সড়ক ও স্থাপনার আয়ুষ্কাল নির্ধারণে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ

সিল্কসিটিনিউজ ডেস্ক:

এখন থেকে সারা দেশে যেসব সড়ক, ভবন ও স্থাপনা তৈরি হবে তার আয়ুষ্কাল বা লাইফটাইম নির্ধারণের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত ১৩ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসংক্রান্ত নির্দেশনা সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের কাছে পাঠানো হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, এখন যেসব ভবন, রাস্তা বা অন্যান্য স্থাপনা রয়েছে সেগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বছরওয়ারি কী পরিমাণ বরাদ্দ থাকা প্রয়োজন—সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে সেটাও নির্ধারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুই মাসের মধ্যে নির্মিতব্য সড়ক ও স্থাপনার লাইফটাইম নির্ধারণ করে সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী হঠাৎ করে কেন এই নির্দেশনা দিলেন—জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ওই কর্মকর্তারা বলেন, বর্তমানে সরকার যেসব স্থাপনা তৈরি করে তার বেশির ভাগেরই কোনো লাইফটাইম নির্ধারণ করা হয় না। অথচ কত দিন স্থাপনাটি টিকবে, তা উল্লেখ না করলে প্রকল্পই পাস হওয়ার কথা নয়। দু-একটি সরকারি স্থাপনার লাইফটাইম নির্ধারণ করা হলেও তা তদারকি হয় না। নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সেসব রাস্তা বা ভবন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়লে তার কোনো জবাবদিহিও নেই। ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক উদ্বোধনের অল্প দিনের মধ্যে বিভিন্ন স্থানে সড়ক নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে আসার পর বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর নজরে দেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সড়ক, ভবন বা অন্য যেকোনো স্থাপনা নির্মাণের সময়ই তার লাইফটাইম নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়েছি। এ নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কাজ শুরু করেছি।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বিভিন্ন স্থানে নষ্ট হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে এই অতিরিক্ত সচিব বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের কুমিল্লা অংশে কিছু জায়গায় রাস্তা নষ্ট হয়েছে। নিম্নমানের বিটুমিন ব্যবহারের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সরকারের প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর থেকেই কর্মকর্তারা প্রায়ই বিদেশে যান। তাঁরা বিভিন্ন দেশে গিয়ে সেসব দেশের স্থাপনা দেখেন। বিস্ময় প্রকাশ করেন, ঝকঝকে তকতকে রাস্তা দেখে। বাড়িঘর দেখার জন্যও দলে দলে কর্মকর্তারা বিদেশ যান। কিন্তু তাঁরা দেশে এসে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দায়সারা প্রতিবেদন দেন। তাঁদের সেসব প্রতিবেদন পড়েও দেখেন না সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিবরা।

গত মাসে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, একটি প্রতিনিধিদল প্রতিবেশী দেশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যে পাঠানো হবে। আবহাওয়া ও অবকাঠামোগত ভিত একই ধরনের হওয়ার পরও পশ্চিমবঙ্গের, বিশেষ করে কলকাতার রাস্তা বেশি টেকসই হওয়ার কারণ খতিয়ে দেখবে প্রতিনিধিদলটি। সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে সরকার।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, শিগগিরই প্রতিনিধিদলটি পশ্চিমবঙ্গে যাবে এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশের রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে সমস্যা কী, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত

কালের কণ্ঠ’র দাউদকান্দি (কুমিল্লা) প্রতিনিধি ওমর ফারুক মিয়াজী জানিয়েছেন, হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন মহাসড়ক দুই বছর না যেতেই নষ্ট হতে শুরু করেছে। এর কুমিল্লা অংশে বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নমানের বিটুমিনের কারণে অ্যাপ্রোচ ভেঙে যাচ্ছে। মহাসড়কে পণ্যবাহী যানবাহনে অতিরিক্ত পণ্য পরিবহনও এর অন্যতম কারণ।

গত ২৯ আগস্ট মহাসড়কের দাউদকান্দি টোল প্লাজা থেকে কুমিল্লার ময়নামতী পর্যন্ত সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টোল প্লাজার সামনে, হাছানপুর, ধীতপুর থেকে দৌলতপুর, ইলিয়টগঞ্জ, কুটুম্বপুর, গোমতা, মাধাইয়া, চান্দিনার কোরপাই বাজার ও ময়নামতী পর্যন্ত কমপক্ষে ১০টি স্থানে বড় বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। গত কোরবানি ঈদের সময় বালু ও ইট ফেলে মেরামত করা হয়। কিন্তু বৃষ্টি হলেই সেগুলো উঠে যাচ্ছে। দাউদকান্দি থেকে ময়নামতী পর্যন্ত বিভিন্ন ছোট সেতু ও কালভার্টের সংযোগস্থলের মাটি সরে গিয়ে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে, মেরামতের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হ্চ্ছে না।

তবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, চার লেনের কাজ তদারকি ঠিকমতো না হওয়ার কারণে দুই বছর না যেতেই মহাসড়কের এই বেহাল অবস্থা।

অন্যদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, কাজ চলাকালে যাঁরা প্রকল্পের দায়িত্বে ছিলেন তাঁরা ঠিকমতো তদারক করলে এত দ্রুত মহাসড়কের বিটুমিন উঠে যেত না। তদারকির ক্ষেত্রেই গাফিলতি ছিল। তা ছাড়া এ প্রকল্পের নকশা করার সময় যে পরিমাণ যানবাহন চলাচল করবে বলে অনুমান করা হয়েছিল দেখা গেছে প্রথম দুই বছরেই সেটা ছাড়িয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে মহাসড়কের পিচ ওঠে গিয়ে ঢেউয়ের মতো হয়ে গেছে। এ কারণে যানবাহন বেশি গতিতে চললেই দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে বিটুমিন উঠে গিয়ে সড়কে গর্ত তৈরি হয়েছে।