হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে সড়ক দুর্ঘটনার নাটক : ঝিলিকের মা

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক: রাজধানীতে ঝিলিক আলম (২৩) নামে এক নারীর মৃত্যু নিয়ে রহস্য দেখা দিয়েছে। ওই নারীর স্বামীর পরিবার দাবি করছে, ঝিলিক হাতিরঝিলে গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। তবে ঝিলিকের পরিবার বলছে, হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতেই সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়েছে।

নিহত ঝিলিকের মা তাহমিনা হোসেন আসমা বলেন, ‘বিয়ের পর জানতে পারি ঝিলিকের স্বামী মাদকাসক্ত। স্বামীসহ তার পরিবার আমার মেয়েকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করত। পূর্বপরিকল্পিতভাবে ঝিলিককে হত্যা করে হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য মিথ্যা গাড়ি দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়েছে।’

২ এপ্রিল থেকে পরদিন ৩ এপ্রিল সকাল ৮টার মধ্যে যেকোনও সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য মিথ্যা সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়েছে।

পুলিশ বলছে, রাজধানীর হাতিরঝিলে প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় শনিবার (৩ এপ্রিল) ঝিলিক আলম নামে এক নারীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ঝিলিককে হত্যার অভিযোগ এনে গুলশান থানায় মামলা করেন তার মা তাহমিনা হোসেন আসমা।

মামলার আসামিরা হলেন- নিহত ঝিলিকের স্বামী সাকিব আলম মিশু, দেবর ফাহিম আলম, শাশুড়ি সাঈদা আলম, শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম এবং টুকটুকি। সাকিব আলম মিশু তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন এবং ঝিলিকের শ্বশুর ও শাশুড়ি কারাগারে।

সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের প্রথম দিকে সাকিব আলম মিশুর সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয় হয় নিহত ঝিলিক আলমের। পরে প্রেমের সম্পর্কে জড়ান তারা। মিশু বাবা-মায়ের কাছে পছন্দের বিষয়টি জানালে তারা ঝিলিকের পরিবার সম্পর্কে খোঁজ-খবর নিয়ে বিয়েতে অমত দেন। কারণ, ঝিলিক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। তার বাবা একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। মিশুর পরিবার গুলশান-২ এর স্থায়ী বাসিন্দা। ঝিলিকের পরিবার মোহাম্মদপুরের তাজমহল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন।

আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ায় মিশুর পরিবার গরিব পরিবারের মেয়ের সঙ্গে ছেলের বিয়ে মেনে নিতে পারেননি। সাকিব তাকে ছাড়া অন্য মেয়েকে বিয়ে করবে না বলে জানিয়ে দেন তার পরিবারকে। একপর্যায়ে ছেলের জেদের কাছে হার মানেন তারা। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয় তাদের। বিয়ের পর মিশুদের বাড়িতেই ওঠেন ঝিলিক। কয়েক মাস তারা ভালোই ছিলেন। ২০২০ সালের শুরুর দিক থেকে শুরু হয় অশান্তি।

নিহত ঝিলিকের মা তাহমিনা হোসেন আসমা বলেন, বিয়ের পর মিশুর বাবা-মা ও ভাইবোন নির্যাতন শুরু করেন তার মেয়েকে। উঠতে-বসতে তারা ঝিলিককে গরিবের মেয়ে বলে গালমন্দ করতেন। নির্যাতনও করা হতো। বিয়ের পর দু-একবার গিয়েছি ঝিলিকের শ্বশুরবাড়ি। কিন্তু তার শ্বশুর-শাশুড়ি ও দেবর খারাপ আচরণ করতেন। কেন ওই বাসায় পা রেখেছি- এটা শুনিয়ে আজেবাজে কথা বলতেন। এ আচরণে তাদের বাড়ি আর যাইনি আমরা।

তিনি বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ আমার মেয়ের সঙ্গে ম্যাসেঞ্জারে সর্বশেষ কথা হয়। ঘটনার দিন ঝিলিকের স্বামী ফোন করে জানায়, ঝিলিক মারা গেছে, আপনি বাসায় আসুন। দ্রুত গুলশানে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি যাওয়ার পর শাশুড়ি সাঈদা জানান, মিশু ঝিলিককে বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেছে।’

‘এরপর বাড্ডা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখি আমার মেয়ে সেখানেও নেই। সেখান থেকে আবারও মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গুলশানে আসি। এরপর জানতে পারি মিশু গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে এবং হাতিরঝিল থানা পুলিশ তাকেসহ গাড়িটি থানায় নিয়ে গেছে। গাড়ির পেছনের সিটে থাকা আমার মেয়ে ঝিলিকের মরদেহ শোয়ানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।’

ঝিলিকের মা আরও বলেন, ‘২ এপ্রিল থেকে পরদিন ৩ এপ্রিল সকাল ৮টার মধ্যে যেকোনো সময় পূর্বপরিকল্পিতভাবে আমার মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার জন্য মিথ্যা সড়ক দুর্ঘটনার নাটক সাজানো হয়েছে।’

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার দুপুর ১২টার দিকে পুলিশ ৩৬ নম্বর সড়কের ২৩/সি নম্বর বাড়িতে তল্লাশি চালায়। এ সময় তার ছোট ভাই ফাহিমসহ কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বাড়ির সিসি ক্যামেরার ফুটেজ জব্দ করেছে পুলিশ। সেখানে দেখা যায়, সকাল ৯টা ৯ মিনিটের দিকে দুই নারী ও দুই পুরুষ নিথর অবস্থায় ঝিলিককে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে গাড়িতে তুলছেন। তখন পেছন পেছন হেঁটে যান মিশু।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা গুলশান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফেরদৌস আলম সরকার  বলেন, ‘এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত স্বামী সাকিব আলম মিশু তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। রিমান্ডের আরও একদিন বাকি রয়েছে। রিমান্ড শেষে আমরা আবারও তাকে আদালতে প্রেরণ করব। অন্যদিকে ঝিলিকের শ্বশুর জাহাঙ্গীর আলম ও শাশুড়ি সায়িদা আলমকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।’

গুলশান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল হাসান বলেন, ‘মিশুকে জিজ্ঞাসাবাদে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা বিভিন্ন আলামত সংগ্রহ করেছি। ঘটনাটি তদন্ত চলছে।’

সূত্র: জাগো নিউজ