিণ না পাওয়া গেলেও দেশে খুব সামান্য চেষ্টাতেই মেলে হরিণের মাংস। শিকার কিংবা হত্যা নিষিদ্ধ হলেও মাংস বিক্রির জন্য সারা বছর চলে হরিণ নিধন। সুন্দরবনসংলগ্ন তিন জেলা-খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা ও নোয়াখালীর নিঝুম দ্বীপে হরিণ শিকারির শতাধিক দল আছে।

অভিযোগ আছে-বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কিছু অসাধু সদস্যকে ‘ম্যানেজ’ করে নানা কৌশলে হরিণ হত্যা চলছে বনে। হরিণ হত্যার পর বনের ভেতরেই মাংস কেটে প্যাকেট করা হয়।

প্রভাবশালী মহলের যোগসাজশে স্থানীয়ভাবে ও বিভিন্ন শহরাঞ্চলে সেগুলো বিক্রি হয়। প্রধান সড়ক এড়িয়ে ছোট সড়ক বা নৌপথে পাচার হয় সেসব মাংস। এক্ষেত্রে বেশিরভাগ সময় ব্যবহার হয় ককশিটের প্যাকেট। বরফ দেওয়া মাছের সেই প্যাকেটের একেবারে নিচে থাকে হরিণের মাংস। যুগান্তরের নিজস্ব অনুসন্ধানে জানা গেছে এসব তথ্য।

এ মুহূর্তে দেশে হরিণের প্রকৃত সংখ্যা কত-সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত নেই সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও কাছেই। তবে পুরোনো জরিপ ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে একটি অনানুষ্ঠানিক চিত্র পাওয়া গেছে। সেখানে দেখা গেছে, শুধু সুন্দরবনের হরিণের ওপর সর্বশেষ জরিপ হয়েছিল ১৯৯৫-৯৬ সালে। তখন সেখানে হরিণের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড় লাখ। ২৪ বছর পর বর্তমানে এ সংখ্যা একই রয়েছে অর্থাৎ দেড় লাখের বেশি হবে না বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

এছাড়া গত ১০ বছরে হরিণের অভায়রণ্য- নিঝুম দ্বীপে হরিণ ছিল প্রায় ৪০ হাজার। এখন ৩৫ হাজার কমে দাঁড়িয়েছে প্রায় পাঁচ হাজারে-যেটি আশঙ্কাজনক বলে মন্তব্য করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

সুন্দরবন ও তার আশপাশে হরিণ হত্যা না থামা প্রসঙ্গে খুলনা রেঞ্জ পুলিশের উপ-পুলিশ মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, সুন্দরবন ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার ধরে বিস্তৃত। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট তিন জেলাতেই সুন্দরবনের অংশ। অসংখ্য মানুষ তাদের জীবিকা নির্র্বাহ করেন সুন্দরবনকে ঘিরে। আমরা সেখানকার মানুষের বননির্ভরতা ও হরিণসহ বিভিন্ন বন্যপ্রাণী শিকার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু বন্ধ করাটা কঠিন, সময় লাগবে। বন বিভাগ, বাংলাদেশ পুলিশ, কোস্ট গার্ড এখানে কাজ করে। হরিণসহ বন্যপ্রাণী হত্যা শতভাগ কমাতে আমাদের সক্ষমতা আরও বাড়াতে হবে। পাশাপাশি সুন্দরবননির্ভর মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।

রাস উৎসব ঘিরে কয়েক হাজার হরিণ হত্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি একটি ধর্মীয় আচার। এ কারণে বেশ সংবেদনশীল। রাস উৎসবে যাতে হরিণ নিধন না হয় তার জন্য আমরা টহল বাড়িয়েছি। সক্ষমতাও বাড়িয়েছি। আশা করি এগুলো বন্ধ হবে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থানীয়ভাবে হরিণের মাংস ৩০০-৭০০ টাকা বিক্রি হয়। কিন্তু একটু ঝুঁকি নিয়ে শহরাঞ্চলে সরবরাহ করলে কেজিতে পাওয়া যায় ১৫০০-২০০০ টাকা। উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, রাজনীতিক, শৌখিন মানুষের কাছে হরিণের মাংসের কদর অনেক। অনেক সময় উপঢৌকন হিসাবেও হরিণের মাংস, চামড়া এমনকি জ্যন্ত হরিণও পাচার হয়। আর দুবলার চরে রাস উৎসবে সারা দেশ এমনকি বিদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হন প্রতি বছর। তিন দিনের সেই উৎসবকে ঘিরে ২-৩ হাজার হরিণ নিধন হয়।

এদিকে সুন্দরবনের কাঁকড়ার দাম ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় হরিণের মাংস দিয়ে অধিক পরিমাণে কাঁকড়া ধরার কৌশল রপ্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে দেশে হরিণ হত্যার চিত্রটি ভয়াবহ।

দেশের খ্যাতনামা বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ ড. রেজা খান বলেন, হরিণসহ সব বণ্যপ্রাণীর রক্ষণাবেক্ষণে একটি আলাদা জীববৈচিত্র্য বা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণ বিভাগ সৃষ্টি জরুরি হয়ে পড়েছে। বন বিভাগের কাজ বন কাটা ও বাণিজ্যিক গাছ লাগানো। বন্যপ্রাণী বিভাগের কাজ হবে কোনো গাছ না কাটা এবং সব বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা করা। এ বিভাগ পরিচালিত হবে বন্যপ্রাণী বিশারদ এবং এ বিষয়ে আগ্রহী অন্য গবেষকদের দিয়ে। দেশে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য বিষয়ক যত এলাকা আছে- সুন্দরবন, সব হাওড় এলাকা, চিড়িয়াখানা, সাফারি পার্ক, ইকো পার্কসহ কম করে হলেও ১০ থেকে ১২ হাজার বর্গ কিলোমিটার জায়গা কাগজে কলমে লিখে দিয়ে পুরো ব্যবস্থাপনা ন্যস্ত করতে হবে এ বিভাগের ওপর। নতুন বিভাগটি দেশের প্রাথমিক থেকে উচ্চতর ডিগ্রি, মাদ্রাসা ও অপরাপর দেশিয় বাংলা, ইংরেজি, আদিবাসী এবং আরবি শিক্ষার সিলেবাসে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিষয়ক কার্যক্রম রাখবে।

আইন অনুযায়ী হরিণ ও বন্যপ্রাণী হত্যা নিষিদ্ধ। বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী চিতা বাঘ, লাম চিতা, উল্লুক, হরিণ, কুমির, ঘড়িয়াল, তিমি বা ডলফিন হত্যা করলে দায়ী ব্যক্তির ৩ বছরের কারাদণ্ড অথবা তিন লাখ টাকা জরিমানা, অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। কিন্তু হরিণ হত্যা ও তার মাংস, চামড়া বিক্রি সুন্দরবনসংলগ্ন জেলা, নিঝুম দ্বীপে ওপেন সিক্রেট।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে করোনার সময়েও সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ ২১৫ কেজি ৮শ গ্রাম হরিণের মাংস, দুটি হরিণের চামড়া, একটি হরিণের শিং, ৬টি হরিণের মাথা, ২৪টি হরিণের পা উদ্ধার করে। এসব অপরাধের জন্য ৩২ জনকে আটকও করে বন বিভাগ। আর ২০২১ সালে জানুয়ারি মাসের শেষ ১০ দিন ও ফেব্রুয়ারির প্রথম দুই দিনে সুন্দরবন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে চারটি মাথা, ১৯টি হরিণের চামড়া, ১২০ কেজি মাংস। এ সময় আটক করা হয় ১২ জন চোরা শিকারিকে।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগের দেওয়া তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে এ বিভাগের খুলনা ও সাতক্ষীরা রেঞ্জে হরিণ শিকারের অপরাধে ৯টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৭ জনকে। এর মধ্যে ৫ জন গ্রেফতার ও ২২ জন পলাতক। সাম্প্রতিক সময়েও কিছুদিন পরপরই হরিণের মাংস, চামড়া জব্দের ঘটনা ঘটছে।

চাঁদপাই রেঞ্জের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান জানান, গত ২ বছরে (২০২০-২১) সালে এই রেঞ্জে হরিণের মাংস, মাথা, চামড়া ধারালো অস্ত্র, নৌকাসহ ১০ হাজার ফুট ফাঁদসহ ১০ জন হরিণ শিকারি বন বিভাগের অভিযানে আটক হয়েছে। এ সময় বন্যপ্রাণী হত্যা আইনে ২৫টি মামলা হয়েছে। এ মামলার আসামিদের অধিকাংশই আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে জামিনে রয়েছেন। আর বেশিরভাগ মামলাই বিচারাধীন রয়েছে বলেও জানান তিনি।

খুলনা, মোংলা, শরণখোলা ও হাতিয়া প্রতিনিধি জানিয়েছেন, সুন্দরবনসংলগ্ন মোংলা, শরণখোলা, কয়রা, দাকোপ, পাইকগাছাসহ বনের আশপাশ এলাকায় সবচেয়ে বেশি হরিণের মাংস পাওয়া যায়। সুন্দরবন ও এর পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে পেশাদার হরিণ শিকারিদের বিশেষ সিন্ডিকেট রয়েছে। তাদের সঙ্গে থাকে এজেন্ট ব্যবসায়ী। এসব এজেন্টের মাধ্যমে কখনও অগ্রিম অর্ডারে, আবার কখনও তাৎক্ষণিকভাবে মাংস এনে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে।

খুলনা বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা নির্মল কুমার পাল বলেন, ১৯৯৫-৯৬ সালে বন বিভাগের এক জরিপ থেকে জানা গেছে, সুন্দরবনে এক থেকে দেড় লাখ হরিণ রয়েছে। এরপর আর হরিণের সংখ্যা নিয়ে কোনো জরিপ হয়নি।

হরিণ শিকারিদের সঙ্গে বন বিভাগের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশের বিষয়ে নির্মল কুমার পাল বলেন, একথা সবার মুখে মুখেই প্রচলিত। কিন্তু কেউ এসে অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আমরা ব্যবস্থা নেব।

বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ মনে করেন, সুন্দরবনে বর্তমানে হরিণের সংখ্যা ১ থেকে দেড় লাখের মতো। সেই হিসাবে হরিণের সংখ্যা না বাড়ার অন্যতম কারণ নির্বিচারে নিধন।

কয়রা ও দাকোপ থানা পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, এ দুই উপজেলায় অন্তত ৬০ জন চোরা শিকারি রয়েছে যারা হরিণের মাংস বেচাকেনায় জড়িত। এছাড়া হরিণ শিকার এবং বিক্রির সঙ্গে পরোক্ষভাবে জড়িত রয়েছে আরও ১শ ব্যক্তি।

এসব অঞ্চলের চোরা শিকারিরা সাধারণত ৫টি পদ্ধতিতে শিকার করে থাকে। প্রথমত, নাইলনের দড়ি দিয়ে ফাঁদ পাতা হয়। হরিণ খাবারের জন্য এর মধ্যে গেলে পা অথবা মুখে ফাঁস আটকে যায়। দ্বিতীয়ত, শিকারিরা জাল নিয়ে গাছের ডালে বসে থাকে। হরিণ সামনে এলে জাল দিয়ে আটকানো হয়। তৃতীয়ত, ইঁদুর মারার যন্ত্রের মতো এক ধরনের বড় স্প্রিং বসানো ফাঁদ বসানো হয়। চতুর্থত, খাবারের মধ্যে বিষ মিশিয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখা হয়। সেই খাবার খেলে হরিণ সঙ্গে সঙ্গে দুর্বল হয়ে পড়ে যায়। এছাড়া কলার মধ্যে বড়শি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কলা খেলে বা মুখ দিলে বড়শি মুখে আটকে যায়। ফাঁদ পাতার পর দিনের নির্দিষ্ট সময়ে শিকারিরা গিয়ে হরিণ উদ্ধার করে।

খুলনা, মোংলা ও শরণখোলা এলাকায় স্থানীয় প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, হত্যার পর বনের মধ্যেই দা, ছুরি ও চাপাতি দিয়ে হরিণের চামড়া ছাড়িয়ে ফেলা হয়। দেহকে সাইজ অনুযায়ী ৮-১০টি পিস করে ফেলা হয়। সেগুলোকে পলিথিনে মুড়িয়ে সরবরাহ করা হয়।

কয়রা উপজেলার জোড়শিংয়ের এক শিকারি বলেন, শিকার করে পিস পিস অংশ লোকালয় পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের। যারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব তাদের।

কিভাবে নেওয়া হয় জানতে চাইলে ওই শিকারি বলেন, অপরিচিত কারও সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করি না। আমাদের নিজস্ব সিন্ডিকেট আছে। আমরা এগুলো মাছের ককশিট অথবা ড্রামে করে পাঠিয়ে দেই। পলিথিনে মোড়ানোর কারণে রক্ত বা পানি বাইরে আসে না। নিচে মাংস রেখে উপরে মাছ সাজিয়ে পাঠানো হয়। এভাবে দেশের যে কোনো প্রান্তে পৌঁছে দেয়া যায়। কুরিয়ার, বাস অথবা পার্টি সরাসরি নিতে পারে। নির্ভরযোগ্য তথ্য না পেলে পুলিশ সাধারণত খোঁজ নেয় না।

বন বিভাগের কর্তাব্যক্তি ও স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সুন্দরবনসংলগ্ন বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরে প্রতি বছর অক্টোবর ও নভেম্বরে প্রথম হিন্দু সনাতন ধর্মের রাস উৎসব হয়ে থাকে। প্রতি বছর রাস উৎসবকে ঘিরে শিকারিদের ফাঁদে অন্তত ৩ হাজার হরিণ শিকার হয়ে থাকে।

এ ছাড়াও সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ ও ঘাতক চক্র রয়েছে। বছরজুড়ে এ চক্রের তৎপরতা থাকে। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা সুন্দরবনজুড়ে ৩ হাজারের বেশি। হরিণের মাংসের টোপে কাঁকড়া শিকার করে তারা। ম্যানগ্রোভ এ বনে চাঁই ব্যবহার নিষিদ্ধ থাকলেও বনরক্ষীদের নগদ নারায়ণে তুষ্ট করে চলে এ কারবার। অতি বেশি কাঁকড়া শিকারের জন্য হরিণের মাংস ব্যবহৃত হয়। সে ক্ষেত্রে প্রতিটি গোনে (১৫ দিনে) কাঁকড়া আহরণে অন্তত ১শ থেকে ১৫০টি হরিণ শিকার হয়ে থাকে।

নিঝুম দ্বীপ : হাতিয়া প্রতিনিধি জানান, ১০ বছর আগে নিঝুম দ্বীপের বেলাভূমিতে চিত্রল হরিণেরা দলবেঁধে ছুটোছুটি করত। পর্যটকদের চক্ষু শীতল হতো। কিন্তু এখন আর সেই মনোরম দৃশ্য দেখা যায় না। ১৯৭৯ সালে নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলায় অবস্থিত ‘বালুরচর’ নামের একটি দ্বীপের বিচ্ছিন্ন ও শান্ত পরিবেশ দেখে তার নামকরণ করা হয় ‘নিঝুম দ্বীপ’।

১৯৭২ সালের পর এ পর্যন্ত নিঝুম দ্বীপে ১৪ হাজার ৬৮০ দশমিক ৪০ একর ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল তৈরি করে উপকূলীয় বন বিভাগ। ১৯৭৮ সালে এ দ্বীপের কেওড়া বনে চার জোড়া হরিণ ছাড়া হয়। ২০০৬ সালে এর সংখ্যা দাঁড়ায় ২৭ হাজারে এবং ২০১১ পর্যন্ত ৪০ হাজার ছাড়িয়েছিল। শুধু নিঝুম দ্বীপ নয়-হরিণের বিচরণ বৃদ্ধি পায় ‘চরকবিরা’সহ আশপাশের আরও ১০-১১টি দ্বীপ বনাঞ্চলে। কিন্তু ২০১১-এর পর থেকেই দিন দিন কমতে থাকে নিঝুম দ্বীপের এ চিত্রল হরিণ। বর্তমানে নিঝুম দ্বীপে হরিণের পরিসংখ্যান বন বিভাগের কাছে না থাকলেও স্থানীয়দের মতে এর সংখ্যা ৫-৬ হাজারের বেশি হবে না।

নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যানের দায়িত্বে থাকা রেঞ্জ অফিসার এসএম সাইফুর রহমান বলেন, নিঝুম দ্বীপ জাতীয় উদ্যান কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। অন্যান্য দ্বীপেও হরিণ আছে। কিন্তু সেখানে কি পরিমাণ হরিণ আছে তা আমরা জানি না। তবে নিঝুম দ্বীপে বর্তমানে অনুমানিক ৪-৫ হাজার হরিণ আছে। এখানকার হরিণ নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারাও একই মত দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, হরিণ কমে যাওয়ার অন্যতম একটি কারণ হচ্ছে- ভূমি বন্দোবস্ত; যে কারণে সেখানে লোকালয় সৃষ্টি হয়েছে। নিঝুম দ্বীপের জনসংখ্যা এখন প্রায় ২৫-৩০ হাজার। এদের জ্বালানি ও জেলেদের মাছ শিকারের প্রয়োজনের কাঠ ও খুঁটির চাহিদা এ বনাঞ্চল থেকেই পূরণ হয়। যে কারণে হরিণ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে এ বনাঞ্চলটি। তাছাড়া- জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে লবণ পানি বেড়ে গিয়ে মিঠা পানির সংকট দেখা দেওয়া, কেওড়া গাছ বড় হয়ে যাওয়ায় খাদ্যসংকট, ঝড় জলোচ্ছ্বাস, আবাসন সংকুচিত হওয়া, শিয়াল ও বন্য কুকুরের আক্রমণও নিঝুম দ্বীপের চিত্রল হরিণ কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ।

সূত্রঃ যুগান্তর